দর্শকদের বিরুদ্ধে আম্পায়ারের কাছে অভিযোগ জানাচ্ছেন ভারতীয় ক্রিকেটারেরা। রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক পেনও। ছবি: গেটি ইমেজেস।
সিডনি ক্রিকেট মাঠে মহম্মদ সিরাজকে গ্যালারি থেকে বর্ণবিদ্বেষমূলক মন্তব্য করার পরিপ্রেক্ষিতে কেবল ভারতীয় দল বা ক্রিকেট বোর্ড কিংবা আইসিসি-ই ক্ষুব্ধ নয়। এই ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান ও প্রাক্তন ক্রিকেটারেরাও।
প্রাক্তন ভারতীয় ওপেনার বীরেন্দ্র সহবাগ মাঠে আম্পায়ারদের সঙ্গে ভারতীয় দলের খেলোয়াড়দের কথা বলার ছবি টুইট করে লেখেন, ‘‘তোমরা করলে রসিকতা আর অন্যরা করলে বর্ণবৈষম্য। সিডনির মাঠে কয়েকজন দর্শক যা করল, তা দুর্ভাগ্যজনক। একটা উত্তেজনক সিরিজ বিঘ্নিত হচ্ছে।’’
অতীতে অস্ট্রেলিয়ায় দুর্দান্ত ইনিংস উপহার দেওয়া ভি ভি এস লক্ষ্মণের প্রতিক্রিয়া, ‘‘সিডনিতে যা হল তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এই ধরনের জঘন্য ঘটনার কোনও স্থান নেই। বুঝি না, খেলার মাঠে ক্রিকেটারদের কটূ কথা বলে কী আনন্দ পাওয়া যায়! যদি খেলা দেখতে এসে ক্রিকেটারদের সম্মান করতে না শেখেন, তা হলে ঘরে বসে থাকুন। মাঠের পরিবেশ নষ্ট করবেন না।’’
তবে ভারতীয়রাই নন, অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারেরাও কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল, ঘটনার সময়ে ক্যামেরন গ্রিনের সঙ্গে ব্যাট করছিলেন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক টিম পেন। তিনিও ভারতীয় দলের সঙ্গে আম্পায়ারের কাছে জমায়েতকারীদের মধ্যে ছিলেন। যা দেখে খুশি অস্ট্রেলীয় কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার। তাঁর কথায়, ‘‘দারুণ কাজ করেছে পেন। দেখে ভাল লাগল টিমও প্রতিবাদে অংশ নিচ্ছে। ক্রিকেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে। কিন্তু খেলোয়াড়দের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক কখনও নষ্ট হয় না। টিম সেটাই করে দেখিয়েছে।’’
ল্যাঙ্গারের মতে, এই আচরণ সিরিজের বন্ধুত্বমূলক আচরণের পরিপন্থী। তাঁর কথায়, ‘‘সীমিত ওভার এবং টেস্ট সিরিজে বন্ধুত্বমূলক আচরণ বজায় থেকেছে। সিরিজ শুরুর আগে সাক্ষাৎকারে বলেছিলাম, বন্ধুত্ব অক্ষুণ্ণ রেখে ২২ গজে লড়াই হবে। গোটা সিরিজে আমরা সেটাই দেখেছি। চা পানের বিরতিতে দু’দলের সঙ্গেই কথা বললাম। আয়োজক হিসেবে আমরা কখনও আমাদের বন্ধুদের প্রতি এই ধরনের আচরণ বরদাস্ত করতে পারি না।’’ যোগ করেন, ‘‘গত বছর ইংল্যান্ড সফরে আমাদের কয়েক জন ক্রিকেটার এই ধরনের আচরণের সম্মুখীন হয়েছিল। কাজেই এই বাজে আচরণকে আমরা সমর্থন করি না। যার প্রতিবাদ করেছে টিম। জানি না তখন ও কী বলছিল।’’
ল্যাঙ্গার আরও বলেছেন, ‘‘যাঁরা এই আচরণ বা মন্তব্য করেন, তাঁরা জানেন না, অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাস বা কী রকম নির্মম সময়ের মধ্য দিয়ে পেরোতে হয়েছে আমাদের। অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাস পড়লেই জানতে পারবেন বর্ণবিদ্বেষ কতটা ঘৃণ্য ব্যাপার এবং তা কতটা আঘাত করে মানবিকতাকে।’’ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের এক হাত নিয়ে ল্যাঙ্গার বলেন, ‘‘টিকিট কেটে খেলা দেখতে এলে খেলোয়াড়কে সম্মান করুন। উৎসাহ দিন। এই আচরণকে আমি ঘৃণা করি। বিশ্বের অনেক জায়গাতেই এ সব হয়। এখন অস্ট্রেলিয়ার মাঠে এই ঘৃণ্য সংস্কৃতির আমদানি হয়েছে দেখে খারাপ লাগছে।’’
ভারতীয় স্পিনার আর অশ্বিনও কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। তাঁর মতে, সিডনিতে এই আচরণ নতুন নয়। লৌহ-মুষ্টি দিয়ে এর প্রতিকার করা উচিত। সাংবাদিক সম্মেলনে অশ্বিন বলেন, ‘‘হতাশাজনক বলে এই ঘটনাকে এড়িয়ে যাওয়া লঘু পদক্ষেপ। অস্ট্রেলিয়ায় এটা আমার চতুর্থ সফর। সিডনিতে অতীতেও এই একই অভিজ্ঞতা হয়েছে। অ্যাডিলেড বা মেলবোর্নে এতটা হয় না। তবে সিডনিতে প্রতি বার এই বর্বর আচরণের মুখোমুখি হতে হয়। জানা নেই, এর কারণ কী?’’ এর পরেই বিরাট কোহালির নাম না উল্লেখ করে অশ্বিন বলেন, ‘‘অতীতে দু’এক বার গ্যালারি থেকে এতটাই উত্যক্ত করা হয়েছে আমাদের ক্রিকেটারেদের যে মাথা শান্ত রাখতে না পেরে তারাও প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ফেলেছিল। এটা বেশি করেন মাঠ সংলগ্ন গ্যালারিতে বসে থাকা দর্শকেরা।’’ যোগ করেন, ‘‘কদর্য মন্তব্য প্রত্যেক বারেই গ্যালারি থেকে উড়ে আসে। এ বার ওরা একধাপ এগিয়ে গিয়ে বর্ণবিদ্বেষমূলক মন্তব্য করছিল। যা আজকের দিনে কাম্য নয়। যাঁরা এই মন্তব্য করেছেন, তাঁদের বেড়ে ওঠার মধ্যেই সমস্যা রয়েছে। এই ঘৃণ্য আচরণ বন্ধ করতে লৌহ-মুষ্টির প্রয়োজন রয়েছে।’’
এখানেই না থেমে অশ্বিন সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘‘প্রান্তসীমা থেকে ১০ গজ ভিতরে ঢুকে এলে এই আওয়াজ আর কানে আসে না। সিরাজ নতুন ছেলে। তাই ওর সমস্যা দেখেই আমি অজিঙ্ক, রোহিত এগিয়ে গিয়েছিলাম।’’
এর আগে ২০০৮ সালে সিডনিতে সেই ‘মাঙ্কিগেট’ বিতর্কে যিনি কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন, সেই ভারতীয় স্পিনার হরভজন সিংহও কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়ে বলেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে গিয়ে অতীতে আমার ধর্ম, গায়ের রং, নিজের সম্পর্কে অনেক বর্ণবিদ্বেষমূলক মন্তব্য শুনেছি। নির্বোধদের এই আচরণ প্রথম নয়। আপনি কী ভাবে বন্ধ করবেন?’’
আরও পড়ুন: বর্ণবৈষম্য নিয়ে সরব হরভজন, সহবাগরা
প্রাক্তন অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটার মাইকেল হাসি এবং শেন ওয়ার্নও ক্ষুব্ধ এই ঘটনায়। হাসি অস্ট্রেলীয় প্রচারমাধ্যমকে বলেন, ‘‘ভয়ঙ্কর ঘটনা! আজকের দিনেও এ সব ঘটছে, তা ভাবাই যায় না। এই ধরনের দর্শকদের আজীবন ক্রিকেট মাঠে প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া হোক। ভারতীয়েরা আমাদের দেশে এসেছেন ক্রিকেটীয় বিনোদন উপহার দিতে। সেখানে ক্রিকেটারদের প্রতি এই আচরণ অবাঞ্ছিত।’’
আরও পড়ুন: জাপানের ৮০ শতাংশ মানুষ অলিম্পিক্স আয়োজনের বিরুদ্ধে!
শেন ওয়ার্নের মন্তব্য, ‘‘অসম্মানজনক ঘটনা। আর যেন এই ঘটনা না হয়, তা দেখতে হবে। আশা করি, দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে কড়া শাস্তি দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy