কীর্তিমান: স্বপ্নপূরণ। অস্ট্রেলীয় ওপেন জিতে নাদাল।
ম্যাচটা শেষ হওয়ার পরেও যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না। এ ভাবেও ফিরে আসা যায়!
টিভিতে রবিবার প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার যে ফাইনাল দেখলাম সেটা যেন শুধু টেনিস কোর্টের নয়, জীবনেরও লড়াই। তিন-চার মাস আগেও যাকে চলাফেরা করতে হত ক্রাচে ভর করে। চোটের জন্য গত মরসুমে ছ’মাস প্রায় খেলতেই পারেনি। দেড় মাস আগেও নিজে জানত না মেলবোর্ন পার্কে নামতে পারবে কি না। করোনাতেও আক্রান্ত হয়েছিল। সে-ই কি না যুক্তরাষ্ট্র ওপেন জয়ী দানিল মেদভেদেভকে হারিয়ে ফের অস্ট্রেলীয় ওপেনের চ্যাম্পিয়ন! ফল ২-৬, ৬-৭ (৫-৭), ৬-৪, ৬-৪, ৭-৫। রাফায়েল নাদাল
তোমায় সেলাম!
সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন তো তাকেই বলে যে সব বাধা, ভবিষ্যদ্বাণীকে ভ্রান্ত প্রমাণ করে বিশ্বমঞ্চে শ্রেষ্ঠত্বের সিংহাসন ছিনিয়ে নেবে। যার লড়াই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রেরণা দেবে। নাদাল সে রকম এক জন মহানায়ক। যে ১৩ বছর পরে অস্ট্রেলীয় ওপেনে দ্বিতীয় বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি ২১তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে পেরিয়ে গেল রজার ফেডেরার, নোভাক জোকোভিচকে। এই ম্যাচটাকে বলা হচ্ছিল দুই প্রজন্মের দ্বৈরথ। পঁয়ত্রিশ বছর বয়সি নাদাল তার চেয়ে ১০ বছরের ছোট মেদভেদেভের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা কী ভাবে করে, সেটাই দেখতে মুখিয়ে ছিল বিশ্ব। রাশিয়ার ছেলেটা কিন্তু অঘটন প্রায় ঘটিয়ে ফেলেছিল প্রথম দুটো সেট দখল করে। ইন্টারনেটে দেখছিলাম, শেষ বার নাদাল দু’সেটে পিছিয়ে পড়েও গ্র্যান্ড স্ল্যামে জিতেছিল ২০০৭ সালে উইম্বলডনে।
এত বছর পরে সেটাই আবার করে দেখানো মুখের কথা নয়। তাও এমন একজনের কাছ থেকে, যে ক’দিন আগেই বলেছে, পায়ের চোটটা হয়তো বাকি খেলোয়াড়জীবনে তাঁর সঙ্গী হয়ে থাকবে। কারও কারও হয়তো ২০১২-র ফাইনালও মনে পড়ে যাচ্ছিল। জোকোভিচের কাছে প্রায় ছ’ঘণ্টার লড়ায়ের পরে নাদাল হারে ফাইনালে। কিন্তু এ দিনটা ওর ছিল। তৃতীয় সেট থেকেই শুরু হল নাদাল-ম্যাজিক। তৃতীয় সেট থেকে নাদাল যে ভাবে ফিরল সেটা কেউই ভাবতে পারেনি। আমিও না। ব্যাকহ্যান্ড এবং ফোরহ্যান্ড যা মেরেছে সেটা অকল্পনীয়। মানসিক ভাবে প্রচণ্ড শক্তিশালী না হলে এত চাপের মধ্যেও ও রকম লড়াই করা যায় না। তৃতীয় ও চতুর্থ সেট জিতে সমতা ফেরাল।
পঞ্চম সেটের পঞ্চম গেম ব্রেক করল নাদাল। এর পরে ১০ নম্বর গেমে ৪-৫, ০-৩০ থেকে ব্রেক করল মেদভেদেভ। এগারো নম্বর গেমে আবার ব্রেক করল নাদাল। পাঁচ ঘণ্টা খেলার পরে ওই চাপের মুখে এ ভাবে ধৈর্য রাখাটা নাদালের পক্ষেই সম্ভব। অনেকে জানতে চাইবেন এই নাদাল কোথায় থামবে? সেটা বলা কঠিন। তবে এই ফিটনেস ধরে রাখলে ফরাসি ওপেনে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের সংখ্যা ২২ করে ফেলবে নাদাল।
শুধু নাদালই নয় এই অস্ট্রেলীয় ওপেনে কিন্তু আরও একজনকে উঠে আসতে দেখা গেল। সে অ্যাশলে বার্টি। যে ১৯৭৮-এর পরে প্রথম অস্ট্রেলীয় হিসেবে ঘরের মাঠে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নজির গড়েছে শনিবার। অনেকে জানতে চাইছে সেরিনা উইলিয়ামস, মারিয়া শারাপোভার মতো মেয়েদের টেনিসের নতুন রানি বার্টিকেই বলা যায় কি না? আমার মনে হয়, এটা বলার মতো সময় এখনও আসেনি। মেয়েদের টেনিসে ধারাবাহিকতার অভাব একটা বড় সমস্যা। বিয়াঙ্কা আন্দ্রেস্কুর কথাই ধরা যাক। ২০১৯-এ যুক্তরাষ্ট্র ওপেন জেতার পরে সে রকম সাফল্য নেই এই তিন বছরে।
বার্টির কোর্ট গেম, সার্ভিস, ভলি খুব ভাল। এখন বিশ্বের এক নম্বরও। তাই মেয়েদের সিঙ্গলসে এই মুহূর্তে ও-ই এগিয়ে। কিন্তু দেখতে হবে এই ফিটনেস, ধারাবাহিকতা ও ধরে রাখতে পারে কি না। যেটা সেরিনা দেখিয়েছে বছরের পর বছর। তার পরেই সেরিনাদের সঙ্গে তুলনা করার কথা উঠবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy