—ফাইল চিত্র
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়া মাত্রই সারা দেশে উদ্বেগ তৈরি হয়। ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা অধিনায়কের দ্রুত আরোগ্য কামনা শুরু হয়ে যায়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় আরোগ্য কামনা করার পাশাপাশি অনেকে ফোনও করতে থাকেন সৌরভের ঘনিষ্ঠদের। সচিন তেন্ডুলকর ফোন করেন তাঁর প্রিয় সতীর্থকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে। ওয়ান ডে ক্রিকেটে দু’জনের ওপেনিং জুটি এক সময়ে বিশ্বকে শাসন করেছে। টেস্ট ক্রিকেটেও বহু দিন এক সঙ্গে খেলেছেন তাঁরা। অনূর্ধ্ব-১৫ ক্রিকেট থেকে সচিন-সৌরভ পরস্পরকে চেনেন। তাই সৌরভের অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি হচ্ছে শুনেই চিন্তিত হয়ে পড়েন সচিন। প্রিয় ‘দাদি’ কিছুটা সুস্থ বোধ করার পরেই ফোন করেন সচিন। সৌরভের স্ত্রী ডোনার সঙ্গেও তাঁর কথা হয়।
শুধু ক্রিকেট মহল নয়, অন্যান্য জগতের কিংবদন্তিদের ফোনও আসতে থাকে সৌরভের পরিবারের সদস্যদের কাছে। যাঁর কণ্ঠ শুনে গোটা দেশ মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে থাকে, সেই লতা মঙ্গেশকরও ফোন করে দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন। তাঁর সঙ্গে কথা হয় ডোনার। অধিনায়ক থাকার সময়ে সৌরভের আগ্রাসী নেতৃত্ব দেওয়া, হার-না-মানা মনোভাব এবং জনপ্রিয় সেই ‘টিম ইন্ডিয়া’ গড়ে তোলার ভক্ত ছিলেন অনেক কিংবদন্তি। তাঁদের মধ্যে লতা মঙ্গেশকরও ছিলেন।
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট পদে এখনও রয়েছেন সৌরভ। তাঁর এমন আচমকা অসুস্থতায় সেই পদ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হবে কি না, তা অবশ্য এখনই বলা যাচ্ছে না। অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টির পরে সৌরভকে যাঁরা দেখে এসেছেন, তাঁদের মনে হয়নি ভারতের সেই আগ্রাসী অধিনায়ক কোনও রকম মনোবল হারিয়েছেন বলে। বরং অনেককেই তিনি আশ্বস্ত করেন এই বলে যে, সব ঠিক আছে।
তবে এ নিয়েও কোনও সন্দেহ থাকছে না যে, সৌরভকে শরীরের ব্যাপারে অনেক রকম সাবধানতা নিতে হবে। এখনও হাসপাতালে থাকতে হবে আরও তিন-চার দিন। আরও স্টেন্ট বসাতে হতে পারে। অস্ত্রোপচার করতে হয় কি না, সেই কথাও উঠেছে ডাক্তারদের মধ্যে। খুব চাপ নেওয়ার কাজ এখনই তিনি করতে পারবেন কি না, সেই প্রশ্ন থাকছে। সৌরভ শুধু বোর্ড প্রেসিডেন্টই নন, একাধিক পণ্যের বিজ্ঞাপনেও ব্যস্ত থাকেন। ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে আইসিসি-তে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা জল্পনা চলছিল। নানাবিধ ভূমিকা পালন করার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হয় কি না, ডাক্তারেরা জানাবেন কয়েক দিন পর্যবেক্ষণে রাখার পরে। তবে শনিবার রাতেই অনেকটা সুস্থ বোধ করা সৌরভকে দেখে তাঁর পরিচিত কারও মনে হয়নি, তিনি গুটিয়ে গিয়েছেন।
বোর্ড থেকেও অনেকে ফোন করে, টুইট করে দ্রুত আরোগ্য কামনা করতে থাকেন। সচিব এবং অমিত শাহ-পুত্র জয় শাহ অনেক বার ফোন করে খোঁজ নেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রাক্তন আইপিএল চেয়ারম্যান রাজীব শুক্ল বলেন, ‘‘সৌরভের শারীরিক সমস্যা হয়েছিল। হাসপাতালে চিকিৎসা হচ্ছে। অনেক ভাল আছে। আশা করছি, দ্রুতই একদম ঠিক হয়ে যাবে।’’ ঐতিহাসিক সেই ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি জয়ের সময়ে সৌরভ ছিলেন অধিনায়ক, রাজীব ছিলেন ম্যানেজার। সৌরভ যখন লর্ডসের ব্যালকনিতে জামা খুলে ওড়াচ্ছেন, রাজীব দাঁড়িয়ে ছিলেন একদম পাশেই।
দাদার দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রার্থনায় প্রাক্তন, বর্তমান সব তারকা। টুইটারে বিরাট কোহালি লেখেন, ‘‘দাদা, তোমার দ্রুত আরোগ্য কামনা করে প্রার্থনা করছি। দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠো।’’ মেলবোর্ন থেকে ভারতীয় দলের হেড কোচ রবি শাস্ত্রীর টুইট, ‘‘তোমার দ্রুত আরোগ্য কামনা করি, সৌরভ।’’ বিরাটের অনুপস্থিতিতে বর্তমান ভারতীয় অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানের টুইট, ‘‘তোমার দ্রুত আরোগ্য কামনা করে প্রার্থনা করছি। সুস্থ হয়ে ওঠো দাদা।’’ ফোন করার আগে সচিন টুইটও করেন। অনেকেরই যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না, আচমকা এ ভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সৌরভকে হাসপাতালে যেতে হয়েছে। সচিন লেখেন, ‘‘কিছুক্ষণ আগেই তোমার অসুস্থতার খবর পেলাম। প্রত্যেক দিন যেন তুমি আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠো। ভাল থেকো সৌরভ।’’ দ্রুত আরোগ্য কামনা করে টুইট করেন সৌরভের অধিনায়কত্বে তারকা হয়ে ওঠা দুই ক্রিকেটার— বীরেন্দ্র সহবাগ এবং হরভজন সিংহ। যাঁকে দলে নেওয়ার জন্য নির্বাচনী বৈঠকে সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে লড়েছিলেন সৌরভ, সেই যুবরাজ সিংহের টুইটে অধিনায়কের প্রতি আবেগ। লিখেছেন, ‘‘দাদা, তুমি বরাবরের যোদ্ধা। তুমি আমাদের শিখিয়েছো কী ভাবে লড়াই করে জিততে হয়। দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠো। তোমার দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।’’ টুইট করেন অনিল কুম্বলেও। ভিভিএস লক্ষ্মণের টুইট, ‘‘দুপুর থেকে তোমার কথাই চিন্তা করছি দাদা। তোমার দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।’’ সৌরভের প্রথম টেস্টের অধিনায়ক এবং এখন বোর্ডে সতীর্থ মহম্মদ আজহারউদ্দিন দ্রুত আরোগ্য কামনা করে টুইট করেন। প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় পেসার জেসন গিলেসপি লেখেন, ‘‘সৌরভ তোমাকে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতেই হবে।’’
বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্ল হাসপাতালে গিয়েছিলেন সৌরভকে দেখতে। লক্ষ্মী পরে বলেন, ‘‘দাদার মনোবল অটূট। বিশ্বাস করি, সব ঠিক হয়ে যাবে।’’ হাসপাতালে গিয়েছিলেন সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। রঞ্জিজয়ী প্রাক্তন বাংলার অধিনায়কের অধীনে রঞ্জি অভিষেক ঘটেছিল সৌরভের। আবার তিনি যখন টেস্ট দলে সুযোগ পেলেন, সম্বরণ ছিলেন জাতীয় নির্বাচক। বলছিলেন, ‘‘আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না, কী ভাবে এ সব হল। তবে সৌরভ প্রত্যাবর্তনের নায়ক। হার-না-মানা মনোবল দেখিয়েই ঠিক স্বমহিমায় ফিরবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy