প্রতিজ্ঞ: করোনা অতিমারির জন্য ধাক্কা খেয়েছে প্রস্তুতি। তারই মধ্যে নিজেকে উজাড় করে দিতে তৈরি প্রণতি। ছবি টুইটার।
গ্রামের বাড়িতে কখনও দুটো গাছের মাঝে বাঁশ বেঁধে, কখনও বা একটা টুলের সাহায্যে মহড়া চালিয়ে যাচ্ছিলেন গত দেড় বছর ধরে। মেদিনীপুরের পিংলা গ্রামে এর চেয়ে ভাল পরিকাঠামো আর কিছু ছিল না।
তার পরে আসে টোকিয়ো অলিম্পিক্সের ছাড়পত্র। অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতি এবং প্রতিকূলতার মধ্যে নিজেকে তৈরি করে আজ, বৃহস্পতিবার দিল্লির উড়ান ধরবেন বাংলার জিমন্যাস্ট প্রণতি নায়েক। সেখান থেকে ১৭ তারিখ উড়ে যাবেন টোকিয়োয়। অলিম্পিক্সের নামার জন্য।
যে লড়াইয়ে প্রণতির অস্ত্র হল সলমন খানের সিনেমার গান এবং দীপা কর্মকারের পরামর্শ!
টোকিয়ো অলিম্পিক্সে আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক্সের অলরাউন্ড বিভাগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন প্রণতি। পাঁচ বছর আগে, ২০১৬ সালের রিয়ো অলিম্পিক্সে যে রকম করেছিলেন দীপা। সাড়া ফেলে দেন অলিম্পিক্সে চতুর্থ হয়ে। টোকিয়ো যাওয়ার আগে সেই দীপার সঙ্গেই বেশ কয়েক বার কথা বলেছেন প্রণতি। এবং পেয়েছেন মূল্যবান পরামর্শ।
কী কথা হয়েছে দীপার সঙ্গে? টোকিয়ো রওনা হওয়ার আগে আনন্দবাজারকে প্রণতি বলছিলেন, ‘‘দিদি আমাকে নিয়মিত পরামর্শ দিয়েছে। কী রকম পরিস্থিতির মধ্যে আমাকে পড়তে হতে পারে, তার ইঙ্গিত দিয়েছে। পাশাপাশি একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছে।’’ কী সেটা? প্রণতি বললেন, ‘‘আমাকে ফ্লোর এক্সারসাইজ় নিয়ে পরামর্শ দিয়েছে। দিদি বলেছে, আগের বার ফ্লোরের মিউজ়িক নিয়ে আমার একটু সমস্যা হয়েছিল। দেখিস, তোর যেন না হয়।’’ ফ্লোর এক্সারসাইজ়ের সময় নিজের পছন্দ মতো নেপথ্য মিউজ়িক বেছে নিতে পারেন জিমন্যাস্টরা। প্রণতি বেছে নিয়েছেন একটি বিশেষ গান।
কী গান বেছেছেন প্রণতি? এই মুহূর্তে ভারতের এক নম্বর জিমন্যাস্ট জানিয়েছেন, টোকিয়োয় তিনি যখন ফ্লোরে নামবেন, তখন নেপথ্যে চলবে সলমন খানের সিনেমার গান— ‘মাসাল্লাহ, মাসাল্লাহ’। সলমন অভিনীত ‘এক থা টাইগার’ সিনেমা থেকে বেছে নেওয়া হয়েছে যে গানটি। কেন বাছলেন এই বিশেষ গানটি? বলিউড তারকার ভক্ত প্রণতি বলছেন, ‘‘এই গানটির তালে তালে ফ্লোর এক্সারসাইজ়ে আমি ভাল পারফর্ম করতে পারি। ছন্দটা আসে। যে কারণে এই গানটা বেছে নিয়েছি।’’
অলিম্পিক্সে টিম (অলরাউন্ড) এবং ব্যক্তিগত বিভাগে নামবেন প্রণতি। যে চারটি ইভেন্টে প্রণতিকে লড়াই করতে হবে, তা হল— ফ্লোর এক্সারসাইজ়, আনইভেন বার্স, ব্যালান্স বিম এবং ভল্ট। যে ভল্টে চতুর্থ হয়ে অল্পের জন্য রিয়োয় অলিম্পিক্স পদক হাতছাড়া করেছিলেন দীপা।
ত্রিপুরার জিমন্যাস্টের দৌলতে ‘প্রোদুনোভা’ ভল্টের নাম ছড়িয়ে গিয়েছিল ভারতের ঘরে ঘরে। টোকিয়োয় প্রণতির অস্ত্র কী হতে চলেছে? বাংলার জিমন্যাস্ট একটা ব্যাপারের উপরে জোর দিতে চান। দেখতে চান, কোন ভল্টে তাঁর ‘ল্যান্ডিং’টা ঠিকঠাক হচ্ছে। বলছিলেন, ‘‘ডিফিকাল্টি রেট বাড়াতে গিয়ে আমি চোট লাগার ঝুঁকিটা কখনও নিতে পারি না। আমি দেখব, কোন ভল্ট দিয়ে ঠিকঠাক মাটিতে নামতে পারছি। সেটাই দেব।’’ টোকিয়ো যাওয়ার আগে প্রণতি দুটো ভল্টের উপরে জোর দিয়েছিলেন। ফ্রন্ট ৫৪০ এবং ব্যাক ৫৪০। ‘‘দেখা যাক, কী দাঁড়ায়,’’ বলছিলেন ভারতের এক নম্বর জিমন্যাস্ট।
ভারতের সাই কেন্দ্রগুলোর মধ্যে দিল্লিতেই অলিম্পিক্স মানের সমস্ত সরঞ্জাম আছে। সাধারণত, জিমন্যাস্টদের ট্রেনিং সেখানেই হয়। কিন্তু করোনা অতিমারির কারণে দিল্লি গিয়ে আর অনুশীলন করা হয়নি প্রণতির। মে মাসের আগে তো দমদমের আশেপাশে বাড়ি ভাড়া নিয়ে স্থানীয় ক্লাবে গিয়ে প্রস্তুতি সারতেন। অনলাইনে কোচ লক্ষ্মণ শর্মার কাছে ক্লাস করতেন। ৪ মে থেকে কলকাতা সাইয়ে অনুশীলন শুরু করেন তিনি।
কী অবস্থায় দেখছেন নিজেকে? প্রণতি বলছিলেন, ‘‘সত্যি বলতে কী, প্রায় দেড় বছরের প্রস্তুতি আমাকে দু’মাসে সারতে হল। লকডাউনের সময় পিংলায় গ্রামের বাড়িতে কোনও মতে অনুশীলন চালাতাম। তার পরে কলকাতার দিকে এসে ক্লাবগুলোয় গিয়ে। সাইয়ে মাস দুয়েক মতো অনুশীলন করার সুযোগ পেলাম। জানি, চ্যালেঞ্জটা কঠিন হতে চলেছে। কিন্তু নিজের সেরাটা দেওয়ার জন্য আমি তৈরি।’’ সাইয়ে দু’দফায় তিন-তিন ছ’ঘণ্টা অনুশীলন চলত প্রণতির।
প্রণতিকে যিনি ছোট থেকে তৈরি করেছিলেন, সেই জাতীয় জিমন্যাস্ট কোচ মিনারা বেগমকে আবার টোকিয়ো পাঠানো হচ্ছে না। এই নিয়ে ক্ষুব্ধ মিনারা বুধবার চিঠি দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এ দিন মিনারা বলেন, ‘‘আমি যে মেয়েটাকে তৈির করলাম, তার সঙ্গেই আমাকে অলিম্পিক্সে যেতে দেওয়া হল না। এই রকম অবিচার কেন হবে আমার সঙ্গে?’’
অলিম্পিক্সে তাঁকে লড়তে হবে সিমোনে বাইলসদের মতো কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে। প্রণতি কিন্তু ঘাবড়াচ্ছেন না। নিয়মিত ইনস্টাগ্রামে বাইলসদের ট্রেনিংয়ের ভিডিয়ো দেখছেন। আর মনে মনে একটা শপথ করেছেন— পরিস্থিতি যতই কঠিন হোক, নিজের সেরাটাই দেবেন টোকিয়োয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy