মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ১২১-৮
রাইজিং পুণে সুপার জায়ান্টস ১২৬-১
টিমের সঙ্গেই তিনি মাঠে এসেছিলেন। পেপ টকও দিয়েছিলেন। ইনিংস ব্রেকেও আশা ছাড়েননি। কিন্তু মধ্য রাতের ওয়াংখেড়েতে তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া গেল না। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি যে ততক্ষণে কেড়ে নিয়েছেন সচিন তেন্ডুলকরের হাসি।
নবম আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচের আগে যতটা নাটক ছিল, বাইশ গজে তার কিছুই দেখা গেল না। আর ম্যাচ শেষে তো স্যাটারডে নাইট পার্টিও বাতিল হয়ে গেল মুম্বইকরদের।
পাঁচ বছর আগের এক এপ্রিলের শুরুতে এই মাঠ থেকেই তো বিশ্ব ক্রিকেটের তাজ মাথায় নিয়ে ফিরেছিলেন ধোনি। এক সপ্তাহ আগে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেই মাঠ ধোনিকে ফিরিয়ে দিয়েছিল সেমিফাইনাল থেকে। সে দিন ধোনি-বধ করে হাসি মুখে ক্যামেরার সামনে পোজ দিয়েছিলেন ক্যারিবিয়ান লেন্ডল সিমন্স। এ দিন হাসি ফিরে এল এমএসডির মুখে। ৩২ বল বাকি থাকতেই ন’উইকেটে প্রথম ম্যাচ জিতে আইপিএলের মহারাষ্ট্র ডার্বি জিতল রাইজিং পুণে সুপারজায়ান্টস।
এ দিন ধোনির তুরুপের তাস হয়ে দাঁড়াল দু’টো ফ্যাক্টর। এক, ঘরের মাঠে অজিঙ্ক রাহানের মারমুখী ৬৬ আর তারও আগে, পুণে সিমারদের উইকেটের পরিস্থিতি বুঝে কার্যকর বোলিং। ম্যাচ শেষে সে কথা বলেও গেলেন পুণে অধিনায়ক।
শনিবার রাতের ওয়াংখেড়ে যেমন দেখাল আরও এক ম্যাজিক। তা ধোনি মন্ত্রেই কি না জানা নেই, প্রথম বলেই উইকেট পেলেন পুণের চার-চার জন— ইশান্ত শর্মা, মিচেল মার্শ, রজত ভাটিয়া এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ফেরালেন রোহিত শর্মা (৭), হার্দিক পাণ্ড্য (৯), কায়রন পোলার্ড (১), আম্বাতি রায়ডু (২২)-কে। শুরুতে ব্যাটিং বিপর্যয়ের পর হরভজন সিংহের একার দাপটে (৩০ বলে ৪৫ নটআউট) মুম্বই ইনিংস শেষ পর্যন্ত গিয়ে দাঁড়ায় ১২১-৮।
ম্যাচ শেষে হরভজন বলে গেলেন, ‘‘পিচে কোনও জুজু ছিল না। কিন্তু শট বাছতে গিয়ে ভুল করলাম আমরা।’’ সঙ্গে টিপ্পনি কাটতেও ভুললেন না টার্বুনেটর। ‘‘আরে, মুম্বই প্রথম পাঁচটা ম্যাচ না হারলে ছন্দে ফেরে নাকি।’’ পরক্ষণে সামলে নিয়ে বলে গেলেন, ‘‘পরের ম্যাচ কলকাতায় নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে। ওই ম্যাচে ফিরতেই হবে। মালিঙ্গা না থাকার মাশুলটা গুণতে হল আজ।’’
মেরিন ডাইভ, চার্চ গেট স্টেশনে বাড়ি ফেরত মুম্বই সমর্থকদের মুখে তখন হতাশা, আক্ষেপ— ‘‘এক সপ্তাহ আগে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের দিন তো এ রকম আচরণ করতে পারত ওয়াংখেড়ের পিচটা।’’
তার বেশ কিছু সময় আগে গারওয়ার ক্লাব হাউসের দিকের জায়ান্ট স্ক্রিনে ভেসে উঠেছিল রবিচন্দ্রন অশ্বিনের মুখটা। দেখলে কে বলবে চব্বিশ ঘণ্টা আগে এই লোকটাই তো সাংবাদিক সম্মেলনে ক্যারিবিয়ানদের কাছে হারের প্রসঙ্গ তুলতেই তেলেবেগুনে চটে গিয়েছিলেন মিডিয়ার উপর। এ দিন যেন সব উলটে দেখুন পালটে গিয়েছে পরিস্থিতি।
বিকেলে ওয়াংখেড়েতে যখন পুণের টিম বাস ঢুকছে তখন সেই বাসের সামনে মেরেকেটে জনা দশেক সমর্থক। মহারাষ্ট্র ডার্বির দিনে নিজেদের প্রিয় দলের জন্য তাঁরা গাইছিলেন ‘‘আনহোনি কো হোনি করদে ধোনি মেরা ধোনি। এক জাগা যব জমা হো তিনো স্মিথ, কেপি অওর ধোনি।’’
"এর চেয়ে ভাল শুরু আর কী হতে পারে। বোলারদেরই কৃতিত্ব দেব। বিশেষ করে রজতকে (ভাটিয়া)। আগেও বলেছি, বল যেখানে ব্যাটে আসে, রাহানে সেখানে ব্রিলিয়ান্ট।"
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি
মাঠে তখন সারে সারে ঢুকছে নীল পতাকা হাতে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স সমর্থকরা। প্যাভিলিয়ন এন্ডের দিকে তখন এ দিনের ম্যাচ রেফারি জাভাগল শ্রীনাথের সঙ্গে খোশ গল্পে মেতেছেন সচিন রমেশ তেন্ডুলকর। যিনি বাহাত্তর ঘণ্টা আগে ট্রাইডেন্টে মুম্বই টিম হোটেলে গিয়ে দিয়ে রোহিত শর্মাদের দিয়ে এসেছেন প্রয়োজনীয় পেপ টক।
কিন্তু তাতে কী! পুণের জার্সি গায়ে মুম্বইয়ের ভূমিপুত্র রাহানে ম্যাচ শুরুর আগে বলছিলেন, ‘‘এমএসডি যখন কোনও দলের ক্যাপ্টেন তখন দলের কার কার থেকে কোন কোন সেরা জিনিস বার করে আনবে সেটা ও জানে।’’ মাঠেও ঠিক হলও সেটা। মহারাষ্ট্র ডার্বিতে ওয়াংখেড়েতে এ দিন নিরানব্বই দশমিক নিরানব্বই শতাংশই এসেছিল রোহিত শর্মাদের জন্য গলা ফাটাতে। সেখানে ধোনির দলের জন্য হাজির গুটিকয় সমর্থক। কিন্তু ওয়াংখেড়ের সেই শব্দব্রহ্ম থামাতে ধোনির ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল মগজের লাগল মোটে ২২ মিনিট। স্কোর বোর্ডে মুম্বই তখন সিমন্স, বাটলার, রোহিত, পান্ড্যদের হারিয়ে ধুঁকছে। গ্যালারিতে শ্মশানের স্তব্ধতা।
শেষ বেলায় যদিও হরভজন নেমে সামাল দিলেন। ভদ্রস্থ স্কোর খাঁড়া করে মুম্বই সমর্থকরা তখন ফের গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়াতে চলেছেন। ওয়াংখেড়ে তখন আলোকিত মোবাইলের ফ্লাশ লাইটে। কিন্তু সেই বিন্দু বিন্দু আলো শেষ বেলায় মুম্বইয়ের হয়ে মশাল হল কোথায়?
রোহিতদের মঞ্চে তাই মাতিয়ে গেলেন মুম্বইয়েরই ভূমিপুত্র। শেষ বেলায় রাহানে বলে গেলেন, ‘‘শুরুতেই আঁটোসাঁটো বল করে ওদের বড় স্কোর করতে না দেওয়ার প্ল্যানটা খেটে গিয়েছিল দারুণ ভাবে। এই মোমেন্টামটা ধরে রাখতে হবে।’’ আর প্রাপ্তি? ধোনির টিমের মুম্বইকর বললেন, ‘‘কেপি ব্যাট করতে এসে বলল, চিন্তা করিস না। স্ট্রাইক তোকেই দেব। এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি হয় কিছু!’’
নিট ফল, রোহিতের পাড়ায় এসে মস্তানি করে দলকে জিতিয়ে গেলেন রাহানে। আইপিএল অভিযানে প্রথম ম্যাচ জিতে যার সুবাদে হাসি মুখে ওয়াংখেড়ে ছাড়লেন পুণে মালিক সঞ্জীব গোয়েন্কা-সহ গোটা পুণে ম্যানেজমেন্ট।
আইপিএল নাইনের শুরুটা একটা জিনিস বুঝিয়ে দিল। ফ্র্যাঞ্চাইজি বদলেছে, টিম বদলেছে। কিন্তু আইপিএলে ক্যাপ্টেন কুলের সেই দাপট বদলায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy