ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ থেকে যা ইঙ্গিত ভেসে আসছে, ঋষভ পন্থের জন্যে সুখবর রয়েছে। ফাইল চিত্র
ক্রিকেটে অলিখিত নিয়ম তৈরি হয়েছিল, যদি চোটের জন্য কেউ জায়গা হারায়, সুস্থ হয়ে উঠলে তাঁকে সেই জায়গা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। যেমন দারুণ ব্যাটিং করার পরেও অরুণ লালকে ফিরিয়ে দিতে হয়েছিল সুনীল গাওস্করের জায়গা।
বাংলা সে দিন যে কারণে তাঁর ক্রিকেটারকে হারিয়েছিল, এ বার একই কারণে ফিরে পাবে কি না, তা নিয়ে জোর সংশয় থাকছে। কারণ, আঠেরো মাস চোটের জন্য বাইরে থাকা ঋদ্ধিমান সাহা ফিরে এসে দেখছেন, মধ্যবর্তী সময়ে কোনও এক ঋষভ পন্থের উত্থান ঘটে গিয়েছে। যিনি ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ায় দুরন্ত টেস্ট সেঞ্চুরি করে বসে আছেন। যাঁকে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির উত্তরসূরি মনে করা হচ্ছে সব ধরনের ক্রিকেটে। এবং, অ্যান্টিগায় বৃহস্পতিবার থেকে শুরু প্রথম টেস্টে যিনি প্রথম একাদশে জায়গা পাওয়ার ব্যাপারে এগিয়ে।
ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ থেকে যা ইঙ্গিত ভেসে আসছে, ঋদ্ধির টেস্ট প্রত্যাবর্তনের জন্য আরও অপেক্ষা করতে হতে পারে। এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, ঋষভের চেয়ে উইকেটকিপিং দক্ষতায় ঋদ্ধি অনেক এগিয়ে। বিশেষ করে অধিনায়ক বিরাট কোহালির আস্থা রয়েছে বাংলার উইকেটকিপারের উপরে। অধিনায়ক হিসেবে কোহালি একেবারেই আধুনিক ঘরানার মতো শুধু ব্যাটিং দেখে উইকেটকিপার বাছাইয়ের পক্ষপাতী নন। এই কারণে বিশ্বকাপের দল নির্বাচনের সময়েও কার উইকেটকিপিং দক্ষতা কী রকম, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি।
ভিভ রিচার্ডসের ঘরের মাঠে প্রথম টেস্টে বিরাট-দর্শনই একমাত্র রক্ষাকবচ হয়ে দাঁড়াতে পারে ঋদ্ধির জন্য। ওয়েস্ট ইন্ডিজে হালফিলে যথেষ্ট এলেমেলো পিচ হয়। অনেক ক্ষেত্রে আন্ডারপ্রিপেয়ার্ড পিচও হয় যেখানে তিন বা সাড়ে তিন দিনে খেলা শেষ হয়ে যায়। তখন ভাল ব্যাটসম্যানের চেয়ে ভাল উইকেটকিপার বেশি করে দরকার হতে পারে। আর ঋদ্ধি যে খুব খারাপ ব্যাটিং করেন, তা-ও নয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজেই গত সফরে টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল তাঁর। চোট সারিয়ে ফিরে আসার পরে কয়েক দিন আগে ভারতীয় ‘এ’ দলের হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজেই দু’টি অর্ধশতরান করেন তিনি।
এর পরেও বলতে হচ্ছে, ঋষভই প্রথম একাদশে জায়গা ধরে রাখার ব্যাপারে এগিয়ে। তার কারণ, ব্যাট হাতে দিল্লির বাঁ হাতি তরুণ এমনই প্রভাব বিস্তার করে বসে আছেন যে, তাঁকে উপেক্ষা করা এই মুহূর্তে ভীষণই কঠিন। তার উপর সিডনিতে ভারতের খেলা শেষ টেস্টে বড় সেঞ্চুরি করে বসে আছেন ঋষভ। যা দেখে অ্যাডাম গিলক্রিস্ট থেকে রিকি পন্টিং সকলে উচ্ছ্বসিত ছিলেন। মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স, জশ হেজলউড এবং নেথান লায়নকে নিয়ে তৈরি অস্ট্রেলীয় বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে ১৮৯ বলে ১৫৯ রান করার পরের টেস্টেই তাঁকে বসানো কঠিন হবে।
ঠিক যে কারণে বসানো কঠিন হতে পারে কুলদীপ যাদবকে। ভারতের ঐতিহাসিক অস্ট্রেলিয়া জয়ের শেষ টেস্ট ছিল সিডনিতে। সেই টেস্ট স্মরণীয় করে রেখেছিলেন দুই তরুণ। ঋষভ যেমন ঝোড়ো সেঞ্চুরি করেছিলেন, তেমন কুলদীপ তুলে নিয়েছিলেন ৯৯ রানে পাঁচ উইকেট। অসাধারণ এক দৃশ্য তৈরি হয়েছিল সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে। ঋষভের ব্যাটিং দেখে কমেন্ট্রি বক্সে বসে হাততালি দিচ্ছিলেন গিলক্রিস্ট। আর কুলদীপের স্পিন জাদু দেখে শিশুর মতো উচ্ছ্বসিত ছিলেন তাঁর আদর্শ ক্রিকেটার শেন ওয়ার্ন।
এই টেস্টের পরেই ভারতীয় দলের হেড কোচ রবি শাস্ত্রী ঘোষণা করে দেন, বিদেশের মাঠে এ বার থেকে কুলদীপই হবেন প্রথম স্পিনার। সে দিনই অনেকের মনে সন্দেহ জাগতে শুরু করে যে, প্রথম স্পিনারের পদ হারালেন অশ্বিন। এমনিতেই দেশের মাঠে তাঁর যে রকম সাফল্য, বিদেশে সেই ধার খুঁজে পাওয়া যায় না। তার উপরে ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া, দু’টো বড় বিদেশ সফরেই চোটের কারণে তাঁর সার্ভিসই পায়নি দল। অ্যান্টিগায় প্রাথমিক ভাবে কথা হয়েছে, ছয় ব্যাটসম্যান খেলানোর। সে ক্ষেত্রে অজিঙ্ক রাহানে এবং রোহিত শর্মা দু’জনেই খেলবেন। দুই ওপেনার কে এল রাহুল এবং মায়াঙ্ক আগরওয়াল। তিনে চেতেশ্বর পুজারা, চারে কোহালি। পাঁচে রাহানে, ছয়ে রোহিত। সাতে ঋষভ পন্থ। চার বোলারের মধ্যে তিন পেসার এবং এক স্পিনার।
সেই একমাত্র স্পিনারের জায়গা নেওয়ার জন্য অশ্বিনকে লড়তে হবে কুলদীপ এবং রবীন্দ্র জাডেজার সঙ্গে। সিডনিতে শেষ টেস্টে জাডেজা ভাল বোলিংয়ের সঙ্গে ব্যাট হাতেও দারুণ করেছিলেন। অশ্বিন এখন ওয়ান ডে ক্রিকেটে তাঁর জায়গা হারিয়েছেন। দুই তরুণ রিস্টস্পিনার কুলদীপ এবং যুজবেন্দ্র চহালরা এসে গিয়েছেন। এত দিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মূলস্রোতের বাইরে থাকাটা তাঁর বিপক্ষে যেতে পারে। আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে দু’তিন জন বাঁ হাতি রয়েছেন, যা অফস্পিনারের সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করতে পারে। তবু গরিষ্ঠ মত হচ্ছে, চায়নাম্যান কুলদীপকে অনভিজ্ঞ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানেরা কেউ বুঝে উঠতে পারবেন না। অ্যান্টিগা থেকেই কোহালিদের টেস্ট বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ যাত্রা শুরু হচ্ছে। প্রত্যেক টেস্ট জিতলে পয়েন্ট বাড়বে, তাই এখন থেকে অধিনায়কেরা ড্রয়ের চেয়ে জেতার জন্য বেশি ঝাঁপাবেন বলেও অনুমান করা হচ্ছে। এই পরিবর্তনের হাওয়ায় ঋষভের মতো আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান বা কুলদীপের মতো ইতিবাচক বোলারদের সম্ভাবনা
আরও বাড়বে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy