মরিয়া: নিউজ়িল্যান্ডের ব্যর্থতা ভুলতে চান পুজারা। ফাইল চিত্র
অস্ট্রেলিয়া সফরে টেস্ট সিরিজ জেতার পরে ভারতীয় দলে তাঁর নামকরণ হয়েছিল ‘হোয়াইট ওয়াকার’। বিখ্যাত ওয়েব সিরিজ ‘গেম অব থ্রোন্স’-এ তাঁদের সহজে পরাস্ত করা যেত না। আগুন ও ‘ড্রাগনগ্লাস’ দিয়ে বানানো বিশেষ ছুরি ব্যবহার করে কেড়ে নেওয়া যেত তাঁদের প্রাণ।
কিন্তু নিউজ়িল্যান্ড সফরে এই বিশেষ অস্ত্রের ব্যবহার করতে হয়নি ট্রেন্ট বোল্ট, কাইল জেমিসনদের। ভারতীয় দলের ‘হোয়াইট ওয়াকার’-কে নির্বিষ করার জন্য ইনসুইং-ই ছিল যথেষ্ট। প্রথম টেস্টে দুই ইনিংসেই ফিরে গিয়েছিলেন এগারো রানে। দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে করেন ৫৪। দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হয় ২৪ রানে। কিন্তু কে এই ভারতীয় দলের ‘হোয়াইট ওয়াকার’? তিনি চেতেশ্বর পুজারা। রাজকোটে চিন্টু নামেই পরিচিত। দু’দিন আগেই ফিরেছেন নিউজ়িল্যান্ড থেকে। জেটল্যাগ এখনও পুরোপুরি কাটেনি। তবুও ম্যাচের দু’দিন আগে নিজেই গাড়ি চালিয়ে চলে এসেছেন অনুশীলনে। সতীর্থদের সঙ্গেও যেমন আন্তরিকতার সঙ্গে কথা বলছিলেন, মাঠকর্মীদর সঙ্গেও একই রকমের বন্ধুত্ব। তাঁর চোখমুখ দেখে বোঝা যাবে না, ফাইনালের আগে আদৌ কোনও স্নায়ুর চাপ অনুভব করছেন কি না। সৌরাষ্ট্রের প্র্যাক্টিস শেষে কোচ কার্সন ঘাউড়ি ও অধিনায়ক জয়দেব উনাদকাটের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ আলোচনার পরে চলে গেলেন জিমে।
২০ মিনিটের জিম সেশন থেকে বেরিয়ে আসার সময় মুখোমুখি হওয়া গেল পুজারার। শুরুতে রাজি না হলেও পরে কথা বলতে রাজি হয়ে গেলেন। হয়তো উপলব্ধি করেন, নিউজ়িল্যান্ডে ব্যর্থতার পরে কঠিন প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে। তাই শুরুতেই জানিয়ে দেওয়া হল, বাংলার বোলারেরা তাঁর দুর্বলতা ধরে ফেলেছেন। বোল্টদের মতো ইনসুইংয়ের ফাঁদেই ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে তাঁকে। পুজারার স্বীকারোক্তি, ‘‘দ্বিতীয় টেস্টে খুব ভাল বলে আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে বোল্ট। প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে নিজের ভুলেই বোল্ড হয়েছি। কিন্তু মনে করি না, এই পর্যায়ে এই সব নিয়ে আর ভাবতে হবে। দেশের বাইরে এত ক্রিকেট খেলেছি। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ায় আমাকে এই ভাবেই পরাস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছিল। রান করে প্রমাণ করেছি।’’ যোগ করেন, ‘‘নিউজ়িল্যান্ডেও শুরুটা ভাল করছিলাম। কিন্তু বড় রান আসেনি।’’
ক্রিকেটপ্রেমীরা বলছেন, লড়াইটা হতে চলেছে বাংলার পেস-ত্রয়ী বনাম পুজারা। কিন্তু তিনি নিজে কী বলছেন? ‘‘এ ধরনের বড় ম্যাচ ব্যক্তি বনাম ব্যক্তি হতে পারে না। লড়াইটা দু’টি দলের মধ্যে। তবে ঈশানরা ভাল বল করেছে। যে কোনও পরিস্থিতির জন্যই তৈরি থাকতে হবে।’’
পুজারা যদিও আত্মবিশ্বাসী, বোল্টদের সামলে আসার পরে ঈশানদের সামলানো অনেকটাই সহজ। তা ছাড়াও কাউন্টিতে মে মাসের স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়ায় সুইং সামলানোর পরীক্ষা দেওয়া পুজারার কাছে মুকেশ কুমার, আকাশ দীপেরা নিতান্তই সাধারণ। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৫ হাজারের উপর রান করা পুজারার কথায়, ‘‘বিষয়টি সহজ বলতে চাই না। কিন্তু কঠিন পরিস্থিতিতে বিশ্বের সেরা বোলারদের সামলে আসার পরে কিছুটা সুবিধা তো হবেই। তবুও এ ধরনের ‘হাই ভোল্টেজ’ ম্যাচে কখন কী হয় বলা যায় না।’’
পুজারার মতে, এটাই সব চেয়ে বড় সুযোগ রঞ্জি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার। গত সাত বছরে চার বার ফাইনাল খেলা দলের মূল ভরসা বলছিলেন, ‘‘প্রত্যেকে আত্মবিশ্বাসী। দলের মধ্যে ইতিবাচক মানসিকতা তৈরি হয়েছে। আশা করি, খুবই উত্তেজক ম্যাচ হবে। ঘরের মাঠে ফাইনাল খেলার অনুভূতিই অন্য রকমের।’’
ভারতীয় দলে তাঁর প্লে-স্টেশন সঙ্গী ঋদ্ধিমান সাহা। নিউজ়িল্যান্ডে থাকাকালীন দু’জনেই চোখ রেখেছিলেন নিজেদের সেমিফাইনালের দিকে। ঋদ্ধির সঙ্গে কথাও হয়েছিল ফাইনাল নিয়ে। ‘‘আমরা আলোচনা করছিলাম কোথায় ফাইনাল হবে। ঋদ্ধিই বলল, রাজকোটে খেলতে আসছে।’’
প্রিয় বন্ধুর দ্বিতীয় সন্তানলাভের খবর শুক্রবার রাতেই পেয়েছেন পুজারা। ঋদ্ধিকে তাঁর বার্তা, ‘‘অভিনন্দন বন্ধু। জানি এই অনুভূতি কতটা সুখের। নিউজ়িল্যান্ডে থাকাকালীন আমাদের জানিয়েছিল, দ্বিতীয় সন্তান আসতে চলেছে ওদের পরিবারে। রঞ্জি ফাইনালে নামার আগে বিশেষ উপহার ঋদ্ধিকে আরও উদ্বুদ্ধ করবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy