নায়ক: অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সেমিফাইনালে ওঠার পরে রজার ফেডেরার। বুধবার মেলবোর্নে। ছবি: এএফপি
অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে এ বার একটা আশঙ্কা কিন্তু ফের উঠে আসল। টেনিসে খেলোয়াড়দের চোট-আঘাত কী ভাবে বাড়ছে, সেই নিয়ে আশঙ্কা।
রাফায়েল নাদাল, নোভাক জকোভিচ, অ্যান্ডি মারে— মানে বড় বড় তারকাদের সবাই প্রায় এই চোটের শিকার এ বার। মারে তো আগেই সরেই দাঁড়িয়েছিল টুর্নামেন্ট থেকে। জকোভিচ তবু ম্যাচটা শেষ করেছিল চোটে কাতরাতে কাতরাতে। নাদাল সেটাও পারেনি। ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই
সরে দাঁড়িয়েছে।
সঙ্গে আরও একটা জিনিস দেখা যাচ্ছে। টেনিসে চোট থেকে ফিরে আসা কতটা কঠিন। যেটা সর্বোচ্চ পর্যায়ের এ রকম পেশাদারদের পক্ষেও সামলানো বেশ কঠিন হয়ে পড়ে অনেক সময়ে। এ সবের পাশাপাশি আরও একটা কথা বলতেই হবে। তরুণ খেলোয়াড়রাও দারুণ ভাবে উঠে আসছে। কাইল এডমন্ড, টেনিস স্যান্ডগ্রে, আলেকজান্ডার জেরেভ, বিশেষ করে নজর কেড়ে নিয়েছে আমাদের এশিয়ার চুং হেয়ান। বুধবার যে সেমিফাইনালে উঠে গেল স্ট্রেট সেটে জিতে।
ছেলেটা গত বছর মিলানে নেক্সট জেন এটিপি ফাইনালস জিতেছে। যে টুর্নামেন্টে আলেকজান্ডার জেরেভ, ডেনিস শাপোভালভদের মতো উঠতি তারকারাও ছিল। তার পরে গত ছ’মাসে অবিশ্বাস্য উন্নতি করেছে। জকোভিচের বিরুদ্ধে ওর ম্যাচটা আমি দেখেছি। মানছি জকোভিচের চোট ছিল। কিন্তু তার জন্য চুং-এর কৃতিত্ব এক ফোঁটাও কমছে না। এই পর্যায়ের টেনিসে মাথা ঠান্ডা রেখে ও প্রত্যেকটা পয়েন্টে লড়েছে। এটা কিন্তু ২০-২১ বছর বয়সি এ রকম অনভিজ্ঞ একটা ছেলের পক্ষে সোজা নয়। তাও বিপক্ষে যদি জকোভিচের মতো খেলোয়াড় থাকে। যে ওর আদর্শও।
আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সেমিফাইনালে ফেডেরার
তবে যতই নতুনরা চমকে দিক, চমক দেওয়ার ধারাবাহিকতাটা কিন্তু একজনই ধরে রেখেছে— ফেডেরার। ৩৬ বছরের ফেডেরার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সেমিফাইনালে। একটাও সেট না হেরে। এর চেয়ে বড় চমক আর কী হতে পারে। ওকে কোর্টে যত দেখি, তত অবাক হয়ে যাই। প্রতিদিনই হচ্ছি। কী ভাবে যে এ রকম পারফরম্যান্স করে যাচ্ছে, সেটা এক মাত্র ফেডেরারই জানে বোধহয়। যে আবার চুং-এর সেমিফাইনালের প্রতিদ্বন্দ্বীও।
ফেডেরারের খেলার মধ্যে দু’টো অস্ত্র এ বার আরও ধারালো মনে হচ্ছে। সার্ভিস আর ব্যাক হ্যান্ড উইনার। বেশ কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ফেডেরারের হাত থেকে দুরন্ত ডাউন দ্য লাইন ব্যাকহ্যান্ড উইনার বেরিয়ে আসতে দেখলাম। এ রকম কঠিন একটা শট ও রকম চাপের মধ্যে শুধু ফেডেরারের পক্ষেই এত সহজে মারা সম্ভব। চূড়ান্ত আত্মবিশ্বাস আর সাফল্যের খিদে না থাকলে শটে এ রকম নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব নয়। তার সঙ্গে কোর্টে ন্যাচরাল মুভমেন্ট তো রয়েছেই। যে জন্য দেখলে মনে হচ্ছে, যেন কোর্টে ভেসে বেড়াচ্ছে ফেডেরার।
নজরে: মেলবোর্নে চমকে দিচ্ছেন কোরিয়ার চুং। ছবি: এএফপি
পাশাপাশি কোর্টে ওর স্ট্র্যাটেজিও কিন্তু পাল্টেছে। সেটা হল, পয়েন্টকে যতটা সম্ভব ছোট করে ফেলা। মানে দ্রুত পয়েন্ট জেতা। যাতে লম্বা র্যালিতে যেতে না হয়। লম্বা র্যালিতে গেলে বয়সে অনেক ছোট প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিরুদ্ধে দমে নাও কুলোতে পারে। তাই অনেক সময়েই সার্ভ করে নেটে এগিয়ে আসছে ও। চাপ সৃষ্টি করছে প্রতিদ্বন্দ্বীর উপরে। ওর চেয়ে পনেরো-ষোলো বছরের বয়সে ছোট প্রতিদ্বন্দ্বীরাও তাই দমে হারাতে পারছে না ওকে। অঘটনের অস্ট্রেলিয়া ওপেনে তাই ফেডেরার ২০ নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতার জন্য হট ফেভারিট।
অন্য সেমিফাইনালে মিরিন চিলিচ মুখোমুখি কাইল এডমুন্ডের। নাদালের বিরুদ্ধে ম্যাচে চিলিচের খেলা আমার খুব ভাল লেগেছে। বিশেষ করে ওর স্লাইস সার্ভ। যে জন্য নাদালকে আরও বেশি করে শরীর স্ট্রেচ করতে হচ্ছিল। আরও সমস্যায় পড়ে যাচ্ছিল ও। তাই সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ফেডেরার-চিলিচ ফের ফাইনাল হতে পারে। গত বারের উইম্বলডন ফাইনালের মতো।
তবে একটা ব্যাপারে আমি খুব অবাক হয়েছি। জকোভিচের এ ভাবে চোট থেকে ফিরে সরাসরি গ্র্যান্ড স্ল্যামে নেমে যাওয়া দেখে। ছ’মাস কোর্টের বাইরে থাকার পরে টানা গ্র্যান্ড স্ল্যামের ম্যাচ খেলার ধকল সামলানো সোজা নয়। জকোভিচের পক্ষে এই চোট সারিয়ে ফিরে আসা সহজ হবে না। টেনিসের লড়াইটা কিন্তু এখন ভীষণ ভাবে শারীরিক সক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। একটা ম্যাচ মানে চার ঘণ্টার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। ঠাসা সূচি মেনে এ ভাবে শরীরের উপরে চাপ পড়লে চোটের সম্ভাবনা তো থাকবেই। তাই নাদাল-জকোভিচরা ভাল ফর্মে থাকলেও চোট সারিয়ে ওদের সেরা সময়ের মতো খেলতে ফের কবে দেখা যাবে, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy