দুর্দান্ত অভিষেক, তার পর হঠাত্ হারিয়ে যাওয়া, সেই নরেন্দ্র হিরওয়ানি এখন কী করছেন জানেন?
উল্কার মতো উত্থান। খ্যাতি, প্রশংসা। তারপর ধীরে ধীরে হারিয়ে যাওয়া। নরেন্দ্র হিরওয়ানির ক্রিকেটজীবন ঠিক এমনই।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৪:০১
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৫
উল্কার মতো উত্থান। খ্যাতি, প্রশংসা। তারপর ধীরে ধীরে হারিয়ে যাওয়া। নরেন্দ্র হিরওয়ানির ক্রিকেটজীবন ঠিক এমনই। প্রচুর প্রতিশ্রুতি ছিল তাঁর কেরিয়ারের গোড়ায়। কিন্তু তা পূর্ণ হয়নি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে হারিয়েই গিয়েছিলেন।
০২১৫
১৪ বছর বয়সে নরেন্দ্র হিরওয়ানিকে স্পট করা হয়েছিল ইনদওরে। তখন তাঁর ওজন ছিল যথেষ্ট বেশি। কিন্তু হাতে ছিল বল ঘোরানোর অসামান্য ক্ষমতা। আর সেই কারণেই ওই বয়সে নজর কেড়ে নিয়েছিলেন। ঠিক প্রতিভাকেই যে বেছে নেওয়া হয়েছিল, তার প্রমাণ মেলে পরবর্তীকালে।
০৩১৫
পাঁচ বছর পর ১৯৮৮ সালে তৎকালীন মাদ্রাজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল হিরওয়ানির। সেটা ছিল সিরিজের নির্ণায়ক টেস্ট। চোখে চশমা, মাথায় হেডব্যান্ড, হাতে রিস্টব্যান্ড। টেস্ট ইতিহাসে অন্যতম সাড়া জাগানো অভিষেক হয়েছিল তাঁর।
০৪১৫
তার আগে নয় বছরে ভারতে কোনও টেস্ট হারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। হিরওয়ানির দাপটে ২৫৫ রানে জিতল ভারত। প্রথম ইনিংসে ১৮.৩ ওভারে ৬১ রানে আট উইকেট নিলেন হিরওয়ানি। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫.২ ওভারে ৭৫ রানে নিলেন আট উইকেট। অভিষেক টেস্টে মোট ১৬ উইকেট!
০৫১৫
টেস্টের বিরতির দিন রুমমেটকে হিরওয়ানি বলেছিলেন যে, পরের দিন ভিভ রিচার্ডসের উইকেট তিনিই নেবেন। কথা রেখেছিলেন ১৯ বছর বয়সি। টেস্টের তৃতীয় দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক, ফর্মে থাকা রিচার্ডসকে বিধ্বংসী ফ্লিপারে বোল্ড করেছিলেন তিনি।
০৬১৫
হিরওয়ানির লেগস্পিন, গুগলি, ফ্লাইটের হদিশ না পেয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানরা তাঁকে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মারার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন তাঁরা। এবং ব্যর্থ হয়েছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংস তাঁর শেষ ছয় শিকারের মধ্যে পাঁচটিই ছিল স্টাম্পড।
০৭১৫
কেরিয়ারের প্রথম চার টেস্টের পর হিরওয়ানির পকেটে ছিল ৩৬ উইকেট। কেরিয়ারের প্রথম চার টেস্টে এত উইকেট আর কোনও বোলার নেননি। কিন্তু তার পর হিরওয়ানির বোলিংয়ে সেই ম্যাজিক দেখা যায়নি। কেমন যেন হঠাত্ করেই হারিয়ে গেল তাঁর জাদু।
০৮১৫
১৯৮৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যায় ভারত। সেই সফরে ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানরা আক্রমণের জন্য বেছে নেন তাঁকে। পিচে কোনও সাহায্য না থাকায় আরও সাদামাটা দেখায় হিরওয়ানিকে। বিপক্ষ শিবিরে কোনও চাপও সৃষ্টি করতে পারেননি তিনি। তিন টেস্টে নেন মাত্র ছয় উইকেট।
০৯১৫
এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে অনিল কুম্বলের। বেঙ্গালুরুর লেগস্পিনার দলে ক্রমশ নিজের জায়গা পাকা করে ফেলেন। যার ফলে কোণঠাসা হয়ে পড়েন হিরওয়ানি। ১৯৯০ সালে সাত টেস্টে খেলেছিলেন তিনি। নেন মোট ১৬ উইকেট।
১০১৫
ঘরের মাঠে তিন স্পিনারের ফর্মুলায় এরপর খেলতে থাকে ভারত। কিন্তু সেই তিন স্পিনার হলেন লেগস্পিনার অনিল কুম্বলে, বাঁ-হাতি স্পিনার ভেঙ্কটপতি রাজু, অফস্পিনার রাজেশ চৌহান। এই ত্রয়ীর দাপটে আরও পিছিয়ে পড়েন হিরওয়ানি।
১১১৫
১৯৯০ সালের পর ফের ১৯৯৫ সালে টেস্টের আসরে দেখা যায় হিরওয়ানিকে। কটকে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে নেন ছয় উইকেট। পরের বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে খেলেন দুই টেস্ট। তাতে নেন মোটে দুই উইকেট। ১৯৯৬ সালের নভেম্বেরে ইডেনে জীবনের শেষ টেস্ট খেলেন তিনি।
১২১৫
১৯৮৮ থেকে ১৯৯৬, আট বছরের টেস্ট কেরিয়ারে ১৭ ম্যাচে হিরওয়ানি নিয়েছেন ৬৬ উইকেট। বোলিং গড় ৩০.১০। পাঁচ উইকেট নিয়েছেন চারবার। ব্যাটে রান করেছেন ৫৪। সর্বাধিক ১৭। ওয়ানডে ফরম্যাটে ১৮ ম্যাচে তিনি নিয়েছেন ২৩ উইকেট।
১৩১৫
২০০১ সালে অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছিলেন হিরওয়ানি। কিন্তু তাঁকে প্রথম এগারোয় রাখা হয়নি। আর কখনও জাতীয় দলের আবহে আসেননি তিনি। তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে ২৩ বছর ধরে খেলেন তিনি।
১৪১৫
শুধু মধ্যপ্রদেশ নয়, বাংলার হয়েও খেলেছেন তিনি। বাংলার হয়ে রঞ্জিতে ১৯৯৬-৯৭ মরসুমে ২৩.১৩ গড়ে ২৯ উইকেট নেন হিরওয়ানি। সামগ্রিক ভাবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৬৭ ম্যাচে ৭৩২ উইকেট নেন তিনি। ৫২ রানে আট উইকেট তাঁর সেরা বোলিং। গড় ২৭.০৫। পাঁচ উইকেট নিয়েছেন ৫৪ বার।
১৫১৫
২০০৬ সালে অবসর নেওয়ার পর ক্রিকেটের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছেন তিনি। ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচক হয়েছিলেন। পরে মধ্যপ্রদেশ ক্রিকেট সংস্থায় নির্বাচকমণ্ডলীর চেয়ারম্যানও হন তিনি। তাঁর ছেলে মিহির হিরওয়ানিও মধ্যপ্রদেশের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলছেন।