সচিন তেন্ডুলকর
ছোটবেলার একটা অভিজ্ঞতা এখনও পরিষ্কার মনে রয়েছে। টিভি দেখতে বসেছি সকলের সঙ্গে। কোনও ফিল্মের হিংসাত্মক দৃশ্য দেখাচ্ছে হয়তো আর মা তৎক্ষণাৎ হাত দিয়ে আমার চোখ দু’টো ঢেকে দিলেন।
মায়েরা এ ভাবেই আমাদের সুরক্ষিত রাখতে চাইতেন। বিজ্ঞান এখন অনেক এগিয়ে গিয়েছে। দেখিয়ে দিচ্ছে, প্রথম জীবনের অভিজ্ঞতা কী ভাবে শিশুদের জীবনকে গড়ে দিতে পারে। বিশেষ করে জীবনের প্রথম ছয় বছর। যখন মস্তিষ্ক খুব দ্রুতগতিতে তৈরি হতে থাকে। এমনকি, বাকি জীবনের রাস্তাও ঠিক করে দিতে পারে এই প্রথম ছয় বছর। এই স্বাধীনতা দিবসে তাই মনে করিয়ে দিতে চাইব, জীবনের শুরুর দিকে কোনও শিশু যদি নেতিবাচক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়, তার প্রভাব সেই শিশুর উপরে ভীষণ ভাবেই পড়তে পারে এবং তাতে তার মানসিকতা, আবেগেও মারাত্মক আঘাত লাগতে পারে।
আমাদের সকলের জন্য এই সময়টা আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। সারা বিশ্ব অতিমারির ধাক্কায় বিপর্যস্ত। চারদিকে উদ্বেগ, ভয়, অনিশ্চয়তা। প্রি-স্কুল, স্কুল সব বন্ধ। দিনের পর দিন গোটা পরিবার গৃহবন্দি হয়ে কাটাচ্ছে। নড়াচড়াও করা যাচ্ছে না। মানুষ চাকরি হারাচ্ছেন। আয় কমে যাচ্ছে। ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনে ঢুকে পড়া নতুন অভিজ্ঞতা। মানসিক ভাবে সকলেই খুব কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। আর এর মধ্যেই আমাদের ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দেখাতে হবে। মেজাজ হারালে চলবে না। যাঁদের বাড়িতে ছোট ছোট ছেলেমেয়ে রয়েছে, তাঁদের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ সময় এটা। দেখতে হবে, কোনও ভাবেই নিজেদের মনের মধ্যে তৈরি হওয়া উদ্বেগ, অনিশ্চয়তার প্রতিফলন ছোটদের উপরে যেন না পড়ে। বাবা-মায়েদের এখন মানসিক ভাবে আরও কঠিন হয়ে ওঠার সময়। নেতিবাচক ভাবনাকে শক্ত প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে আটকাতে হবে। ইতিবাচক থাকতে হবে সব সময়।
আরও পড়ুন: রিজ়োয়ান বিঁধলেন ইংল্যান্ডের কাঁটা হয়ে
এই অতিমারির সুদূরপ্রসারী প্রভাব যাতে বাচ্চাদের উপরে না পড়ে, সেটা নিয়েও ভাবতে হবে। আরও কাছে টেনে নিতে হবে ওদের। আরও বেশি করে ওদের বোঝার চেষ্টা করতে হবে। এমন একটা খোলামেলা আবহ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে নিজেদের মনের ভাব প্রকাশ করতে ওদের দ্বিধা বা ভয় না হয়। ওরা যদি ধৈর্য হারায় তা হলেও যেন আমাদের ধৈর্যচ্যুতি না ঘটে। বাচ্চারা নানা ভাবেই তাদের ভয়, অস্বস্তি প্রকাশ করে। সেটাই ঘটছে কি না, সে দিকে নজর রাখতে হবে। দীর্ঘ দিন ধরে স্বাভাবিক জীবনের বাইরে থাকা এবং ঘরের মধ্যে বন্দি থাকায় কী ধরনের প্রভাব ওদের উপরে পড়ছে, সেটাও কিন্তু ভাল করে বুঝে দেখা দরকার। সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি সম্পর্কে কী ভাবে বাচ্চা ছেলে-মেয়েদের অবহিত করব, সেটা ভেবে দেখা। এটা খুবই কঠিন বিষয় এবং গভীর ভাবে চিন্তা করা দরকার।
বাচ্চাদের মনেও কোভিড-১৯ নিয়ে প্রশ্ন থাকবে। আমার মনে হয়, সম্পূর্ণ পরিস্থিতিটা ওদের বুঝিয়ে বলাটা একান্ত জরুরি। এমন প্রশ্ন যদি ওরা করে বসে যার উত্তর জানি না, সেটাও খুঁজে বার করা দরকার। আলতো করে পিঠ চাপড়ে দেওয়া, একটা উষ্ণ আলিঙ্গন বা ছোট্ট একটা উৎসাহ কিন্তু বাচ্চাদের জন্য এই কঠিন পরিস্থিতিতে সব চেয়ে বড় আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিতে পারে। মনের ভয়, আশঙ্কা, অনিশ্চয়তা দূর করে তাদের আগামী দিনের সফল ব্যক্তি করে তুলতে পারে। আর দেশের আগামী দিনের ভবিষ্যৎদের প্রতি সেই কাজটা করে এই কঠিন সময়ে সত্যিকারের ‘হিরো’ হতে পারেন বাবা-মায়েরাই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy