ক্ষুব্ধ: কিউরেটরের ভূমিকায় সন্তুষ্ট নন কোচ অরুণ। ফাইল চিত্র
রঞ্জি ট্রফি, নাকি পাড়ার ক্রিকেট? রাজকোটের এসসিএ স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার সকালে এই প্রশ্নই সবার মুখে মুখে। একেই প্রথম দিন থেকে প্রশ্নের মুখে রাজকোটের বাইশ গজ। দ্বিতীয় দিন আরও হাস্যকর পরিস্থিতি। রিজার্ভ আম্পায়ার না থাকায় স্থানীয় এক আম্পায়ারকে লেগ আম্পায়ারিংয়ের দায়িত্ব দিয়ে পরিচালিত হল ম্যাচ!
আশ্চর্য হচ্ছেন? বিষয়টি সে রকমই। সোমবার বিকেলে বিশ্বরাজ জাডেজা আউট হওয়ার পরে বাংলার কোনও এক ফিল্ডার আম্পায়ার শামশুদ্দিনের উদ্দেশ্যে বল ছোড়েন। খেলা বন্ধ থাকলে ম্যাচের বল থাকে আম্পায়ারের কাছেই। শামশুদ্দিন হয়তো অন্যমনস্ক ছিলেন। খেয়াল করতে পারেননি, তাঁর উদ্দেশ্যে ছোড়া হয়েছে বল। অজান্তেই আঘাত পান। মাঠেই বসে পড়েন। কোনও রকমে প্রথম দিন ম্যাচ পরিচালনা করে ফিরে যান হোটেলে।
রাতে অসম্ভব যন্ত্রণা শুরু হয় তাঁর তলপেটে। হাসপাতালে এন্ডোস্কোপি হওয়ার পরে তাঁকে এক সপ্তাহ বিশ্রাম নেওয়ার নির্দেশ দেন ডাক্তার। মঙ্গলবার সকালে তাই স্থানীয় আম্পায়ার পীযূষ কক্করকে দায়িত্ব দেওয়া হয় বোর্ড অনুমোদিত আম্পায়ার অনন্তপদ্মনাভনের সঙ্গে ম্যাচ পরিচালনা করার। কিন্তু বোর্ডের কোনও ম্যাচে স্থানীয় আম্পায়ার প্রথম আম্পায়ারের জায়গা নিতে পারেন না। বিপক্ষ দল প্রশ্ন তুলতেই পারে তাঁর নিরপেক্ষতা নিয়ে। অনন্তপদ্মনাভনকে তাই দু’প্রান্ত থেকে ম্যাচ পরিচালনা করার দায়িত্ব নিতে হয় পীযূষকে লেগ আম্পায়ারের জায়গায় দাঁড় করিয়ে।
অন্য দিকে, টিভি আম্পায়ার এস রবিও ‘অনফিল্ড’ আম্পায়ারের ভূমিকা পালন করতে পারেননি। কারণ, বোর্ড অনুমোদিত আম্পায়ার ছাড়া আংশিক ডিআরএস-এর সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। স্থানীয় আম্পায়ারকে সেই দায়িত্ব দিলে নিরপেক্ষতা বজায় থাকবে না। লাঞ্চের পরে শামশুদ্দিন টিভি আম্পায়ারের দায়িত্ব নেওয়ায় ম্যাচ পরিচালনা করেন এস রবি।
প্রশ্ন এখানেই যে, যদি অনন্তপদ্মনাভনও চোট পেতেন, সে ক্ষেত্রে রঞ্জি ট্রফি ফাইনালই কি বন্ধ হয়ে যেত? ভারতীয় বোর্ডের ক্রিকেট অপারেশন’স জেনারেল ম্যানেজার সৈয়দ সাবা করিম বলছিলেন, ‘‘রঞ্জি ট্রফির ম্যাচে চতুর্থ আম্পায়ার রাখার লিখিত নিয়ম নেই। এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হলে ম্যাচ রেফারি দু’দলের অধিনায়ককে জিজ্ঞাসা করেন, স্থানীয় আম্পায়ারকে ম্যাচ পরিচালনা করার দায়িত্ব দেওয়া হবে কি না। দু’দলের অনুমতি থাকলে তবেই মাঠে নামতে দেওয়া হয় স্থানীয় আম্পায়ারকে। তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি এলে কী করা উচিত, তা আলোচনাসাপেক্ষ।’’ প্রশ্ন তার পরেও থেকে যাচ্ছে। বোর্ড অনুমোদিত আম্পায়ারদের প্যানেলে ৪০জন আম্পায়ার রয়েছেন, যাঁরা এ ধরনের বড় ম্যাচ পরিচালনা করতে পারেন। সেই প্যানেলের দশজন বিভিন্ন প্রতিযোগিতার সঙ্গে যুক্ত। বাকি ৩০ জনের মধ্যে থেকে কি ফাইনালের জন্য একজনকে রিজার্ভ আম্পায়ার হিসেবে রাখা যেত না?
মঙ্গলবার রাতেই মুম্বই থেকে উড়িয়ে আনা হচ্ছে শামশুদ্দিনের পরিবর্তকে। তিনি যশবন্ত বার্দে। বুধবার সকাল থেকে তিনি অনন্তপদ্মনাভনের সঙ্গে ম্যাচ পরিচালনা করবেন।
এ দিকে পিচ নিয়েও উঠছে নানা প্রশ্ন। অরুণ লাল তো বলেই দিলেন, ‘‘রঞ্জির ফাইনাল খেলার যোগ্য নয় এই পিচ। দ্বিতীয় দিনের মধ্যে কী অবস্থা? একাধিক বল নিচু হয়ে যাচ্ছে। বোর্ডের এ বিষয়ে দেখা উচিত!’’ প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি ফাইনাল হওয়া উচিত নিরপেক্ষ মাঠে? অরুণ বলেছেন, ‘‘নিরপেক্ষ মাঠ বড় কথা নয়, দরকার নিরপেক্ষ কিউরেটরের। বোর্ডের এই ব্যাপারে নজর দেওয়া দরকার। ম্যাচের অন্তত ১৫ দিন আগে আসা উচিত কিউরেটরের। সত্যি বলতে, কিউরেটর তো ভাল কাজ করেনইনি।’’ বোর্ড অনুমোদিত পিচ প্রস্তুতকারক ম্যাচের তিন দিন আগে মাঠে এসেছিলেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এক দিনও পিচে জল দেননি। ফাইনালের মতো ম্যাচে কি তা হলে সৌরাষ্ট্রের পছন্দ অনুযায়ী পিচ তৈরি করলেন এল প্রশান্ত? মঙ্গলবার তাঁকে মাঠে দেখা যায়নি। প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে বলে, তিনি কি মাঠেই এলেন না?
এ বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করার মতো কাউকে দেখতে পাওয়া যায়নি। বোর্ডের কোনও কর্তাই উপস্থিত ছিলেন না। অথচ আইপিএল চলার সময় তাঁদের অভাব চোখে পড়ে না। রাজকোটে এসে পৌঁছয়নি ট্রফিও। শোনা যাচ্ছে তৃতীয় দিন ট্রফি এসে পৌঁছবে এসসিএ স্টেডিয়ামে। এ ধরনের কিছু ঘটনাই হয়তো বুঝিয়ে দেয়, রঞ্জি ট্রফির গুরুত্ব আর আগের জায়গায় নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy