লড়াকু ১০০-র পথে সুদীপ চট্টোপাধ্যায়।
দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করার প্রবণতাটা যেন বাংলার ক্রিকেটারদের মধ্যে দিন দিন বাড়ছে।
কয়েক দিন আগে অশোক দিন্দার ঘাড়ে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে পাঁচ-পাঁচটা উইকেট তোলার ঘটনা নিশ্চয়ই কেউ ভুলে যাননি। এ বার সেই তালিকায় চলে এলেন সুদীপ চট্টোপাধ্যায়।
হ্যামস্ট্রিংয়ে যন্ত্রণা ও ভবিষ্যতের ঝুঁকি— দুটো নিয়েই প্রায় সারা দিন ধরে ব্যাট করলেন এই তরুণ। সেঞ্চুরিও করলেন। আর তাঁর এই বহু কষ্টার্জিত সেঞ্চুরির উপর ভর করেই বাংলা তামিলনাড়ুর বিরুদ্ধে মোটামুটি ভাল জায়গায়। প্রথম ইনিংসে ৩৩৭ অল আউট। যার পর তামিলনাড়ু ব্যাট করতে নেমে ৬০-১।
রবিবার সতীর্থদের কাঁধে ভর দিয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল যাঁকে, সেই সুদীপকে পরের দিন সকালেই মাঠে ব্যাট হাতে দেখাটাই বেশ অবাক করার মতো ঘটনা। ক্রীড়া চিকিৎসকরা বলে থাকেন, হ্যামস্ট্রিং সমস্যা হলে অন্তত সাত দিনের বিশ্রাম ছাড়া কোনও উপায় নেই। অথচ সুদীপের ওই অবস্থায় মাঠে নেমে সেঞ্চুরি! আশ্চর্য ছাড়া কিছুই না। সত্যিই মনে হচ্ছে বাংলার ক্রিকেটারদের মধ্যে ব্যথাকে মোটিভেশন করে ভাল পারফরম্যান্স দেখানোর প্রবণতাটা যেন ক্রমশ বাড়ছে।
সোমবার সন্ধ্যায় যখন রাজকোট থেকে ফোনে কথা বলছিলেন সুদীপ, তখনও যন্ত্রণাটা যেন তাঁর গলায় পাওয়া যাচ্ছিল। বললেন, ‘‘খুব কষ্ট করে ইনিংসটা খেললাম। কিন্তু এ ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। এই ইনিংসটা না খেললে চলত না। তাই যন্ত্রণা নিয়েই খেলছিলাম। একে ওই উইকেট। তার উপর ব্যথা, সব মিলিয়ে বেশ কঠিন পরিস্থিতি ছিল আজ আমার পক্ষে। চেষ্টা করেছিলাম সিঙ্গলস যত কম নেওয়া যায়। তবু যে দলকে কিছু রান দিতে পেরেছি, এটাই ভাল।’’ কী করে এত কম বিশ্রাম পেয়ে এ দিন ফের ব্যাট করতে নামলেন? সুদীপ বলছিলেন, ‘‘আমি রবিবারই ঠিক করে নিয়েছিলাম, আজ খেলব। রবিবার ফিজিওর সঙ্গে অনেক সময় কাটিয়েছি। আইস-বাথ, আইস-প্যাক, নানা রকম ট্রিটমেন্ট নিয়েছি।’’
পায়ের ব্যথায় যে তিনি বেশ সমস্যায়, তা বিপক্ষের বেশ ভালই জানা ছিল। তাই সুদীপ ব্যাট করতে নামার পরেই ফিল্ডিং ছড়িয়ে দেয় তামিলনাড়ু। যাতে তিনি বেশি করে শর্ট রান নেওয়ার চেষ্টা করেন। ক্রিকেটের যুদ্ধে দয়া বলে যে কিছুই নেই। বাধ্য হয়েই তাঁকে শর্ট রান বেশি নিতে হচ্ছিল। নিষ্প্রাণ উইকেটে যে শটও বেশি মারা যাচ্ছিল না। তবে দমে যাননি। বেশি জোরে ছুটতে পারছিলেনও না। ফলে উইকেটে পড়ে থাকতে হচ্ছিল বেশি। সবচেয়ে জোরে দৌড়ন সেই রানটাতেই, যেটাতে তিনি একশোয় পৌঁছন। শর্ট রান নিতে তাঁকে এই বাধ্য করা নিয়ে সুদীপ বলেন, ‘‘ওরা তো এটা করবেই। জানতামও। আমার যে কোনও উপায়ও ছিল না, তাও জানতাম। তাই মনের জোর আর যন্ত্রণা সহ্য করেই লড়ে গেলাম।’’
একশো ছোঁওয়ার পর আউট হয়ে ফিরে আসার পর তাঁর পায়ের কী অবস্থা, তা জানতে চাইলে দলের এক সাপোর্ট স্টাফ বলেন, ‘‘এখনও যে ও ভাল আছে, তা নয়, কিন্তু ওকে আমরা ভাল রাখার চেষ্টা করছি। ও নিজেও ভাল থাকার চেষ্টা করছে। প্রচণ্ড মনের জোর ছেলেটার।’’
যা খবর, মঙ্গলবার সম্ভবত ফিল্ডিং করতে নামবেন না সুদীপ। ফলে আরও কিছুটা বিশ্রাম পেয়ে যাবেন তিনি। এ বার কাজটা তো বোলারদের। বললেন, ‘‘বোর্ডে ৩৩৭ রানটা এই উইকেটে খারাপ নয়। তবে আমাদের বোলাররা যদি ভাল বল করে, তবেই প্রথম ইনিংসে লিড নিতে পারব আমরা। মঙ্গলবার প্রথম সেশনটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’’
সুদীপের যন্ত্রণার দাম এখন অশোক দিন্দা, প্রজ্ঞান ওঝারা দিতে পারেন কি না, সেটাই দেখার। সোমবার বিকেলে অবশ্য তার কোনও ইঙ্গিত নেই। ২১ ওভার বল করে মাত্র একটা উইকেট তুলতে পেরেছে বাংলা। তাও দিন্দার সৌজন্যে।
তবে মঙ্গলবার নতুন সকাল, নতুন লড়াই। সেই লড়াইয়ে কে জিতবে, তার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে সুদীপের এই অদম্য লড়াই দাম পাবে কী না, তার উত্তর।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলা ৩৩৭ (সুদীপ ১০০, অগ্নিভ পান ৫৯, মনোজ ৫৬, বিগনেশ ৪-৭০), তামিলনাড়ু ৬০-১ (অভিনব মুকুন্দ ১৯ ব্যাটিং)।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy