রজার ফেডেরার। ছবি: সংগৃহীত
সকাল সকাল টিভিতে খেলাটা দেখতে বসেই মনে হচ্ছিল, ফেডেরারের কোথাও একটা সমস্যা হচ্ছে। খেলাটা সে ভাবে জমছিল না। সার্ভিস ফস্কাচ্ছিল। খুব তাড়াতাড়ি উইনার মারতে যাচ্ছিল। র্যালি করছিল না। ফেডেরারের খেলা দেখতে বসে যেগুলো বিরল দৃশ্যের মধ্যেই পড়ে। তবু ভেবেছিলাম সমস্যা যাই হোক, যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালের মতো মঞ্চে ফেডেরার হয়তো সব সামলে শেষ পর্যন্ত সেমিফাইনালে উঠে যাবে। তখনও বুঝতে পারিনি ম্যাচের শেষে এত বড় একটা চমক অপেক্ষা করে থাকবে।
তা ছাড়া ফেডেরারের সামনেও তো এমন এক প্রতিপক্ষ ছিল যে এর আগে সাত বার মুখোমুখি লড়াইয়ে কোনও দিনই ফেডেরারকে হারাতে পারেনি— গ্রিগর দিমিত্রভ। গত বছর রটারডামে শেষ বার মুখোমুখি লড়াইয়েও ফেডেরার স্ট্রেট গেমে উড়িয়ে দিয়েছিল বুলগেরিয়ার তারকাকে। যার বিশ্ব র্যাঙ্কিং এখন ৭৮। কিন্তু কে জানত সেই দিমিত্রভই ওর আদর্শকে হারিয়ে খেলোয়াড় জীবনের সব চেয়ে বড় জয়টা পেয়ে যাবে ফ্লাশিং মিডোজে, শেষ আট থেকেই বিদায় নেবে ফেডেরার!
ম্যাচের ফল বলছে পাঁচ সেটের লড়াইয়ে ফেডেরার ছিটকে গিয়েছে ৬-৩, ৪-৬, ৬-৩, ৪-৬, ২-৬ গেমে। কিন্তু শুধু দিমিত্রভের কাছেই নয়, ফেডেরার হার মানতে বাধ্য হয়েছে চোটের কাছেও। যে জন্য চূড়ান্ত সেটের আগে ফেডেরারকে মেডিক্যাল টাইম আউটও নিতে হয়। ফেডেরার ভক্তরা খুব ভাল করে জানে এটা কতটা বিরল ব্যাপার। মেডিক্যাল টাইম আউট নিয়েও যে খুব একটা সুবিধে হয়নি সেটাও বোঝা যাচ্ছিল ও কোর্টে
ফেরার পরে।
তবু ফেডেরারের মতো সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন এই হারের জন্য চোটকে দায়ী করেনি। পুরো কৃতিত্বই দিয়েছে দিমিত্রভকে। যাঁকে সার্কিটে অনেকে ডাকে ‘বেবি ফেড’ বলে। যখন জুনিয়র ছিল, তখন থেকেই দিমিত্রভ ফেডেরারকে নকল করত। ফেডেরারের মতো এক হাতে ব্যাকহ্যান্ড মারা, ফেডেরারের মতো নেটে উঠে আসা। শেষ আটের এই লড়াই দেখে অনেকের মনে হতে পারে আয়নার সামনে লড়ছিল ফেডেরার। এমন ভক্তের কাছে হেরে হয়তো অতটা খারাপ মনে হয়নি তাই ফেডেরারের। তা ছাড়া ফেডেরারের কম্পানি ‘টিম এইট’ এক সময় দিমিত্রভের এজেন্টও ছিল।
উইম্বলডনে একটুর জন্য ফাইনালে জকোভিচের বিরুদ্ধে হেরে যাওয়ার পরে মরসুমের শেষ গ্র্যান্ড স্ল্যামেও এ ভাবে চোট নিয়ে বিদায় নেওয়ায় অনেকে প্রশ্ন করতে শুরু করে দিয়েছেন আটত্রিশের ফেডেরার কি আর পারবে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে? বয়সটাও তো বাড়ছে। আমার কিন্তু মনে হয় ফেডেরার এখনও যে রকম খেলে যাচ্ছে তাতে আরও একটা বা দুটো গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে পারে। আগেও অনেকে ফেডেরারকে নিয়ে বলেছিল, সুইস কিংবদন্তি শেষ হয়ে গিয়েছে। আর গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে পারবে না। তাদের সবাইকে কিন্তু ভুল প্রমাণ করে দিয়েছে ফেডেরার।
কথায় আছে কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ। ফেডেরারের এই হারে সব চেয়ে সুবিধে হবে রাফায়েল নাদালের। আগেই চোটে ছিটকে গিয়েছে নোভাক জোকোভিচ। ফেডেরার তো তবু চোট নিয়েও পাঁচটা সেট লড়াই করেছে। গত বারের চ্যাম্পিয়ন তো সেটাও পারেনি। এতটাই সমস্যা হচ্ছিল কাঁধের চোটে। ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই চেয়ার আম্পায়ারকে জোকোভিচ জানিয়ে দিয়েছিল, আর খেলতে পারছে না।
বৃহস্পতিবার সকালে নাদাল কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনার দিয়েগো সোয়ার্ৎজম্যানকে হারালে সেমিফাইনালে মাতেও বারেত্তিনি বা গেইল মঁফিসের মুখোমুখি হবে। যাদের মধ্যে এক জনের বিশ্ব র্যাঙ্কিং ২৪, আর এক জনের ১৩। যার সামনেই পড়ুক নাদালের ফাইনালে উঠতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এই ম্যাচগুলো নাদালের কাছে গ্র্যান্ড স্ল্যামে দ্বিতীয় বা তৃতীয় রাউন্ডের ম্যাচের মতো মনে হওয়ার কথা। নাদাল খুব ভাল খেলছেও। প্রি-কোয়ার্টারে ওর ম্যাচে দেখছিলাম টাইগার উডসও স্টেডিয়ামে দর্শকাসনে বসে উচ্ছ্বাস দেখাচ্ছিল। তাই ফেডেরারের মতো চোট না ভোগালে আমার মনে হয়, ১৯ নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যাম এ বারের ফ্লাশিং মেডোজেই জিতবে নাদাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy