অপেক্ষা: বুমরা, উমেশের সঙ্গে মহড়ায় ঋদ্ধি। খেলবেন কি না, সেটাই দেখার। টুইটার
গত ১৪ জানুয়ারি ওয়াংখেড়েতে প্যাট কামিন্সের বল মাথায় লেগে সেই যে দল থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন ঋষভ পন্থ, আর তাঁকে ভারতীয় দলের জার্সিতে খেলতে দেখা যায়নি। নিউজ়িল্যান্ডে এসে বিরাট কোহালির দল পাঁচটি টি-টোয়েন্টি এবং তিনটি ওয়ান ডে খেলেছে। একটি ম্যাচেও জায়গা হয়নি ঋষভের।
যখন মনে হচ্ছিল, ভারতীয় ক্রিকেটে ক্রমশই অন্ধকার ভুলভুলাইয়ায় ঢুকে পড়ছেন তিনি, তখনই ভাগ্যের চাকা ঘুরতে পারে। সব কিছু ঠিকঠাক চললে, নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়েলিংটনে শুক্রবার ভোররাত থেকে শুরু প্রথম টেস্টে দস্তানা হাতে ফিরতে দেখা যেতে পারে রুরকি থেকে উঠে আসা প্রতিভাবান তরুণকে। ভারতীয় দলের অন্দরমহলে কিপার বাছাই নিয়ে প্রাথমিক কথাবার্তার যা সুর, জোরালো ভাবেই আলোচনায় আছেন ঋষভ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ থেকে ফেরার পরে দেশের মাটিতে ঋদ্ধিমান সাহার কাছে টেস্ট কিপারের জায়গা হারিয়েছিলেন ঋষভ। কিন্তু সেটা ছিল দেশের মাটিতে হওয়া ক্রিকেট। যেখানে পিচে অসমান বাউন্স থাকে, স্পিনারদের অনেক বেশি সামলানোর ঝক্কি নিতে হয়। তখন উইকেটের পিছনে ঋদ্ধির মতো ধ্রুপদী শিল্পীই দরকার। নিউজ়িল্যান্ডের পিচে অসমান বাউন্স থাকার কোনও সম্ভাবনা নেই, স্পিনারদের ভূমিকাও তুলনামূলক ভাবে অনেক কম। হালফিলে নিউজ়িল্যান্ডের পিচের চরিত্র হচ্ছে, প্রথম দু’দিন পেসারদের সাহায্য করবে। তার পর যত সময় যাবে, তত ব্যাটিং-উইকেটে পরিণত হবে। প্রথম একাদশ নির্বাচনে তাই কিপিং নৈপুণ্যের চেয়েও বেশি প্রাধান্য পেতে পারে ব্যাটিং দক্ষতা।
এমন নয় যে, ঋদ্ধিমান সাহা ব্যাট করতে পারেন না। ওয়েস্ট ইন্ডিজে সেন্ট লুসিয়ায় দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থায় সেঞ্চুরি করেছেন। রাঁচীতে কঠিন পরিস্থিতি থেকে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দলকে টেনে তুলেছেন সেঞ্চুরি করে। ইডেনে নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুই ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি করে ব্যাটিংয়ের জোরেই ম্যান অফ দ্য ম্যাচের পুরস্কার জিতেছেন। কিন্তু গ্লাভস হাতে ঋষভ যেমন কখনওই ঋদ্ধি হতে পারবেন না, তেমনই ঋদ্ধির পক্ষেও ব্যাট হাতে ঋষভের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া কঠিন। ভারতীয় ক্রিকেটে তাই অলিখিত ফর্মুলাই স্থির হয়ে গিয়েছে, ব্যাটিং প্রাধান্য পেলে ঋষভের সম্ভাবনা বেশি, ঋদ্ধি পিছিয়ে। আবার কিপিং যেখানে এক নম্বর বিচার্য বিষয়, সেখানে অনেক এগিয়ে ঋদ্ধি।
ওয়েলিংটনে প্রথম টেস্টের জন্য ব্যাটিংই বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে বলে পূর্বাভাস। একে তো নিউজ়িল্যান্ড বরাবরই খুব শক্ত ঘাঁটি। বারমুডা ট্রায়াঙ্গালের মতোই অতীতের অনেক বিখ্যাত ভারতীয় ব্যাটিং লাইন-আপ রিচার্ড হ্যাডলির দেশে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছে। আগের মতো খেলার অযোগ্য পিচ এখন আর হয় না, তবু নিউজ়িল্যান্ড সব চেয়ে চ্যালেঞ্জিং সফরগুলোর একটা। বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে। ওয়েলিংটন যেমন বিশ্বের সব চেয়ে ‘উইন্ডি’ শহরগুলোর একটা। এত জোরে হাওয়া দেয় যে, প্লেন ল্যান্ডিংয়ের সময় যাত্রীরা চিৎকার করতে থাকেন। সেখানে ট্রেন্ট বোল্টের মতো বাঁ-হাতি সুইং শিল্পী, নিল ওয়্যাগনারের মতো বাউন্সার-বিশেষজ্ঞ (যদিও ওয়্যাগনারের খেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে) বা নবাগত কাইল জেমিসনের মতো দীর্ঘকায় পেসারকে সামলানো ফ্লাইট ল্যান্ড করানোর মতোই কঠিন পরীক্ষা।
তার উপর ভারতের ব্যাটিং বিভাগে প্রথম ছয় জনের মধ্যে কোনও বাঁ-হাতি নেই। ঋষভ সেই কারণে বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন। মনে করা হচ্ছে, বাঁ-হাতি হওয়ায় তিনি নিউজ়িল্যান্ডের বোলারদের ছন্দ নষ্ট করে দেওয়ার দাওয়াই হতে পারেন। ক্রিকেট মহলে একটা ধারণা তৈরি হয়ে আছে যে, ঋষভ ফাস্ট বোলিং ভাল খেলেন। ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ায় বড় সেঞ্চুরি সেই মতকে সমর্থন করছে। হ্যামিল্টনে প্রস্তুতি ম্যাচে দুই ইনিংসেই ঋদ্ধির আগে ব্যাট করানো হয়েছে ঋষভকে। দ্বিতীয় দফায় ৬৫ বলে ৭০ করেন ঋষভ। খারাপ করেননি ঋদ্ধিও। দু’দলের সম্মতিতে ম্যাচ বন্ধ হওয়ার আগে ৩০ রান করেন তিনি। প্রস্তুতি ম্যাচে ঋষভকেই বেশি সময় কিপিং করানো হয়েছিল। তবে কিপিংকে বরাবর বেশি গুরুত্ব দেওয়া কোহালি শেষ পর্যন্ত কী করেন, সেটাই দেখার।
প্রথম টেস্টে ঋষভকে ধরে সাত ব্যাটসম্যানে সুরক্ষিত হয়ে নামতে চাইছে ভারত। শুরুতে যাবেন মায়াঙ্ক আগরওয়াল এবং পৃথ্বী শ। যিনি মাঝে ডোপ-কাণ্ডে জড়িয়ে হারিয়েই যেতে বসেছিলেন। রোহিত শর্মার চোট না লাগলে এত তাড়াতাড়ি দলে ফেরার সুযোগ পেতেন না। তিনে চেতেশ্বর ‘প্রাচীর’ পুজারা। চারে স্বয়ং কোহালি। পাঁচে অজিঙ্ক রাহানে, ছয়ে লড়াকু হনুমা বিহারী। প্রয়োজনে তিনি অফস্পিনও করে দিতে পারবেন। এর সঙ্গে তিন পেসারের মধ্যে দু’জন নিশ্চিত— যশপ্রীত বুমরা এবং মহম্মদ শামি। নিউজ়িল্যান্ডে ফোন করে শোনা গেল, জেটল্যাগ উপেক্ষা করে বুধবার নেট প্র্যাক্টিসে ভাল বোলিং করেছেন ইশান্ত শর্মা। এমন ফুরফুরে থাকলে বুমরা-শামির সঙ্গে তৃতীয় পেসার হবেন তিনিই। ক্রিকেট মহলে অনেকেই দু’দলের পেসারদের মধ্যে দ্বৈরথ দেখার অপেক্ষায়। অস্ট্রেলিয়া সফরের মতোই হাড্ডাহাড্ডি টক্কর হতে পারে বুমরা-শামিদের সঙ্গে বোল্ট-সাউদিদের। বুধবার পর্যন্ত যা ইঙ্গিত, তিন পেসার ও এক স্পিনারে নামবে ভারত। একমাত্র স্পিনারের দৌড়ে এগিয়ে অশ্বিন। যিনি শেষ বিদেশ সফরে ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট দলে জায়গা পাননি। ঘরের মাঠে প্রথম একাদশে থাকলেও বাইরে শেষ টেস্ট খেলেছেন অ্যাডিলেডে ডিসেম্বর, ২০১৮-তে। ভিভের দেশে শেষ সফরে খেলা রবীন্দ্র জাডেজার অলরাউন্ড দক্ষতার কথা এখানেও তুলছেন কেউ কেউ। কিন্তু গরিষ্ঠ অংশ মানছে, সাত ব্যাটসম্যানের বলয়ের পর আর অলরাউন্ডার নয়, অশ্বিনের মতো উইকেটশিকারিকেই বেশি দরকার।
পৃথ্বী, ঋষভ, অশ্বিন। ওয়েলিংটনে যত চর্চা প্রত্যাবর্তনকারীদের নিয়ে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy