সঙ্গীতা মণ্ডল। —নিজস্ব চিত্র
বুধবার চেন্নাই মেল যখন হাওড়া স্টেশনে ঢুকল, তখন ভোরের আলো সবে ফুটেছে। নিঃসঙ্গ এক যুবতী সেই ট্রেন থেকে নেমে হেঁটে গিয়ে বাস ধরে শিয়ালদহে পৌঁছলেন। সেখান থেকে ট্রেনে মথুরাপুর। তার পরে অটোরিক্সায় সওয়ার হয়ে বাড়িতে।
মেয়েটার ব্যাগে একটা স্বর্ণপদক। বিদেশের মাটিতে বিশ্বকাপ কবাডি চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য তিনি। পদক জিতে এ ভাবেই নিঃশব্দে ঘরে ফিরলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘির গিলারছাট গ্রামের সঙ্গীতা মণ্ডল। অবশ্য দাঁতে দাঁত চেপে মেয়েটির লড়াই আর খেলার মাঠে একের পর এক সাফল্য দেখে গ্রামের মানুষ অভ্যস্ত। বিশ্বকাপ জয়ের খবরে তাঁরা বেজায় খুশি। তবে সকলের একটাই প্রশ্ন, ‘‘এ বার কি চাকরি মিলবে?’’ এ প্রশ্ন সঙ্গীতার নিজেরও।
ছোট থেকেই কবাডির কোর্টের সঙ্গে সঙ্গীতার সখ্যতা। সাত বার জাতীয় প্রতিযোগিতায় খেলেছেন। দু’বারের রানার্স দলের সদস্য। ফেডারেশন কাপ, ওয়ার্ল্ড গেমসে জয়ী দলেরও সদস্য। মাস আড়াই আগে ‘ইন্টারন্যাশনাল প্রিমিয়ার কবাডি লিগে’ মেয়েদের প্রদর্শনী ম্যাচে মহীশূরের হয়ে খেলেন। তার পরেই বিশ্বকাপ দলে এ রাজ্যের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে জায়গা পান। বিশ্বকাপের আসরে এ বারই প্রথম প্রবেশ তাঁর। সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় ওই প্রতিযোগিতা হয়। মেয়েদের পাশাপাশি ভারতের ছেলেদের দলও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সেমিফাইনালে সঙ্গীতারা হারান হংকংকে। ফাইনালে তাঁদের কাছে পরাস্ত হয় তাইওয়ান। সোমবার সতীর্থদের সঙ্গে চেন্নাই পৌঁছন সঙ্গীতা। তার পরে ট্রেন ধরে রাজ্যে ফেরেন।
সাফল্যের শিখরে পৌঁছেও ক্ষোভ-অভিমান ঝড়ে পড়ে সঙ্গীতার গলায়। বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্যে কবাডির কর্মকর্তাদের মধ্যে বিভাজনে খেলাটার সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে। বিশ্বকাপে আমাকে যাতে না খেলানো হয়, সেই চেষ্টা চলেছে। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, খেলার স্বার্থে এই দলাদলি মেটান। সবাই এক হলে কবাডিতে বাংলাকে কেউ রুখতে পারবে না। না হলে কিন্তু বহু প্রতিভা শেষ হয়ে যাবে।’’ চেন্নাইতে সঙ্গীতা দেখেছেন, সতীর্থদের সেখানে কি ভাবে বরণ করা হয়েছে। আর খরচের ভয়ে তিনি হাওড়া স্টেশনে গাড়ি পাঠাতে নিষেধ করেছেন বাড়ির লোককে।
বছর সাতাশের সঙ্গীতার আক্ষেপ, একের পর এক সাফল্য সত্বেও চাকরি জোটেনি। তাই শুধু খেলার প্রতি মনোনিবেশ করলেই তাঁর চলে না। সংসার চালাতে ঠোঙা বানানো অথবা শাড়ি-সালোয়ারে পুঁথি বসানোর কাজ করতে হয়। চোটের ঝুঁকি থাকলেও খেপ খেলে বেড়াতে হয়। তাঁর কথায়, ‘‘মালয়েশিয়ার স্টেডিয়ামে যখন গায়ে জাতীয় পতাকা মুড়ে গলায় পদক আর হাতে ট্রফি নিয়েছিলাম, ভীষণ গর্ব হচ্ছিল। কিন্তু হোটেলে ফিরেই কান্ন পেয়ে গেল। পেট চালাতে আবার তো ঠোঙা বানাতে হবে। অনেকেই ভাল চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কেউ কথা রাখলেন কোথায়! গ্রামে ফিরেও তাই শুনতে হচ্ছে, এ বার চাকরিটা পাবি তো?’’
বলতে গিয়ে কান্নায় বুজে আসে চ্যাম্পিয়ন বঙ্গললনার গলা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy