এশিয়া কাপে উইকেট নেওয়ার পরে ঋষভ। — নিজস্ব চিত্র।
নাথান লিয়ঁ তাঁর পছন্দের অফ স্পিনার। বিশেষ পরীক্ষা নিরীক্ষা নয়, বল হাতে সনাতন অফ স্পিনের মায়াজাল বোনেন এই অজি স্পিনার। সেই স্পিনের জবাব খুঁজে পান না ব্যাটসম্যনরা। লিয়ঁর মডেল অনুসরণ করেই শ্রীলঙ্কায় এখন ফুল ফোটাচ্ছেন বঙ্গতনয় ঋষভ মুখোপাধ্যায়। দ্বীপরাষ্ট্রের মাটিতে বসেছে অনূর্ধ্ব ১৯ এশিয়া কাপের আসর। সেখানেই সংযুক্ত আরব আমিরশাহির অফ স্পিনার ঋষভের অফ স্পিনের ঘূর্ণিতে ঘায়েল বিপক্ষ ব্যাটসম্যানরা।
বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে খেলে ফেলেছে আমিরশাহি। দু’টি ম্যাচে দল হারলেও ইতিমধ্যেই পাঁচ-পাঁচটি উইকেট নিয়ে ফেলছেন ঋষভ। রবিবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধেও তিনটি উইকেট নেন তিনি। সোমবার শ্রীলঙ্কা থেকে আনন্দবাজারকে ঋষভ বলেন, ‘‘আমি তিনটি উইকেট নিয়েছি ঠিকই, কিন্তু আমার বলে অনেকগুলো ক্যাচ পড়েছে। ক্যাচগুলো ধরতে পারলে উইকেট সংখ্যা আরও বাড়ত।’’
কথায় বলে, ক্যাচ ধরো, ম্যাচ জেতো। সেটাই রবিবার করতে পারেননি আমিরশাহির ক্রিকেটাররা। এ দিন শ্রীলঙ্কার সংবাদপত্রে রবিবারের ম্যাচ রিপোর্ট প্রসঙ্গে লেখা হয়েছে, শ্রীলঙ্কা ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মধ্যে বিশেষ কোনও পার্থক্য ছিল না। দুটো দলের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে ফিল্ডিং। ঋষভ বলছিলেন, “আমাদের ফিল্ডিং ভালই। কিন্তু, কী যে হয়ে গেল!’’ আফশোস যাচ্ছে না বঙ্গতনয়ের।
আরও পড়ুন: প্রায় পাঁচ ঘণ্টার ম্যারাথন লড়াই, ১৯তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতলেন রাফায়েল নাদাল
আরও পড়ুন: সেরেনাকে হারিয়ে ইতিহাস আন্দ্রেস্কুর, প্রথম কানাডীয় হিসাবে জিতলেন গ্র্যান্ড স্ল্যাম
দ্বীপরাষ্ট্রে দাপট দেখাচ্ছেন ঋষভ।
মঙ্গলবার নেপালের বিরুদ্ধে নামছে আমিরশাহি। সেই ম্যাচের জন্য নিজেকে তৈরি করছেন ঋষভ। আমিরশাহির সেরা অফ স্পিনার বলছিলেন, ‘‘যে পিচে খেলা হচ্ছে, সেটা ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি। আমাকে মাথা খাটিয়ে বল করতে হচ্ছে। ক্রিজ ব্যবহার করছি, বলের গতিতে বৈচিত্র্য আনছি। কঠিন কিছু করতে যাচ্ছি না। আমার খুব পছন্দের স্পিনার লিয়ঁ। ও শুধু অফ স্পিন করেই উইকেট নেয়। আমাকেও বলা হয়েছে, বেসিকটা ফলো করতে। সেই মতোই আমি বল করছি। উইকেটও আসছে।’’
মুথাইয়া মুরলীধরনের দেশে নাতির সাফল্যে রীতিমতো উত্তেজিত প্রাক্তন ফুটবল তারকা গৌতম সরকার। বিশ্বখ্যাত বক্সার মহম্মদ আলির অমর মন্তব্য আউড়ে ময়দানের ‘বেকেনবাওয়ার’ বলছিলেন, ‘‘চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে। স্বপ্ন দেখতে হবে। ঋষভকে দেখে আমার মনে হয়, ও স্বপ্ন দেখে। ওর মধ্যে ভাল কিছু করার তাগিদ রয়েছে। ঋষভকে বলেছি, তুমি স্বপ্ন দেখো। স্বপ্ন সফল করার জন্য মরিয়া চেষ্টা কর। তুমি বহু দূর যাবে। ঋষভের সাফল্যে আমি গর্বিত।’’
গৌতম সরকারের সঙ্গে ঋষভ।
ঋষভকে নিয়ে গর্বিত তাঁর বাবা প্রদীপ্ত মুখোপাধ্যায়ও। ২০০৬ সালে কর্মসূত্রে সিঁথি ছেড়ে সপরিবারে দুবাই পাড়ি দেন তিনি। ঋষভের বয়স তখন মাত্র পাঁচ। প্রদীপ্তর মা-বাবা এখনও থাকেন সিঁথিতেই। এক সময়ে ক্লাব ক্রিকেট খেলতেন প্রদীপ্ত। পড়াশোনার চাপে শেষ পর্যন্ত ক্রিকেট নিয়ে আর বেশি দূর এগনো হয়নি তাঁর। বাবার অধরা স্বপ্ন পূর্ণ করার দিকে এগচ্ছেন ঋষভ। ছেলের সঙ্গে এখন শ্রীলঙ্কায় রয়েছেন প্রদীপ্ত ও তাঁর স্ত্রী সৃজিতা। শ্রীলঙ্কা থেকে তিনি বলছিলেন, ‘‘আমি ঋষভের উপরে কোনও কিছুই চাপিয়ে দিইনি। ওকে বলেছিলাম পরিশ্রম করতে হবে। পরিশ্রম করলেই সাফল্য মিলবে। গত চার-পাঁচ বছর ধরে ঋষভ খুব পরিশ্রম করেছে। ও আগের থেকে অনেক উন্নতি করেছে। আরও উন্নতি করতে হবে।’’ ঋষভের জেদ আর অধ্যবসায়ের প্রশংসা করছেন কোচ গিরবান চক্রবর্তীও। দুবাই থেকে তিনি বলছিলেন, ‘‘ছেলেটা পরিশ্রমী। শেখার প্রবল ইচ্ছা রয়েছে। যার শেখার ইচ্ছা রয়েছে এবং পরিশ্রমী, সে জীবনে উন্নতি করবেই।’’
বলের দিকে নজর ঋষভের।
মরু শহরে ইন্টার এমিরেটস ও ইন্টার অ্যাকাডেমি টুর্নামেন্টে নজর কাড়ায় আমিরশাহি দলে ডাক পান ঋষভ। এশিয়া কাপ ও অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনকারী পর্বে ঋষভের পারফরম্যান্স বেশ ভাল। আগামী বছর দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বসবে বিশ্বকাপের আসর। আমিরশাহি মেগা টুর্নামেন্টের জন্য যোগ্যতা অর্জন করেছে। প্রদীপ্ত বলছিলেন, ‘‘ঋষভকে তৈরি করার পিছনে গিরবানের (চক্রবর্তী) অবদান রয়েছে। ঋষভকে নিয়ে পড়ে থাকত দীর্ঘ ক্ষণ। অন্যরা প্র্যাকটিস করে উঠে গিয়েছে, তখনও গিরবান পড়ে থেকেছে ঋষভকে নিয়ে। স্পিন বল ক্ষুরধার করার জন্য গিরবানকে নাগাড়ে বল করে চলেছে ঋষভ, এ রকম দৃশ্য অনেকেই দেখেছে এমএস ধোনি অ্যাকাডেমিতে। ঋষভের মায়ের কথাও আলাদা করে বলব। ঋষভ আর ওর ভাইকে নিয়ে সারা দিন পড়ে থাকত।’’ দ্বীপরাষ্ট্রের মাটিতে খেলছে ভারতও। দুটো ম্যাচ জিতে নিয়েছে তারা। ভিন্ন গ্রুপে থাকায় আমিরশাহি ও ভারতের মধ্যে দেখা হবে না। ঋষভ বলছিলেন, ‘‘ভারতের বিরুদ্ধে বল করব, ওদের ব্যাটসম্যানদের আউট করব, এ রকম একটা ইচ্ছা ছিল। কিন্তু অন্য গ্রুপে থাকায় আর খেলা হল না।’’ আবেগের বাষ্প গলায় জড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন ঋষভ। এশিয়া কাপের মাঠ থেকেই বিশ্বকাপের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দিয়েছেন ঋষভ। হৃদয়ে তাঁর বিখ্যাত দাদুর মন্ত্র, ‘‘স্বপ্ন দেখো। স্বপ্নকে সত্যি করো।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy