—ফাইল চিত্র
কপিল দেবের সেই শটটার কথা কি মনে আছে?
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে, ১৯৮৪ সালে ফিরোজ শাহ কোটলায় শেষ দিনে তখন ড্র করার জন্য খেলছে ভারত। প্রথম ইনিংসে কপিলই ছিল ভারতের সর্বোচ্চ স্কোরার। দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই ইংল্যান্ড অফস্পিনার প্যাট পোকককে একটা ছয় মারে কপিল। তার পরে আবারও ওই রকম একটা শট মারতে গিয়ে অ্যালান ল্যাম্বের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে আসতে হয় বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারকে। ভারতও সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট হেরে যায়।
নাটকের শুরু তার পরে। ইডেনের তৃতীয় টেস্টেই বাদ দিয়ে দেওয়া হয় কপিলকে। সেই ‘শাস্তিমূলক’ সিদ্ধান্তের পিছনে তৎকালীন অধিনায়ক সুনীল গাওস্করের হাত ছিল না নির্বাচকদের, তা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। কপিলের বাদ পড়া নিয়ে তুলকালাম হয়ে যায় ইডেনে। পোস্টার পড়ে— ‘নো কপিল, নো টেস্ট।’’
এই ঘটনার কথা রোহিত শর্মার জানা আছে কি না, বলতে পারছি না। জানা থাকলে ভাল। রোহিত তা হলে বুঝতে পারবে, ভুল করলে সেরা খেলোয়াড়ও শাস্তি পায়। রোহিত এ দিন উইকেটে জমে যাওয়ার পরে যে শটটা খেলে আউট হল, তা আমার কাছে শুধু ভুলই নয়, ক্ষমাহীন অপরাধ। রোহিত উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসায় দ্বিতীয় দিনের শেষে ব্যাকফুটেই থাকল ভারত। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস ৩৬৯ রানে থামিয়ে দিয়ে ভারতের রান ৬২-২।
নিঃসন্দেহে রোহিত সাদা বলের ক্রিকেটের রাজা। শনিবার ব্রিসবেনে আউটও হল সাদা বলের শট খেলে। উইকেটে জমে গিয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার কোনও বোলারই ওকে সমস্যায় ফেলতে পারছিল না। আগে দেখতাম, ফ্রন্টফুটে খেলার সময় রোহিতের ব্যাটের মুখটা এক্সট্রা কভারের দিকে খুলে যেত। যার ফলে খোঁচা লাগার একটা আশঙ্কা থাকত। এখন ব্যাটের মুখটা সোজা করে খেলছে। যার ছাপটা ওর বেশ কয়েকটা ড্রাইভে চোখে পড়ল। কিন্তু আউটটা হল অস্ট্রেলিয়ার অফস্পিনার নেথান লায়নের ফাঁদে পা দিয়ে। ডিপ মিডউইকেট, লংঅন রেখে বল করছিল লায়ন। রোহিত একটু স্টেপ আউট করে বলটা তুলে দিতে চেয়েছিল। যার কোনও মানেই হয় না। ফ্লাইটেড বলটা একটু গোঁত খেয়ে আগে পড়ে যাওয়ায় রোহিতের টাইমিংটা হয়নি। ক্যাচ চলে যায় লংঅনে।
একটা ব্যাপার দেখে খুব আশ্চর্য লাগল। দিনের শেষে ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকে এসে রোহিত বলে গেল, ও নাকি ওই শটটা খেলার জন্য অনুতপ্ত নয়! কপিলের ব্যাপারটা বোধ হয় রোহিত সত্যি জানে না। রোহিত নিজে মুম্বইয়ের। তাই ওর আর একটা ইনিংসের কথা মাথায় রাখা উচিত ছিল। ১৯৮৭ সালের টেস্ট সিরিজে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলা সুনীল গাওস্করের সেই মহাকাব্যিক ৯৬ রানের ইনিংসটা। যা খেলা হয়েছিল চিন্নাস্বামীর একটা মারাত্মক ঘূর্ণি পিচে। গাওস্কর আর কপিলের এই ইনিংস দুটোর ভিডিয়ো রোহিতকে দেখাতে পারে রবি শাস্ত্রী। দু’রকম শিক্ষাই পেয়ে যাবে তা হলে।
ব্রিসবেনে ভারতীয় বোলিংকে নেতৃত্ব দিচ্ছে এমন এক জন, যে এর আগে মাত্র দুটো টেস্ট খেলেছে। মহম্মদ সিরাজ। শার্দূল ঠাকুর আর নবদীপ সাইনির দ্বিতীয় টেস্ট। যার মধ্যে সাইনি তো আট ওভার করে উঠেই গেল। বাকি দু’জনের তো অভিষেক ঘটল ব্রিসবেন! টি নটরাজন আর ওয়াশিংটন সুন্দর। এই দু’জনই তুলে নিল তিনটি করে উইকেট।
অস্ট্রেলীয় ব্যাটিংটা দেখা যাচ্ছে পুরোপুরি স্টিভ স্মিথ আর মার্নাস লাবুশেনের উপরে নির্ভরশীল। লাবুশেনের খেলার একটা বৈশিষ্ট হল, স্কোরবোর্ডটাকে চালু রাখে। প্রতিপক্ষ বোলারদের আধিপত্য জারি করতে দেয় না। তবে ওর ভাগ্য ভাল। প্রথম দিনে ৩৭ রানের মাথায় সহজ ক্যাচ ফেলে দিয়েছিল অজিঙ্ক রাহানে।
আর অশ্বিনের জায়গায় খেলতে নামা অফস্পিনার ওয়াশিংটন নিশ্চয়ই ওর প্রথম টেস্ট উইকেটের কথা ভুলবে না। স্টিভ স্মিথ। এই সিরিজে চার বার অফস্পিনারের বিরুদ্ধে আউট হল বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। স্মিথ লেগসাইডে প্রচণ্ড শক্তিশালী। আর সেখানেই ভারতীয় দল ওর জন্য ফাঁদ পাতছে। ব্রিসবেনেও তাই হল। লেগ-মিডলের বল ফ্লিক করতে গিয়ে শর্ট মিডউইকেটের হাতে ক্যাচ দিল।
এই টেস্টে ভারতের দুই অভিষেককারী চাপ সামলে ভালই খেলল। তবে ওয়াশিংটনকে লাল বলের ক্রিকেটের জন্য বোলিংয়ে আরও বৈচিত্র আনতে হবে। ওর সেরা বল ছিল ক্যামেরন গ্রিনকে আউট করার ডেলিভারিটা। গ্রিন অফস্পিন হবে ভেবে ব্যাটটা পেতেছিল, কিন্তু বল একটু বাইরে গিয়ে স্টাম্প নড়িয়ে দেয়। বাঁ-হাতি পেসার নটরাজন হল বিশ্বের প্রথম ক্রিকেটার যে নেট বোলার হিসেবে সফরে এসে তিন ধরনের ক্রিকেটেই দেশের প্রতিনিধিত্ব করল। আইপিএল থেকে ‘ইয়র্কার কিং’ হিসেবে ওর উত্থান। নটরাজনকে গতিটা একটু বাড়াতে হবে আর বাইরে যাওয়া ডেলিভারিটা রপ্ত করতে হবে। ভারতীয় তরুণ বোলারদের মধ্যে মহম্মদ সিরাজকে সব চেয়ে ভাল লাগল।
এই সিরিজে চোট-আঘাতে বিধ্বস্ত ভারত। কুড়ি জন ক্রিকেটার খেলল চার টেস্টের সিরিজে! যারা বল লেগে আহত হয়েছে, তাদের নিয়ে কিছু বলার নেই। কিন্তু পেশি বা হ্যামস্ট্রিংয়ের এত চোট কেন হচ্ছে, তার জবাবদিহি ভারতীয় দলের ফিজ়িয়োকে করতেই হবে। অস্ট্রেলীয় কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গারের মতো চোটের জন্য আইপিএলকে দায়ী করতে চাই না। প্যাট কামিন্স তো আইপিএলে কেকেআরের সব ম্যাচ খেলে এখানে টানা চারটে টেস্ট খেলল।
ভারতের এখন লড়াই করার পালা। প্রথম ইনিংসের ব্যবধান যতটা সম্ভব কমাতেই হবে। জানি না, বৃষ্টির জন্য এই টেস্টে কতটা সময় নষ্ট হবে। তবে যদি শেষমেশ অজিঙ্ক রাহানের দল বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি ঘরে আনতে পারে, তা অসাধারণ এক কৃতিত্ব হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy