ভারতের ৪x৪০০ মিটার রিলে দল। ছবি: টুইটার।
বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ৪x৪০০ মিটার রিলের হিটে এশীয় রেকর্ড করেছিল ভারতীয় দল। মহম্মদ আনাস, আমোজ জ্যাকব, মহম্মদ আজমল ভারিয়াথোদি এবং রাজেশ রমেশের পারফরম্যান্স নজর কেড়ে নিয়েছিল। সেই দৌড়ের পর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন রমেশ। তবু আত্মবিশ্বাসকে সম্বল করে পদকের লক্ষ্যে ফাইনালে নেমেছিলেন তিনি।
ভারতের ৪x৪০০ মিটার রিলে দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রমেশ। দৌড় শেষ করার গুরু দায়িত্ব থাকে তাঁর উপর। শেষ ২০০ মিটারে সর্বোচ্চ গতি তুলে প্রতিপক্ষদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নামাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল রমেশের। হিটের পর ট্র্যাকেই শুয়ে পড়েছিলেন তিনি। হাঁটার মতো অবস্থাতেও ছিলেন না রমেশ। স্ট্রেচারে করে তাঁকে নিয়ে যেতে হয় স্টেডিয়ামে মেডিক্যাল রুমে।
এশীয় রেকর্ড গড়ার আনন্দে আত্মহারা আনাস, জ্যাকবেরা লক্ষ্য করেননি রমেশ তাঁদের সঙ্গে সাজঘরে ফেরেননি। হোটেলে ফেরার জন্য বাসে ওঠার পর তাঁরা খেয়াল করেন সঙ্গে রমেশ নেই। বাস থেকে নেমে আনাসেরা সতীর্থের খোঁজ শুরু করেন। স্টেডিয়ামের ভিতরের মেডিক্যাল রুমে গিয়ে দেখা পান তাঁর। রমেশ তাঁদের জানান, পায়ের পেশিতে টান ধরায় স্ট্রেচারে করে নিয়ে আসা হয়েছে তাঁকে।
অ্যাথলিটদের ক্ষেত্রে এই ধরনের টান অস্বাভাবিক কিছু নয়। দীর্ঘ পাল্লার বা দ্রুত গতির দৌড়ের পর অ্যাথলিটদের পায়ের পেশিতে টান ধরে। অতিরিক্ত ঘামের জন্য পেশির মধ্যে অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়। এতে পেশি শক্ত হয়ে যায়। রমেশেরও ঠিক তেমন হয়েছিল। পাশাপাশি অসুস্থও হয়ে পড়েছিলেন তিনি। ২৪ বছরের অ্যাথলিট বলেছেন, ‘‘হিট শেষ হওয়ার পর পায়ে টান ধরে। শরীরে অস্বস্তি হচ্ছিল। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বমি হয়েছে। ঘন্টা দুয়েক বেশ অস্বস্তি ছিল। তার পর ধীরে ধীরে স্বস্তি ফেরে।’’
সতীর্থেরা ধরে নিয়েছিলেন ফাইনালে দৌড়তে পারবেন না রমেশ। তিনি অবশ্য প্রথম বার বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে দৌড়ানোর সুযোগ হাতছাড়া করতে চাননি। ফাইনালের আগের দিনই সতীর্থদের জানিয়ে দিয়েছিলেন ফাইনালে নামবেন-ই। রমেশ বলেছেন, ‘‘আমার পায়ের পেশিতে বাজে রকম টান ধরেছিল। বড় চোট লাগতে পারত। সত্যি বলতে, আমাদের নিয়ে কারও কোনও আশা ছিল না। কেউ ভাবতেই পারেনি আমরাও বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে পদক জেতার মতো জায়গায় যেতে পারি। যাঁরা ভেবেছিলেন আমরা শুধু অংশগ্রহণ করতে গিয়েছিলাম, তাঁদের ভুল প্রমাণ করতে পেরেছি।’’
আগের বার বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের হিটে ভারতীয় দল সময় নিয়েছিল ৩ মিনিট ৭.২৯ সেকেন্ড। দ্বাদশ স্থানে শেষ করায় তীব্র সমালোচিত হয়েছিলেন দলের অন্যতম কোচ রাজ মোহন। সে বার জ্যাকবের চোট থাকায় নামতে পারেননি তিনি। তাঁর পরিবর্তে দলে ছিলেন নাগথান পান্ডি। তখন থেকেই ভাল পারফরম্যান্স করার জেদ পেয়ে গিয়েছিল রমেশদের মনে। তিনি বলেছেন, ‘‘ভারতীয়েরা এমন দৌড়াতে পারে অনেকেই ভাবতে পারেনি। জামাইকা, নেদারল্যান্ডসের মতো দেশের অ্যাথলিটেরা আমাদের অভিনন্দন জানিয়েছে। ওরা স্বীকার করেছে, আমাদের এমন পারফরম্যান্স ওদের কাছেও অপ্রত্যাশিত ছিল।’’
ভারত ৪x৪০০ মিটার রিলে ৩ মিনিটের কম সময় শেষ করতে পারবে, একটা সময় পর্যন্ত কেউ বিশ্বাস করতে পারতেন না। সেটাই বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের মঞ্চে করে দেখিয়েছেন রমেশেরা। একটা সময় তামিলনাড়ুর ত্রিচি রেল স্টেশনে টিকিট পরীক্ষকের রাজ করতেন রমেশ। ২০১৮ সালে তাঁকে প্রতি দিনই দেখা যেত ত্রিচি স্টেশনে। রমেশ তখন ভাবতেন, রোজগারের জন্য হয়তো অ্যাথলেটিক্স ছেড়েই দিতে হবে। টিকিট পরীক্ষকের কাজ করলেও তাঁর মন পড়ে থাকল অ্যাথলেটিক্সের ট্র্যাকেই। তাঁর কাজ ছিল টিকিটহীন যাত্রী ধরা। সেই কাজ তেমন দক্ষতার সঙ্গে করতে পারতেন না। সে জন্য দফতরের কর্তাদের কাছে কথাও শুনতে হত তাঁকে। রমেশ বলেছেন, ‘‘মানুষকে জরিমানা করতে ভাল লাগত না। সতর্ক করে ছেড়ে দিতাম। তাতে রেলের আয় হত না ঠিক মতো।’’
সে বছরই একটি প্রতিযোগিতায় জ্যাকব যেতে না পারায় ভারতীয় রিলে দলে সুযোগ পেয়ে যান রমেশ। আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। শুরু হয় দৌড়। যে দৌড় বিশ্বসেরা আমেরিকাকেও কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের আসরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy