গুরুপ্রণাম: ৩৪তম লা লিগা খেতাব রিয়াল মাদ্রিদের। বৃহস্পতিবার রাতে ট্রফি জেতার পরে জ়িদানকে শূন্যে ছুড়ে প্রথাগত উচ্ছ্বাস র্যামোসদের। ছবি: এপি
অনেক দিন পরে মাদ্রিদের সব খবরের কাগজের প্রথম পাতা জুড়ে শুধু ফুটবলের ছবি।
গত কয়েক মাস ধরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মানুষের মৃতদেহের ছবি দেখতে দেখতে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। সব সময়ই মনে হত, এ বার মনে হয় আমার পালা। এই দমবন্ধকর পরিস্থিতি কিছুটা হলেও কাটল রিয়াল মাদ্রিদের সৌজন্যে। আমার পুরনো শহরটাকে যেন ফিরে পেলাম। জ়িনেদিন জ়িদান-বাহিনীর ৩৪তম লা লিগা জয় মাদ্রিদের বাসিন্দাদেরও অনুপ্রাণিত করল। করিম বেঞ্জেমারা দেখিয়ে দিল, পরিস্থিতি যতই প্রতিকূল হোক, লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।
মাদ্রিদ শহরের অন্যতম দর্শনীয় স্থান হচ্ছে প্লাজ়া দে সিবেলেস। বিশ্বের যে প্রান্তেই রিয়াল ট্রফি জিতুক, এখানে সারা রাত উৎসব করেন সমর্থকেরা। ফুটবলারেরাও পরের দিন ট্রফি নিয়ে সিবেলেস আসেন। আমিও বহুবার যোগ দিয়েছিলাম সেই উৎসবে। বৃহস্পতিবার রাতে টিভিতে ভিয়ারিয়ালের বিরুদ্ধে রিয়ালের ২-১ জয় দেখে অভ্যাস মতো চলে গিয়েছিলাম সিবেলেসে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। লিগ জয়ের উৎসব সকলে বাড়িতেই করেছেন। এর আগে স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্মান জানাতে যে ভাবে মানুষ ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়েছিলেন, সেই দৃশ্যই আবার চোখে পড়ল বৃহস্পতিবার রাতে। সিবেলেস গিয়ে দেখলাম, অল্প সংখ্যক রিয়াল ভক্ত ক্লাবের পতাকা নিয়ে গাড়িতে করে ঘুরছেন। সপ্তাহখানেক আগে টিভিতে দেখেছিলাম, ইপিএল জয়ের আনন্দে লিভারপুলের সমর্থকেরা বিধি-নিষেধের তোয়াক্কা না করে জমায়েত হয়েছিলেন। মাদ্রিদে তা না হওয়ায় খুব ভাল লাগল।
মাদ্রিদের মানুষের মানসিকতার পরিবর্তনের মতোই রোমাঞ্চকর রিয়ালের ঘুরে দাঁড়ানো। এর নেপথ্যে মূল কারিগর জ়িদান। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো জুভেন্টাসে চলে যাওয়ার পরে খুব দুঃখ পেয়েছিলাম। দায়িত্ব ছাড়লেন জ়িদানও। তার পরেই পতন শুরু হয় রিয়ালের। বন্ধুদের বলেছিলাম, একমাত্র জ়িদানই পারবেন রিয়ালকে বাঁচাতে। ফরাসি কিংবদন্তি ফেরার পরেই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করল আমার প্রিয় ক্লাব। রিয়ালে ফুটবলার জ়িদানকে আমি দেখেছি। ম্যানেজার হওয়ার পরেও দেখেছি। দু’টি ভূমিকাতেই অনবদ্য জ়িজ়ু। ম্যানেজার হিসেবে ২০৯টি ম্যাচ খেলে ১১টি ট্রফি জিতেছেন। অর্থাৎ, প্রতি ১৯টি ম্যাচের পরে একটি করে ট্রফি জিতেছেন জ়িদান। করোনার জেরে বন্ধ থাকার পরে লা লিগা যখন শুরু হল, টানা দশটি ম্যাচ জিতে চ্যাম্পিয়ন হল রিয়াল। অবিশ্বাস্য পরিসংখ্যান। ফুটবল জীবনেও অসম্ভব লড়াকু ছিলেন জ়িদান। কোচিং শুরু করার পরেও মানসিকতা এতটুকু বদলায়নি। দ্বিতীয় বার যখন দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তখন রিয়ালের রীতিমতো বেহাল অবস্থা। তার উপরে রোনাল্ডোর মতো স্ট্রাইকার নেই। অন্য কেউ হলে এই দায়িত্ব নিতে রাজি হতেন কি না, সন্দেহ ছিল।
রিয়ালের টিম ম্যানেজমেন্টে আমার বেশ কয়েক জন পরিচিত আছে। তাদের কাছে শুনেছি, দ্বিতীয় পর্বের শুরুর দিকে জ়িদান ফুটবলারদের কিছু বলতেন না। মন দিয়ে সকলের খেলা দেখতেন। আলাদা ভাবে কথা বলে উদ্বুদ্ধ করতেন। কারণ, সেই সময় স্পেনের সংবাদ মাধ্যমে প্রত্যেক দিনই রিয়ালের ফুটবলারদের কড়া সমালোচনা হচ্ছিল। যা আরও চাপে ফেলে দিয়েছিল করিম বেঞ্জেমাদের। ফরাসি কিংবদন্তির প্রত্যাবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ফিরে এসেছিল রিয়ালের সেই হার-না-মানা মানসিকতাও। ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে দেখুন, এর মধ্যেই কত পরিণত হয়ে উঠেছে। আমার আশা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগও জিতবে রিয়াল।
(সাক্ষাৎকার ভিত্তিক অনুলিখন। লেখক শেষ মরসুমের ইস্টবেঙ্গল কোচ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy