Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
ফাইনালে হার মানলেও বাংলার লড়াইকে কুর্নিশ বিরাটদের হেডস্যরের
Ranji Trophy

অরুণ-সিংহ জেগেছে, সবাই সাবধান: শাস্ত্রী

আশির দশকে খেলা বহু ক্রিকেটার মনে করেন, বঙ্গ ক্রিকেটে মেরুদন্ড যোগ করেছেন অরুণ লাল-ই।

ফেরা: বিমানবন্দরে অরুণ ‘বরণ’ অভিষেক ডালমিয়ার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

ফেরা: বিমানবন্দরে অরুণ ‘বরণ’ অভিষেক ডালমিয়ার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

সুমিত ঘোষ 
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২০ ০৫:০৬
Share: Save:

রঞ্জি ট্রফি হাতছাড়া হলেও নতুন বাংলা তৈরি করে ফেলেছেন সিংহহৃদয় অরুণ লাল, বলে মনে করছেন রবি শাস্ত্রী। রঞ্জি ফাইনালে সৌরাষ্ট্রের কাছে হেরে গেলেও বাংলা দল এবং বাংলার ক্রিকেট ভক্তদের ভেঙে না পড়ার পরামর্শই দিচ্ছেন বিরাট কোহালিদের হেড কোচ। বরং দীর্ঘ দিনের সহযোদ্ধা, এক সময়কার অদম্য প্রতিপক্ষ এবং প্রিয় বন্ধুর কোচিংয়ে হার-না-মানা বাংলাই তৈরি হতে যাচ্ছে বলে তাঁর পূর্বাভাস।

দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে চলতি সিরিজ বাতিল হওয়ার পরে ফোনে আনন্দবাজারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় শাস্ত্রী বলে দিলেন, ‘‘প্রথমেই আমার বন্ধু অরুণ লালকে আন্তরিক অভিনন্দন। এটা মোটেও হার নয়, বরং কী ভাবে তীব্র প্রতিকূলতার মধ্যেও হার স্বীকার করতে নেই, তার শিক্ষা। অরুণের বাংলা উঠতি ক্রিকেটারদের সামনে লড়াইয়ের উদাহরণ পেশ করেছে।’’

প্রিয় বন্ধু সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শাস্ত্রীর মনে পড়ছে, ‘‘আমরা যখন খেলতাম, অরুণকে বলতাম সিংহহৃদয়। সবাই হার মানবে কিন্তু বাংলার সিংহ হার মানবে না। আমরা জানতাম, বাংলাকে হারাতে গেলে প্রথম এই উইকেটটা তুলতে হবে। না হলে কোনও আশা নেই।’’ দ্রুত যোগ করছেন, ‘‘এখন দেখছি, সিংহ আবার জেগে উঠেছে। তাই সকলে সাবধান। কোচ হিসেবে দ্বিতীয় ইনিংসে ফিরে এসেই বাংলাকে ফাইনালে নিয়ে গিয়েছে। বাংলার এই লড়াকু মানসিকতার নেপথ্যে ও-ই। আমি জানি, এখানেই ও থেমে থাকবে না।’’ অরুণের বাংলা নিয়ে আপনার পূর্বাভাস? ‘‘আগামী কয়েক বছরে বাংলার এই দলটার মধ্যে ট্রফি জেতার নেশা ঢুকিয়ে ছাড়বে ও। ঘরোয়া ক্রিকেটে সব চেয়ে লড়াকু দলগুলোর একটা হতে যাচ্ছে বাংলা। অন্যরা বুঝবে। সিংহকে জাগিয়েছ, এখন কেশর ফোলানো তো দেখতেই হবে!’’ সাবধান করে দিচ্ছেন শাস্ত্রী।

আশির দশকে খেলা বহু ক্রিকেটার মনে করেন, বঙ্গ ক্রিকেটে মেরুদন্ড যোগ করেছেন অরুণ লাল-ই। সেই সময়ে বাংলা বনাম মুম্বই বা পূর্বাঞ্চল বনাম পশ্চিমাঞ্চল দ্বৈরথে বহুবার টক্কর হয়েছে অরুণের সঙ্গে শাস্ত্রীর। সব চেয়ে বিখ্যাত হয়ে আছে ১৯৮৬ -র অক্টোবরে পুণেতে দলীপ ট্রফির সেমিফাইনাল। পূর্বাঞ্চল বনাম পশ্চিমাঞ্চলের ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করা বাংলাকে টানেন অরুণ। ৫৬১ রানের মধ্যে একাই করেন ২৮৭। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অরুণের সর্বোচ্চ স্কোর। কিন্তু ‘ফাইটার’ লালের সেই অবিশ্বাস্য ইনিংসের পরেও ম্যাচ ছিনিয়ে নিয়ে যায় পশ্চিমাঞ্চল। কোনও এক তরুণ রবি শাস্ত্রী করেন ১৭৬ নট আউট। মিডল-অর্ডারে নেমে সুনীল গাওস্করের করেন ৯২।

সেই ম্যাচের কথা তুলতে শাস্ত্রী অবশ্য বলে দিলেন, ‘‘কখনও আমি জিতেছি, কখনও অরুণ। কিন্তু আজও ওর লড়াকু মনোভাবের ভক্ত আমি।’’ শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, ফেলে আসা সেই পুরনো দিনের রঞ্জি বা দলীপ ট্রফি দ্বৈরথের সোনালি দিনগুলোই যেন শাস্ত্রীকে মনে করিয়ে দিয়েছে এ বারের ফাইনাল। পুরনো দিনের একটা কাহিনিও মনে পড়ছে ভারতের ‘চ্যাম্পিয়ন অফ চ্যাম্পিয়ন্স’ প্রাক্তন অলরাউন্ডারের। এক বার মুম্বই বড় রান তোলার পরে ড্রেসিংরুমে হাসি-ঠাট্টায় মেতেছিলেন অনেকে। শাস্ত্রী ধমক দিয়ে তাঁদের বলেন, ‘‘তোমাদের কি মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে নাকি? আগে অরুণ লালের উইকেট নাও, তার পরে দাঁত বার করবে।’’ মাঠে প্রতিপক্ষ এবং সতীর্থ হিসেবে দেখা হওয়া ছাড়াও কমেন্ট্রি বক্সে পাশাপাশিও বলেছেন তাঁরা। অরুণ যে ভাবে জীবনযুদ্ধে ক্যানসারকে হারিয়ে ফিরে এসেছেন, সেটাও শাস্ত্রীয় মতে সেরা অনুপ্রেরণা!

কী অধিনায়ক, কী কোচ হিসেবে বরাবর তরুণ ক্রিকেটারদের নেতৃত্ব দিয়ে সফল হয়েছেন শাস্ত্রী। ১৯৯৪-এ রঞ্জি ফাইনালে উঠেছিল বাংলা। অমল মুজুমদার, যতীন পরাঞ্জপে, সাইরাজ বাহুতুলের মতো তরুণ, অনভিজ্ঞদের নিয়ে বাংলাকে হারিয়ে রঞ্জি জিতে নেয় শাস্ত্রীর মুম্বই। একই নেতৃত্ব গুণ তিনি দেখতে পান অরুণের মধ্যেও। বাংলার বর্তমান দলে তারুণ্য বেশি। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে শাস্ত্রীর পর্যবেক্ষণ, ‘‘রঞ্জি ফাইনালে মোটেও হারেনি বাংলা। বরং দেখিয়েছে, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়ে কী ভাবে হার-না-মানা মনোভাব দেখাতে হয়। আর একটা কথা শুনুন, অনেক দল ও রকম চ্যালেঞ্জিং পিচে ৪২৫ তাড়া করতে নেমে ৩৮০ পর্যন্ত পৌঁছনোর সাহসই দেখাতে পারবে না। এই সাহসটারই নাম অরুণ লাল।’’ তাঁর পর্যবেক্ষণ, ‘‘সৌরাষ্ট্র খুব ভাল খেলে জিতেছে। গত কয়েক বছরে ওরা দারুণ পারফর্ম করেছে ঘরোয়া ক্রিকেটে। ওদের সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দিয়েও বলছি, শেষ দিন সকালে অনুষ্টুপ (মজুমদার) আউট না হলে ফাইনাল জেতে বাংলাই।’’

সৌরাষ্ট্র কোচ কারসন ঘাউড়িও তাঁর খুব ঘনিষ্ঠ। তাই তাঁর সাফল্যেও খুশি শাস্ত্রী। ‘‘আমি কারসন ঘাউড়ির সঙ্গে খেলেছি। দারুণ মানুষ। কোচ হিসেবেও অনেক অবদান রয়েছে। রঞ্জি ট্রফি ওঁর পরিশ্রম, নিষ্ঠার ফল। প্রার্থনা করব, অরুণও যেন ওর সাধনা, সংকল্পের পুরস্কার পায়। রঞ্জি ফাইনাল দেখিয়ে দিল, কোচিংয়ে বয়সের কোনও উর্দ্ধসীমা হয় না।’’ দশ নম্বর থেকে ওপেনারে উন্নীত হওয়া লড়াকু ক্রিকেটারের সংযোজন, ‘‘আমি জানি, অরুণ ফিরবে বাংলা দল নিয়ে সামনের বার। রঞ্জি জেতার স্বপ্ন এখানেই ছাড়বে না ও।’’ তার পরেই যেন ফিরে গেলেন নিজের খেলার দিনে। বিড় বিড় করে উঠলেন, ‘‘সিংহ জেগে উঠেছে ভাই, তৈরি থাকো সবাই!’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy