জিতেও চোটের চিন্তা যাচ্ছে না নাদালের। ফাইল চিত্র
পেশাদার টেনিস গ্রহে আর থাকবেন না রাফায়েল নাদাল? টেনিস মহাতারকার কথায় তেমনই ইঙ্গিত মিলছে। চোট-আঘাতে জর্জরিত নাদাল এখন ফরাসি ওপেন খেলছেন। যা তাঁর প্রিয় বধ্যভূমি। কিন্তু দৃশ্যতই ধ্বস্ত লাগছে তাঁকে। অবসরের সময় কি ঘনিয়ে এল? নইলে তিনি স্বয়ং কেন বলবেন, ‘‘এখন সব ম্যাচই শেষ ম্যাচ ভেবে খেলছি!’’ যা নিয়ে শঙ্কিত প্রাক্তন গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ী তারকা ক্রিস এভার্টও।
অনুশীলনের সময় নড়াচড়া করতে কষ্ট হচ্ছে। থেকে-থেকে মোচড় দিয়ে উঠছে গোড়ালির ব্যথা। দোসর পাঁজরের চোট। জোড়া চোটে বিধ্বস্ত ২১ বারের গ্র্যান্ড স্ল্যাম চ্যাম্পিয়ন। সব সময় সঙ্গে রাখতে হচ্ছে ব্যক্তিগত চিকিৎসককে। যে লাল সুরকির কোর্টে তিনি একদা রজার ফেডেরারকে হেলায় হারিয়েছেন, সেখানে ২১ বছরের অনামী ফেলিক্স অগার আলিয়াসিমেকে হারাতে পাঁচ সেট খেলতে হয়েছে ফরাসি ওপেনের অবিসংবাদী সম্রাটকে। সাড়ে চার ঘণ্টার ম্যারাথন লড়াইয়ে শুধু নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে জিতেছেন নাদাল। উঠেছেন কোয়ার্টার ফাইনালে। সামনে ২২তম গ্র্যান্ড স্ল্যামের হাতছানি। কিন্তু জিতেও চোটের চিন্তা যাচ্ছে না তাঁর।
কোয়ার্টার ফাইনালে বিশ্বের এক নম্বর নোভাক জোকোভিচের বিরুদ্ধে ম্যাচ। হেরে গেলে সেই মহারণই কি নাদালের ‘ফেয়ারওয়েল ম্যাচ’ হতে চলেছে? জকোভিচের কাছে হেরে গেলে নাদাল কি টেনিস র্যাকেট তুলে রাখবেন চিরতরে?
আলিয়াসিমেকে ৩-৬, ৬-৩, ৬-২, ৩-৬, ৬-৩ ব্যবধানে হারিয়েছেন নাদাল। লাল সুরকির কোর্টে নাদালের থেকে কেউ সেট কেড়ে নিচ্ছেন, এমন ঘটনা প্রায় বিরল। কিন্তু রবিবারই সেটা ঘটল। এক বার নয়, দু-দু’বার। নাদাল এই নিয়ে প্যারিসে ১১২তম ম্যাচ খেললেন। এর মধ্যে মাত্র ১২টি ম্যাচে প্রথম সেট হারিয়েছেন তিনি। পাঁচ সেটের ম্যাচ খেলতে হয়েছে মাত্র তিন বার। এর মধ্যে একটি হল রবিবার। তার কারণ কি শুধু আলিয়াসিমের দক্ষতা? নাকি তাঁর কোচ টোনি নাদালের ‘মগজাস্ত্র’? যিনি সম্পর্কে রাফায়েল নাদালের কাকা এবং ভাইপোর দীর্ঘ দিনের কোচ।
না কি চোটে জর্জরিত নাদালের বিদায়ের ঘণ্টাধ্বনি শুরু হল সেই ম্যাচেই? চার দিন পরে ৩৬ বছর বয়স হতে চলা নাদাল কি শুনতে পাচ্ছেন সেই ধ্বনি? নইলে ম্যাচ জিতেও কেন নাদাল বলবেন, কবে অবসর নেবেন, তা তিনি নিজেও বুঝতে পারছেন না! এখনও তাঁর বাঁ-হাতের র্যাকেট থেকে বেরোনো এক একটা টপ স্পিন বিপক্ষকে ঘোল খাইয়ে ছাড়ে। এখনও যিনি হারার আগে হার মানেন না। এখনও তো টেনিস দুনিয়া ভোলেনি ফেডেরার-জোকোভিচের বিরুদ্ধে তাঁর বিবিধ রূপকথা।
ম্যাচ জিতে সাংবাদিক সম্মেলনে নাদাল বলেছেন, ‘‘কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছি। আমি যে আরও একটা বছর ফরাসি ওপেনে খেলতে পারছি, সেটাই উপভোগ করছি। সত্যি কথা বলতে, যে ম্যাচটা খেলছি সেটাই আমার কেরিয়ারের শেষ ম্যাচ কি না, আমি জানি না। এমনই অবস্থা! পায়ের চোট ভোগাচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে আমার কেরিয়ারে কী হবে জানি না। তাই আমি শুধু নিজের খেলাটা উপভোগ করতে চাইছি। স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার জন্য যতটা সম্ভব লড়াই করার চেষ্টা করছি। দেখা যাক!’’
নাদালের কথা থেকে অবসরের ইঙ্গিত পাচ্ছিন ক্রিস এভার্টের মতো প্রাক্তন গ্র্যান্ড স্ল্যাম চ্যাম্পিয়ন। নাদালের সাংবাদিক সম্মেলনের প্রেক্ষিতে ক্রিস বলেছেন, ‘‘খুব উদ্বেগের কথা। ৩৫-৩৬ বছর বয়সে প্রতি দিন ম্যাচ খেলার ধকল নেওয়া সত্যিই কঠিন। আমিও ৩০ বছরের পরেই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। প্রতি দিন সকালে উঠে অনুশীলনে যাওয়ার সেই তাগিদ পেতাম না। তাগিদ হারিয়ে গেলে এক জন ক্রীড়াবিদের জীবনে আর কিছু থাকে না। কারণ এই তাগিদটাই সাফল্যের দিকে নিয়ে যায়। নাদালের কথা শুনে সেটাই মনে হচ্ছে।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy