আগ্রাসী: বাংলাদেশ ওপেনার তানজ়িদ হাসানকে ফিরিয়ে উল্লাস লেগস্পিনার রবি বিষ্ণোইয়ের। টুইটার
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ মানেই ভারতীয় ক্রিকেটে নতুন তারার সন্ধান। এই প্রতিযোগিতাই ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের উপহার দিয়েছে এক যুবরাজ সিংহ, এক বিরাট কোহালি, এক রবীন্দ্র জাডেজাকে। রবিবার পোচেস্ট্রুমে আরও এক নতুন তারার খোঁজ পেল ভারতীয় ক্রিকেটমহল। তিনি রবি বিষ্ণোই।
যাঁর গুগলির ফাঁদে পড়েই বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন প্রায় শেষ হয়ে যেত বাংলাদেশের। কিন্তু পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি উচ্চতার তরুণের ক্রিকেট যাত্রা শুরু হয়েছিল অনেক কসরতের পরে। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি তাঁর আগ্রহ। জোধপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট মাঠে দাদাদের প্র্যাক্টিস দেখতে যেতেন ছোট্ট রবি। নেটের পিছনে দাঁড়িয়ে থাকতেন। তাঁকে সরে যেতে বললে রাগ করতেন। একদিন রবিকে একজন জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘তুই ক্রিকেট খেলতে চাস?’’ সেই ব্যক্তি রবির বর্তমান কোচ প্রদ্যুৎ সিংহ। তাঁর প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগেই মাঠে নেমে পড়েন রবি। কিন্তু খুদে ক্রিকেটারদের প্রাথমিক শিক্ষা দেওয়ার মতো পরিকাঠামো ছিল না জোধপুরে। তবুও কোনও রকমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠেই শুরু হয় রবির ক্রিকেট যাত্রা।
শুরুতে মিডিয়াম পেস করতেন রবি। কিন্তু প্রদ্যুৎ ও তাঁর বন্ধু শাহরুখ পাঠান রবিকে লেগস্পিন করার নির্দেশ দেন। কারণ, তাঁর উচ্চতা কম। শারীরিক ভাবেও খুব একটা শক্তিশালী ছিলেন না। জোধপুর থেকে ফোনে প্রদ্যুৎ বলছিলেন, ‘‘প্রথম দিন লেগস্পিন করাতেই পারেনি। প্রত্যেকটি বলই ছিল গুগলি। দেখলাম, ওর হাতটা মাথার পিছন দিয়ে আসছে। তাই বল পড়ে ডান হাতি ব্যাটসম্যানের ভিতরের দিকে আসছে।’’ প্রদ্যুৎ যোগ করেন, ‘‘শাহরুখকে গিয়ে বললাম, এটাই ওর স্বাভাবিক অ্যাকশন। এটা পরিবর্তন করা উচিত না। তখন থেকে গুগলির উপরেই বেশি জোর দিয়েছে রবি। লেগস্পিন ছিল ও বৈচিত্র, গুগলিই ওর অস্ত্র।’’
বেশি দিন যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে অনুশীলন করা হল না রবিদের। বিকল্প মাঠও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। ২০১৫ সালে চাকরি ছেড়ে দেন প্রদ্যুৎ ও শাহরুখ। রবির সঙ্গে আরও তিনজনকে নিয়ে ঠিক করেন, নিজেরাই অ্যাকাডেমি গড়বেন। নিজেরাই অনুশীলন করবেন সেখানে। কিন্তু অ্যাকাডেমি গড়ে তোলার অর্থ তাঁদের কাছে ছিল না। তাই রবিদের নিয়েই শুরু হয় কাজ। মাঠ তৈরি করা থেকে মাটি কেটে পিচ বানানোর কাজ করেন রবি, প্রদ্যুৎ, শাহরুখেরা।
অ্যাকাডেমি গড়ে তোলার পরে থেকেই শুরু হয় রবি বিষ্ণোইয়ের মূল প্রস্তুতি। জোধপুরে সে রকম ম্যাচ প্র্যাক্টিস পেতেন না। তবুও ২০১৬-তে রাজস্থানের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে ট্রায়াল দিতে তাঁকে জয়পুর পাঠিয়েছিলেন প্রদ্যুৎরা। হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হয় রবিকে। পরের বারও একই ঘটনা। ২০১৮-এ নিশান্ত ইয়াগনিকের সঙ্গে কথা বলে রবিকে রাজস্থান রয়্যালসের ট্রায়ালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন তাঁর দুই কোচ। কিন্তু সেই বছর দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়তেন রবি। বাবা মাঙ্গিলাল বিষ্ণোই স্থানীয় এক স্কুলের শিক্ষক। কখনওই চাননি বোর্ডের পরীক্ষা না দিয়ে ক্রিকেট খেলুক তাঁর ছেলে। কিন্তু প্রদ্যুৎ ও শাহরুখ তাঁর ছাত্রকে বড় মঞ্চে পাঠানোর মরিয়া চেষ্টা করেছেন। শাহরুখ বলছিলেন, ‘‘প্রথম দিন রাজস্থান রয়্যালসের ট্রায়ালে ওকে ঢুকতেই দেয়নি। দ্বিতীয় দিন থার্ডম্যানে ফিল্ডিং করতে দিয়েছিল। মিসফিল্ড করায় ফিল্ডিং থেকেও বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল রবিকে। সে দিন রাতে ফোন করে বলেছিল, আমাকে জোধপুরে ফিরিয়ে নাও। এখানে কিছু হবে না। তার চেয়ে বোর্ডের পরীক্ষায় বসি।’’ কিন্তু নাছোড় তাঁর দুই কোচ, রবিকে ফিরে আসার অনুমতি দেননি। তৃতীয় দিন নেটে প্রথম বল করেন রবি। আউট করেন সঞ্জু স্যামসন, জস বাটলারকে। সেখান থেকেই রাজস্থানের নির্বাচকদের নজর কাড়েন। ‘‘কিন্তু সে বারও অনূর্ধ্ব-১৯ দলে ওকে নিচ্ছিল না। সেই রাতে এক নির্বাচকের বাড়িতে গিয়ে অনুরোধ করি ওকে একটি সুযোগ দেওয়ার জন্য। পরের দিন সকালে রবিকে অনুশীলনে পাঠাতে বলেন তিনি। ওর কয়েকটি বল দেখেই অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যালেঞ্জার ট্রফিতে সুযোগ দেন সেই নির্বাচক। আর থামেনি। চ্যালেঞ্জারে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক। বিনু মাঁকড় ট্রফিতে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকদের তালিকায় তৃতীয়। কোচবিহার ট্রফিতেও প্রথম পাঁচ জনের মধ্যে ছিল ও,’’ বলছিলেন প্রদ্যুৎ।
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে তাঁর উইকেটসংখ্যাও নজর কাড়ার মতো। ছয় ম্যাচে ১৭ উইকেট। আইপিএল-এ কিংস ইলেভেন পঞ্জাব দলে সুযোগ পেয়েছেন তার আগেই। দু’কোটি টাকায় তাঁকে নেন অনিল কুম্বলেরা। প্রদ্যুৎ বলছিলেন, ‘‘বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়ার পরে জোধপুরে হারানো ক্রিকেট সংস্কৃতি ফিরে এসেছে। এ বার আইপিএলে নতুন চ্যালেঞ্জ। সেখানে অবশ্য অনিল স্যরকে পাশে পাবে। প্রার্থনি করি, অনিল স্যরের সংস্পর্শে আরও উন্নত স্পিনার হয়ে উঠুক রবি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy