লড়াই: চ্যালেঞ্জের জন্য তৈরি থাকছেন মেহুলি (উপরে) ও আয়ুষি।
টার্গেট বোর্ড কারও ১০ মিটার দূরত্বে, কারও বা ৫০ মিটার। যে দূরত্ব তাঁদের সামনে এত দিন কখনওই বড় বাধা হয়ে ওঠেনি। কিন্তু হঠাৎ করে করোনাভাইরাসের
আক্রমণে সব বদলে গিয়েছে।
এখন আর শুধু ‘বুল’স আই’-এ গুলি লাগানোটাই তাঁদের সামনে একমাত্র চ্যালেঞ্জ নয়। চ্যালেঞ্জ, কোভিড-১৯ অতিমারির হানায় বদলে যাওয়া পরিস্থিতিকে সামলানো। তবে সেই চ্যালেঞ্জ সামলে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া বঙ্গ শুটাররা। যে তালিকায় আছেন মেহুলি ঘোষ, আয়ুষি পোদ্দারের মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রভাব দেখাতে শুরু করা শুটার থেকে বছর বারোর খুদে প্রতিভা অভিনব সাউ-রা।
করোনাভাইরাস কতটা ধাক্কা দিয়েছে বঙ্গ শুটিংকে? অনেকটাই, বলছেন শুটিংয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িয়ে থাকা ব্যক্তিত্বরা। বঙ্গ শুটারদের মধ্যে বেশির ভাগেরই বাড়িতে কোনও রেঞ্জ নেই, যেখানে তাঁরা শুটিং অনুশীলন করতে পারেন। অনেকে ‘স্ক্যাট’ নামক যন্ত্রের সাহায্যে বাড়িতে কিছুটা অনুশীলন করছেন। কিন্তু সেই সংখ্যাটাও নগন্য।
কতটা কঠিন হচ্ছে এই চ্যালেঞ্জ সামলানো? বঙ্গ শুটিংয়ের দুই মুখ কী বলছেন? এই মুহূর্তে বাংলার দুই সেরা শুটারের নাম মেহুলি এবং আয়ুষি। প্রথম জন ১০ মিটার এয়ার রাইফেল এবং দ্বিতীয় জন ৫০ মিটার রাইফেল থ্রি পোজিশনসে অলিম্পিক্সে ভারতকে প্রতিনিধিত্ব করার লড়াইয়ে আছেন। মেহুলি বলছিলেন, ‘‘বেশ কয়েক মাস হয়ে গেল আমি যে ভাবে অনুশীলন করতাম, সে ভাবে করতে পারছি না। যখন আবার প্রতিযোগিতায় নামব, তখন হয়তো শুটিংয়ের ফল অন্য রকম হবে। আর বন্দুক হাতে নিয়ে গুলি ছোড়ার অভাবটা অবশ্যই
টের পাচ্ছি।’’
আয়ুষিও যতটা সম্ভব বাড়িতেই শুটিং অনুশীলন চালাচ্ছেন। কিন্তু তার একটা অন্য সমস্যা আছে। বঙ্গ তনয়া বলছিলেন, ‘‘১০ মিটারের প্র্যাক্টিস কিছুটা করে নিতে পারছি। কিন্তু সমস্যা হল, ৫০ মিটার থ্রি পোজিশনস ইভেন্টটা তো আউটডোরে হয়। ওটার অনুশীলন একেবারেই হচ্ছে না।’’ আয়ুষির বাবা এবং ব্যক্তিগত কোচ পঙ্কজ পোদ্দার বলছিলেন, ‘‘আয়ুষির তিনটে ইভেন্ট বলে ওর সামনে চ্যালেঞ্জটা অনেক কঠিন। বাড়িতে এখন যতটা সম্ভব সিমুলেশন কোচিং করাচ্ছি। স্ক্যাট নামক যন্ত্রের সাহায্যে টার্গেট প্র্যাক্টিস হচ্ছে।’’
তবে দুই তরুণীই চ্যালেঞ্জ সামলে ঘুরে দাঁড়াতে বদ্ধপরিকর। মেহুলির মন্তব্য, ‘‘জানি না, দু’মাস কী এক বছরের শেষে কী হবে। কিন্তু যে কোনও চ্যালেঞ্জের জন্য নিজেকে তৈরি রাখছি।’’ আয়ুষির গলাতেও একই শপথের ইঙ্গিত। মেহুলির প্রশিক্ষক এবং প্রাক্তন অলিম্পিয়ান জয়দীপ কর্মকার বলছিলেন, ‘‘আমি কিন্তু আশাবাদী, এর পরেও আমাদের শুটারদের মান পড়ে যাবে না।’’
জাতীয় শুটিং এবং ‘খেলো ইন্ডিয়া’ গেমসে সব চেয়ে কম বয়সে পদকজয়ী বঙ্গ শুটার অভিনব সাউও সমস্যার মুখে। মাত্র ১২ বছর বয়সে সাড়া ফেলে দেওয়া এই শুটারের বাবা রূপেশ সাউ বলছিলেন, ‘‘ভারতীয় কোচ শুমা শিরুরের কাছে মুম্বইয়ে ট্রেনিং করছিল অভিনব। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে ওকে ফিরে আসতে হয়েছে। ফলে ট্রেনিংটা ধাক্কা খেয়ে গেল। এখন বাড়িতেই যতটা সম্ভব অনুশীলনের ব্যবস্থা করেছি।’’ তবে রাজ্য গেমসে পদকজয়ী আর এক জুনিয়র শুটার, প্রাক্তন তারকা অ্যাথলিট জ্যোতির্ময়ী শিকদারের ছেলে অভ্রজ্যোতি বলছে, ‘‘আমাদের বাড়িতে শুটিং রেঞ্জ আছে বলে খুব একটা সমস্যায়
পড়তে হচ্ছে না।’’
বাংলার অন্যতম নামী কোচ বিবাসন গঙ্গোপাধ্যায় মনে করেন, করোনাভাইরাস বড় ধাক্কা দিয়েছে বঙ্গ শুটিংকে। বিবাসন বলছিলেন, ‘‘সব চেয়ে বড় সমস্যা হল, অনুশীলনের অভাব। বাংলার পাঁচ থেকে আট শতাংশ শুটার হয়তো জায়গা আছে বলে বাড়িতে কিছুটা অনুশীলন চালাতে পারছে। কিন্তু বাকিদের বড় সমস্যা।’’ বিবাসনের আশঙ্কা, যখন প্রতিযোগিতা শুরু হবে, তখন এর ছাপ পড়তে পারে শুটারদের উপরে।
বাংলার শুটিং কিন্তু বরাবরই একটা জায়গা ধরে রেখেছে ভারতীয় ক্রীড়া মানচিত্রে। বঙ্গ শুটিংয়ের প্রথম তারকা ছিলেন হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশ্বকাপে প্রথম ভারতীয় হিসেবে অংশ নেন তিনি। প্রথম ভারতীয় শুটার হিসেবে ১৯৫২ সালের অলিম্পিক্সেও যোগ দেন। বঙ্গ শুটিংয়ের পরম্পরা বহন করেছেন পরিমল চট্টোপাধ্যায়, সোমা দত্ত, কুহেলি গঙ্গোপাধ্যায়রা। এর পরে বাংলাকে বড় সম্মান এনে দেন জয়দীপ কর্মকার। বিশ্বকাপে পদক জিতে এবং লন্ডন অলিম্পিক্সে চতুর্থ হয়ে। যে ব্যাটন এখন তুলে নিয়েছেন মেহুলিরা।
রাজ্য সংস্থার সচিব দেবকুমার সামন্ত বলছিলেন, ‘‘এ বছর রাজ্য শুটিং করা যাবে বলে মনে হচ্ছে না।’’ কবে থেকে ঠিকমতো অনুশীলন শুরু হবে ক্লাবগুলোতে, সে বিষয়েও নিশ্চিত নন তিনি। যদিও বালিতে জয়দীপ কর্মকার অ্যাকাডেমির একটা শাখায় সতর্কতা মেনে ট্রেনিং শুরু হয়েছে। এখন দেখার, মেহুলিরা করোনা-চ্যালেঞ্জ কী
ভাবে সামলান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy