রোহন বোপান্না। — ফাইল চিত্র।
প্রথম সেটে অনায়াসে জিতে গিয়েছিলেন। দেখে মনে হয়েছিল প্রথম বার ইউএস ওপেন হাতে তোলা সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু ১৩ বছর পরেও সেই স্বপ্ন পূরণ হল না রোহন বোপান্নার। ২০১০ সালের পর ২০২৩ সালের পুরুষ ডাবলস ফাইনালেও হেরে গেলেন। সঙ্গী ম্যাথু এবডেনকে নিয়ে ৬-২, ৩-৬, ৪-৬ হারলেন রাজীব রাম-জো স্যালিসবারি জুটির কাছে।
শুক্রবার দুপুরে ক্রিকেট বিশ্বকাপের ট্রফি উন্মোচন উপলক্ষ্যে কলকাতায় এসেছিলেন লিয়েন্ডার পেজ়। আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামে তিন বারের পুরুষ ডাবলস জয়ী বিজয়ী আগাম শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন বোপান্নাকে। ‘বন্ধু’র শুভেচ্ছা কানে গিয়েছিল কি না জানা নেই। তবে ফাইনালে বোপান্না যে খেলাটা খেললেন তা সহজে ভোলা সম্ভব নয়।
কোর্টে লড়াইটা মূলত হয়েছিল দুই ভারতীয়ের। একজন বোপান্না হলে অপরজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত রাজীব রাম। কলোরাডোতে রাজীবের জন্ম হলেও তাঁর বাবা-মা ভারতীয়। বোপান্নার বয়স ৪৩ হলে রাজীবের ৩৯। দু’জনের টেনিস দেখে অবশ্য বয়স বোঝার উপায় নেই। হেরে গেলেও কোর্টে যেন উড়ে বেড়ালেন বোপান্না। সার্ভিস হোক, উইনার হোক, সপাটে ব্যাকহ্যান্ড হোক। সবেতেই তিনি আছেন।
ম্যাচের প্রথম পয়েন্ট জেতেন বোপান্নাই। তাঁর ক্রসকোর্ট ড্রাইভ ভলির কোনও জবাব ছিল ছিল না। এর পর বোপান্নার ক্রসকোর্ট উইনারে শুরুতেই বিপক্ষকে ব্রেক করেন বোপান্না-এবডেন। এর পর নিজেদের সার্ভিস ধরে রেখে তাঁরা এগিয়ে যান ২-০ গেমে। যদিও রাজীব-স্যালিসবারি জুটি পিছিয়ে থাকেননি। তাঁরা পরের গেমেই ব্রেক করেন বোপান্নাদের।
পরের তিনটি গেমে দুই জুটিই নিজেদের সার্ভ ধরে রাখেন। বোপান্নার র্যাকেট থেকে দারুণ কিছু ভলি দেখা যায়। মাঝে এক বার ব্রেক পয়েন্ট বাঁচান তাঁরা। কিন্তু এতটাই ছন্দে ছিলেন যে এগিয়ে যেতে সময় নেননি। সপ্তম গেমে রাম-স্যালিসবারি জুটিকে আবার ব্রেক করেন বোপান্না-এবডেন। ওখানেই ম্যাচ তাঁদের পকেটে চলে আসে। অষ্টম গেমে নিজেদের সার্ভ ধরে রেখে জিতে যান তাঁরা।
দ্বিতীয় সেটের শুরুতেও রাম-স্যালিসবারি নিজেদের সার্ভির ধরে রেখে ১-০ এগিয়ে যান। দ্বিতীয় গেমে বোপান্না নিজের সার্ভিস ধরে রাখেন। তৃতীয় গেমে দারুণ লড়াই হয়। দৌড়তে দৌড়তে বোপান্নার একটি ব্যাকহ্যান্ড তাঁদের ব্রেক পয়েন্টের সামনে দাঁড় করিয়েছিল। কিন্তু এবডেনের ভুল রিটার্নে ব্রেক করার সুযোগ নষ্ট হয়। চতুর্থ গেম কিছুটা দেরি করে শুরু হয় ছাদ আংশিক ভাবে ঢাকার কারণে। বোপান্না-এবডেন মোটেই সিদ্ধান্তে খুশি ছিলেন। মনঃসংযোগ কিছুটা নড়ে যায় তাতে। সেই গেম ধরে রাখলেও পরের গেমে দাঁড়াতেই পারেননি এই জুটি।
পঞ্চম গেমে বোপান্না-এবডেনকে ব্রেক করেন রাম-স্যালিসবারি। ভাল স্ম্যাশে সার্ভিস শুরু করলেও পরের সার্ভিসের ডাবল ফল্ট করেন বোপান্না। সেখান থেকে আর সার্ভিস ধরে রাখতে পারেননি। বোপান্নার একটি ফোরহ্যান্ড কোর্টের বাইরে পড়তেই গেম হাতছাড়া হয়। পরের সার্ভিস ধরে রাখেন রাম-স্যালিসবারি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বোপান্নারা সেট ধরে রাখতে পারেননি। হেরে যান ৩-৬ গেমে।
তৃতীয় সেটের শুরুটাই হয় হাড্ডাহাড্ডি। বোপান্নার সার্ভিসে এক সময় ৪০-০ এগিয়ে গিয়েছিলেন রাম-স্যালিসবার। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে টানা পাঁচটি পয়েন্ট জিতে সার্ভিস ধরে রাখেন তাঁরা। বোপান্নার একটি লব মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতোই। মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া বলের কোনও জবাব ছিল না রামের কাছে। চতুর্থ গেমে তুল্যমুল্য লড়াই হয় দুই খেলোয়াড়ের। এক সময় ব্রেক করার জায়গায় চলে এসেছিলেন বোপান্না-এবডেন। সফল হননি। শেষ মুহূর্তে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে গেম জিতে নেন তাঁদের বিপক্ষ জুটি।
ষষ্ঠ গেমে ব্রেক করেন রাম-স্যালিসবারি জুটি। কিন্তু সেই গেমেও লড়াই ছাড়েননি বোপান্নারা। বেঙ্গালুরুর খেলোয়াড়ের রিটার্ন এবং জোরালো সার্ভিস ছিল নজরকাড়া। কিন্তু রামের দক্ষতার কারণে তাঁরা সার্ভিস ধরে রাখতে পারেননি। পরের গেমে বোপান্নার খেলোয়াড়ি সত্ত্বার পরিচয় আবারও দেখা যায়। ৩০-০ এগিয়ে থাকা অবস্থায় এবডেনের একটি উইনার থেকে নিশ্চিত পয়েন্ট ছিল। কিন্তু শটটি বোপান্নার কনুইয়ে লেগে দিক পরিবর্তন করে। বোপান্না আম্পায়ারকে গিয়ে জানান সেই পয়েন্টটি তাঁদের না দিতে। আম্পায়ার মেনে নেন। তার পরেও সার্ভিস ধরে রাখতে সমস্যা হয়নি।
রাম-স্যালিসবারি পরের সার্ভিস ধরে রাখেন। কিন্তু অষ্টম গেমে বোপান্নারা ব্রেক হয়ে যেতেই খেলার মোড় ঘুরে যায়। ৩-৫ গেমে পিছিয়ে যান বোপান্নারা। পরের সার্ভিস ধরে রাখলেন, দশম গেমে গিয়ে রাম নিজের সার্ভিস ধরে রাখেন এবং ট্রফি জিতে নেন।
১৯১২ সালে শেষ বার পুরুষ ডাবলসে কেউ টানা তিন বার ট্রফি জিতেছিলেন। ওপেন যুগে কেউ জেতেননি। রাম-স্যালিসবারি সেই কৃতিত্ব অর্জন করলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy