জুটি: সোনা জেতার পরে কোচের সঙ্গে উচ্ছ্বসিত রাহি (বাঁ দিকে)। ছবি: টুইটার।
কুস্তিতে বিনেশ ফোগতের ইতিহাস গড়ার পরে ফের এশিয়ান গেমসে অনন্য নজির আর এক ভারতীয় মহিলার। শুটার রাহি স্বর্ণবাটের। মহারাষ্ট্রের মেয়ে বুধবার ২৫ মিটার এয়ার পিস্তলে তুমুল উত্তেজনাপূর্ণ লড়াইয়ের পরে সোনা জেতেন। শুধু তাই নয়, রাহি প্রথম ভারতীয় মহিলা শুটার হিসেবে এশিয়াড সেরা হওয়ার কৃতিত্ব দেখালেন।
১০ বছর আগে অলিম্পিক্সে অভিনব বিন্দ্রার সোনা জেতার নেপথ্যে ছিলেন কিংবদন্তি জার্মান কোচ গ্যাবি বিউলমান। এখনও পর্যন্ত অলিম্পিক্সে ব্যক্তিগত বিভাগে ভারতের এক মাত্র সোনা জয় এটি। একই ভাবে জাকার্তায় রাহির এশিয়া সেরা হওয়ার পিছনেও এক জার্মান কোচের হাত রয়েছে। তিনি প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এবং অলিম্পিক্স ব্রোঞ্জজয়ী মুংখবায়ার দরসুরেন। অভিনব বিন্দ্রার মতো তিনিও ২০০৮ বেজিং অলিম্পিক্সেই পদক জেতেন।
‘‘এক বছর ধরে উনি আমার কোচ। আমাকে মেয়ের মতো ভালবাসেন। ওঁর মেয়েও প্রায় আমার বয়সি,’’ সোনার পদক নিশ্চিত করেই কোচের দিকে ছুটে যাওয়া রাহির এই কথাতেই পরিষ্কার, তাঁর কৃতিত্বের নেপথ্যে কতটা ভূমিকা রয়েছে তাঁর কোচের। মঙ্গোলিয়া বংশোদ্ভূত কোচ দরসুরেন রাহির মধ্যে চ্যাম্পিয়নের মানসিকতা তৈরি করে দিতে পেরেছেন। সেটা প্রবল ভাবে দেখা গেল বুধবার শুটিং রেঞ্জেও।
২৭ বছর বয়সি কোলাপুরের ডেপুটি কালেক্টর রাহির সঙ্গে ফাইনালে টাই হয়ে গিয়েছিল তাইল্যান্ডের শুটার নাফসোয়ান ইয়াংপাইবুনের। দু’জনেই পেয়েছিলেন ৩৪ পয়েন্ট। ফলে কে চ্যাম্পিয়ন হবেন, ঠিক করতে খেলা গড়ায় শুট-অফে। এই রাউন্ডে তাইল্যান্ডের শুটার স্কোর করেন দুই এবং রাহি করেন তিন। নিশ্চিত হয়ে যায় তাঁর ঐতিহাসিক সোনা।
রাহি বলছিলেন, ‘‘কোচ নিজেও প্রচুর পদক জিতেছেন। তাই ওঁর প্রতিযোগিতা আর পারফরম্যান্স নিয়ে মানসিকতা অন্য রকম। সেটাই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। টেকনিক্যাল ব্যাপারের থেকেও এই জিনিসগুলো অনেক সময় বেশি গুরুত্ব পায়।’’
রাহির কাছে জাকার্তা ছিল প্রত্যাবর্তনের মঞ্চও। ২০১৪ কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জেতার পরে তিনি আর কোনও বড় প্রতিযোগিতায় পদক জিততে পারেননি। গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমসের আগেই কনুইয়ে চোট লেগেছিল তাঁর। সেটা আরও বড় আকার নেয় তার পরে। আরও দু’বছর ভোগায় রাহিকে। শেষ পর্যন্ত ২০১৬ সালে সাত মাস শুটিং রেঞ্জ থেকে দূরে থাকার পরে তিনি ঠিক করেন ব্যক্তিগত কোচ রাখবেন। কিন্তু সেখানেও দেখা যায় সমস্যা। ‘‘তখন জানতে পারলাম ২৫ বছরের খেলোয়াড় জীবনের শেষে উনি অবসর নিয়েছেন। গত বছর জুলাইয়ে প্রশিক্ষণ শিবিরে উনি আমার সঙ্গে ছিলেন। তার পরে ঠিক করি, ওঁকে ব্যক্তিগত কোচ রাখব। কিন্তু ওঁর যা বেতন সেটা দেওয়ার মতো ক্ষমতা আমার ছিল না, ’’ বলেন রাহি। সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘স্পনসরের কাছ থেকে আমি সাহায্য পাই। কিন্তু সেটাও যথেষ্ট ছিল না। তাই ঠিক করি গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমসে সোনা জেতার পরে যে আর্থিক পুরস্কার পেয়েছিলাম সেটাই কাজে লাগাব।’’
রাহির কোচ দরসুরেনও স্বীকার করে নেন, তাঁর ছাত্রীকে মানসিক ভাবে আরও শক্তপোক্ত করাটাই প্রথম কাজ ছিল তাঁর। ‘‘আমি ওর টেকনিক কিছুটা পরিবর্তন করেছি। পাশাপাশি আমি মানসিক দিক থেকেও পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছি। যখন ওকে কোচিং করানো শুরু করি, তখনই ও বড় মাপের শুটার। কিছু জিনিস পাল্টানো দরকার ছিল, সেটাই করেছি। আজ ফাইনালে কঠিন লড়াই হয়েছে। তবে ওকে আমি আগেই শুট-অফের জন্য তৈরি করেছিলাম।’’
এ বার রাহির লক্ষ্য কী? কোলাপুরের মেয়ে বলে দেন, ‘‘ফের পদক জয়ে ফিরে এসে দারুণ লাগছে। এর পরে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। সেখানে পদক জিতে অলিম্পিক্সের জন্য প্রস্তুত হব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy