Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
World Junior Athletics 2021

Shaili Singh: অর্থের অভাবে খালি পায়ে দৌড়নো ১৭ বছরের শৈলী এখন বিশ্ব জুনিয়র অ্যাথলেটিক্সে রুপোজয়ী

জন্মের পর থেকে বাবাকে দেখেনি সে। বোন এবং ভাইয়ের সঙ্গে বড় হয়েছে মায়ের কাছেই। ঝাঁসির মেয়ে শৈলী সিংহ অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।

শৈলী সিংহ।

শৈলী সিংহ। ছবি টুইটার

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২১ ১৪:১১
Share: Save:

জন্মের পর থেকে বাবাকে দেখেনি সে। বোন এবং ভাইয়ের সঙ্গে বড় হয়েছে মায়ের কাছেই। ঝাঁসির মেয়ে শৈলী সিংহ অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। মাত্র এক সেন্টিমিটারের জন্য লং জাম্পে সোনা পায়নি। কিন্তু রুপো পেলেও শৈলীর জন্য গর্বিত দেশ।

উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসিতে জন্ম শৈলীর। একার হাতেই দুই মেয়ে এবং এক ছেলেকে বড় করেছেন বিনীতা। দর্জির কাজ করে সংসার চালাতেন। তবে খেলাধুলোর ব্যাপারে আগ্রহ ছিল। সন্তানদের নিয়ে স্বপ্ন ছিল। কিন্তু সেই স্বপ্নের পথে বার বার অন্তরায় হয়ে দাঁড়াত অর্থের অভাবই। ছোটবেলা থেকে দৌড়তে ভাল লাগত শৈলীর। বলেছে, “স্কুলে খুব দৌড়তাম। জুতো কেনার টাকা ছিল না বলে খালি পায়েই দৌড়তাম। একদিন খবরের কাগজ পড়ে নির্বাচনী ট্রায়ালের কথা জানতে পারে মা। আমাকে বলে অংশ নিতে। প্রথমে ঝাঁসিতে এবং পরে লখনউয়ের কেডি সিংহ স্টেডিয়ামে ট্রায়াল দিই। এরপরেই লখনউয়ের স্পোর্টস হস্টেলে জায়গা পেয়ে যাই।”

লখনউয়ে শুরুতেই দাগ কাটতে পারেনি শৈলী। প্রথম জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা খেলে জুনিয়র ন্যাশনালসে। অনূর্ধ্ব-১৪ লং জাম্পে পঞ্চম হয়েছিল। বেশির ভাগেরই নজর ছিল পদকজয়ীদের দিকে। কিন্তু সেই প্রতিযোগিতায় একজনের নজরে পড়ে গিয়েছিল শৈলী। তিনি রবার্ট ববি জর্জ। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জজয়ী অঞ্জু ববি জর্জের স্বামী। নিজের অ্যাকাডেমির জন্য ছাত্রছাত্রীর সন্ধানে গিয়েছিলেন তিনি। পদক না জিতলেও শৈলীর দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মনোভাব এবং জেদ নজরে এসেছিল রবার্টের। পরের আর একটি প্রতিযোগিতায় শৈলীকে দেখে ঠিক করে নেন, একেই বেছে নেবেন।

সে প্রসঙ্গে অঞ্জু বলছেন, “সে বারও ও পদক জেতেনি। এত ছোটখাটো চেহারা ছিল যে আমরা দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম ও ঠিক করে খাবার পায় না। টেকনিকও ঠিক ছিল না। কিন্তু জেদ ছিল, সাফল্যের জন্য শরীরে যে স্ফূলিঙ্গ দরকার, সেটা ছিল। কোচেরা সেটাই খোঁজেন।” তবে মা-কে ছেড়ে বেঙ্গালুরুতে অ়ঞ্জুর কোচিংয়ে যোগ দেবেন কিনা সেটা নিয়ে চিন্তা ছিল। কিন্তু মায়ের কথাতেই বেঙ্গালুরু যেতে রাজি হয়ে যায় শৈলী। মা-ই ধার করে অর্থ জোগাড় করে বিমানে বেঙ্গালুরুতে পাঠান শৈলীকে।

অঞ্জু বলেছেন, “এখন আপনারা শৈলীকে দেখলেই আলাদা করে চিনতে পারবেন। লম্বা, স্বাস্থ্যবান হয়েছে। বিশ্বসেরা ক্রীড়াবিদ হওয়ার দিকে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে ও। প্রথমেই ওকে সঠিক খাবার দেওয়া হয়েছিল। এরপর আস্তে আস্তে ওজন তুলতে শেখানো হয়। ঠিক ডিমকে যে ভাবে তা দিয়ে ফোটানো হয়, ওর ক্ষেত্রেও তাই করা হয়েছিল।” কোভিডের কারণে বেঙ্গালুরুর সাই ক্যাম্পাস জুনিয়রদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। শৈলী এবং আরও সাতজনকে নিয়ে নিজের বাড়িতে যান অঞ্জু এবং রবার্ট। তাঁদের এক একরের জমিতে অনুশীলন করতে থাকেন। সেই জমিতে একটি গর্ত তৈরি করে সেখানে বালি ফেলে শৈলীর জন্য অনুশীলনের সুযোগ তৈরি করে দেন রবার্ট।

দীর্ঘদিনের সেই পরিশ্রমের ফল এই রুপোর পদক। অঞ্জুর ধারণা, শৈলী একদিন তাঁর রেকর্ড ভেঙে দেবেন। আপাতত সেই লক্ষ্যেই শৈলীকে তৈরি করতে চান এই দম্পতি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE