উচ্ছ্বাস: পুজারাকে ফিরিয়ে শূন্যে লাফ মুকেশ কুমারের। মঙ্গলবার রাজকোটে রঞ্জি ট্রফি ফাইনালে। সিএবি মিডিয়া
হোলি মানেই আনন্দ। হোলি মানেই রংয়ের উৎসব। হোলি মানেই প্রিয়জনদের সঙ্গে ভাল সময় কাটানোর সুযোগ। মঙ্গলবার রাজকোটের এসসিএ স্টেডিয়ামে সকাল থেকেই উৎসবের মেজাজ। গ্যালারিতে রং মেখে ভিড় করেছিল বেশ কিছু পরিবার। সৌরাষ্ট্রের ড্রেসিংরুমে ম্যাচের মধ্যেই চলল রং খেলা। চা-বিরতির সময় অধিনায়ক জয়দেব উনাদকাট লাল-আবির মেখে বেরিয়ে এলেন মাঠে।
কিন্তু বাংলা শিবিরে হোলির প্রভাব কতটা পড়ল, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। প্রথম দিন বিপক্ষের পাঁচ উইকেট ফেলে দেওয়ার পরে দ্বিতীয় দিন পড়ল মাত্র তিন উইকেট। দিনের শেষে আট উইকেট হারিয়ে সৌরাষ্ট্রের রান ৩৮৪। নেপথ্যে অর্পিত বাসবড়া ও চেতেশ্বর পুজারার ১৪২ রানের জুটি।
প্রথম দিন আট ওভার ব্যাট করার পরে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান পুজারা। দলীয় সূত্রে জানানো হয় তাঁর গলায় সংক্রমণ হয়েছে। সোমবার সকাল থেকেই অসুস্থবোধ করেন। ছয় নম্বরে ব্যাট করতে নেমে উপলব্ধি হয়, তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। আহত ও অবসৃত অবস্থায় মাঠ ছাড়তে হয় তাঁকে। তিনিই দ্বিতীয় দিন ঢাল হয়ে দাঁড়ালেন বাংলা ও সৌরাষ্ট্রের মাঝে।
পুজারার ব্যাটিংয়ে আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিল স্পষ্ট। ২৩৭ বল টিকে থাকার পরে তাঁর নামের পাশে মাত্র ৬৬ রান। সাড়ে পাঁচ ঘণ্টারও বেশি ক্রিজে টিকে থেকে কেন এত মন্থর ব্যাটিং? কী ছিল তাঁর পরিকল্পনা? সদুত্তর পাওয়া গেল না। অর্পিত বাসবড়া ১০৬ রানের দুরন্ত ইনিংস উপহার না দিলে দিনের শেষে আরও সমস্যায় পড়ত সৌরাষ্ট্র।
সেমিফাইনালের পরে ফাইনালেও দুরন্ত ইনিংস অভিজ্ঞ এই বাঁ-হাতির। দেবু মিত্রের ছাত্র বলছিলেন, ‘‘ফাইনাল জিতলে এই ইনিংসই হবে জীবনের সেরা।’’ বাংলা শিবির যদিও আত্মবিশ্বাসী। কোচ অরুণ লাল বলছিলেন, ‘‘চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য থাকলে চারশো রান করতেই হবে। আশা করি, এই পিচে তা অসম্ভব নয়।’’
প্রশ্ন উঠছে, সারা মরসুমে কত বার চারশো করেছে বাংলা? মাত্র এক বার। কল্যাণীতে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে মনোজ তিওয়ারির ট্রিপল সেঞ্চুরির সৌজন্যে ৬৩৫ রান করেছিল বাংলা। এক বারই পেরোয় সাড়ে তিনশো রানের গণ্ডি। কোয়ার্টার ফাইনালে ওড়িশার বিরুদ্ধে।
তবুও বোলারদের কিছুটা কৃতিত্ব প্রাপ্য। মন্থর পিচে পেসাররা যেখানে সাহায্যই পাচ্ছিলেন না, সেখানেও বিপক্ষকে সহজে রান করতে দেননি। সারা দিনে মাত্র ১৭৮ রান যোগ করে সৌরাষ্ট্র। প্রথম দুই সেশনে পড়েনি কোনও উইকেট। তবুও রানের গতি বাড়াতে দেখা যায়নি তাদের। লাঞ্চ পর্যন্ত খেলা হয় ৩৪.১ ওভার, যোগ হয় ৭২ রান। দ্বিতীয় সেশনে ২৪ ওভারে হয় ৬১ রান। ৪৫ রান হয় শেষ সেশনে তিন উইকেটের বিনিময়ে। কোচ তাই বলছিলেন, ‘‘বোলারদের এই পারফরম্যান্স ম্যাচ শেষে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।’’
পিচকে যদিও আরও ভাল ব্যবহার করতে পারত বাংলা। বল নিচু হয়ে যাচ্ছে দেখে, উইকেটের সোজাসুজি বল রাখা উচিত ছিল আকাশ দীপদের। শুকনো পিচে বলও দ্রুত পুরনো হয়ে যাচ্ছিল। রিভার্স সুইং হতে শুরু করেছিল নির্দিষ্ট সময়ের আগে। কিন্তু তার সদ্ব্যবহার করতে পারেননি আকাশ দীপ, মুকেশ কুমার, ঈশান পোড়েলরা।
পুজারা যে ইনসুইংয়ে সমস্যায় পড়েন তা জানতেন বাংলার বোলারেরা। বলের চকচকে দিক ঢেকে তাঁকে পরীক্ষায় ফেলতে পারতেন। আকাশদের বল কোন দিকে সুইং করবে তা চকচকে দিক দেখিয়ে আন্দাজ করতে না দিলেই পারতেন। একের পর এক আউটসুইং করিয়ে ইনসুইংয়ের জন্য তৈরি করা যেতে পারত। কিন্তু তা দেখা যায়নি। ক্রিজের গভীরতাও ব্যবহার করলেন না তাঁরা। মুকেশরা কয়েকটি ওভার রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে বল করে পিচে স্পাইকের ক্ষত তৈরি করতে পারতেন। সে ক্ষেত্রে ডান-হাতি ব্যাটসম্যানের বিরুদ্ধে ক্ষত ব্যবহার করে সফল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ত অফস্পিনার অর্ণব নন্দীর। কিন্তু তরুণ বোলারেরা সে ভাবে চিন্তা করেননি।
বাংলার স্পিনারদের অভিযোগ, পিচে বল ঘুরছে না। তা হলে অনুষ্টুপ মজুমদার কী করে এক হাত করে বল ঘোরালেন? ধরে নেওয়া যেতে পারে তিনি রিস্টস্পিনার, বল ঘোরানোর সুযোগ বেশি। কিন্তু ফিঙ্গারস্পিনারদের এতটা অসহায় দেখানোর কারণ ছিল কী?
শাহবাজ আহমেদ যদিও পুজারা ও বাসবড়ার জুটি ভেঙে বাংলা শিবিরে অক্সিজেন জোগালেন। দিনের শেষে আরও দুই উইকেট হারায় সৌরাষ্ট্র। প্রথম দিনে উইকেটহীন মুকেশের ঝুলিতে এখন দুই উইকেট।
বুধবার পিচ আরও আর্দ্রতা হারাবে। নির্বিষ হয়ে যাবেন পেসারেরা। কিন্তু অসমান বাউন্স কী করে সামলাবেন? অরুণ বলে গেলেন, ‘‘ব্যাটসম্যানেরা সেই পরীক্ষা দিতে তৈরি। আমি নিশ্চিত, উপরের সারির ব্যাটসম্যানেরা আর ব্যর্থ হবে না।’’
স্কোরকার্ড
সৌরাষ্ট্র ৩৮৪-৮ (১৬০)
সৌরাষ্ট্র (্প্রথম ইনিংস)
দেশাই ক পরিবর্ত বো শাহবাজ ৩৮•১১১
বারোট ক ঋদ্ধিমান বো আকাশ ৫৪•১৪২
বিশ্বরাজ বো আকাশ ৫৪•৯২
অর্পিত স্টা. ঋদ্ধিমান বো শাহবাজ ১০৬•২৮৭
শেল্ডন এলবিডব্লিউ বো ঈশান ১৪•১৫
পুজারা এলবিডব্লিউ বো মুকেশ ৬৬•২৩৭
চেতন ক ঋদ্ধিমান বো আকাশ ৪•৮
চিরাগ ন. আ. ১৩•৪৪
প্রেরক এলবিডব্লিউ বো মুকেশ ০•৪
ধর্মেন্দ্র ন. আ. ১৩•২২
অতিরিক্ত ২২ মোট ৩৮৪-৮ (১৬০)
পতন: ১-৮২ (দেশাই, ৩৭.৫), ২-১১৩ (বারোট, ৪৮.১), ৩-১৬৩ (বিশ্বরাজ, ৬৫.৩), ৪-১৮২ (শেল্ডন, ৬৮.৬), ৫-২০৬ (চেতন, ৮০.৫), ৬-৩৪৮ (অর্পিত, ১৪৩.৬), ৭-৩৫৮ (পুজারা, ১৫০.৩), ৮-৩৬৪ (প্রেরক, ১৫২.১)।
বোলিং: ঈশান পোড়েল ২৬-১০-৫১-১, মুকেশ কুমার ৩৮-৮-৮৩-২, শাহবাজ আহমেদ ৪৬-১৪-১০৩-২, আকাশ দীপ ৩০-৮-৭৭-৩, অর্ণব নন্দী ১৭-৩-৪৫-০, অনুষ্টুপ ৩-০-১২-০।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy