চ্যাম্পিয়ন: রোলঁ গ্যারোজে ট্রফি হাতে অ্যাশলে বার্টি। শনিবার। ছবি: রয়টার্স।
প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনাল জিততে ৭০ মিনিটও লাগল না অ্যাশলে বার্টির। ফরাসি ওপেনে শনিবার চেক প্রজাতন্ত্রের মার্কেতা ভন্ড্রোসোভাকে স্ট্রেট সেটে উড়িয়ে দিলেন অস্ট্রেলীয় তারকা। ফল ৬-১, ৬-৩। ২৩ বছর বয়সি বার্টি ২০১১ সালে সামান্থা স্তোসুরের যুক্তরাষ্ট্র ওপেন জয়ের পরে প্রথম অস্ট্রেলীয় খেলোয়াড় হিসেবে গ্র্যান্ড স্ল্যাম দখল করার কৃতিত্ব দেখালেন। শুধু তাই নয়, ৪৬ বছরের অপেক্ষাও মেটালেন তিনি। ১৯৭৩ সালে মার্গারেট কোর্টের পরে দ্বিতীয় অস্ট্রেলীয় মহিলা খেলোয়াড় হিসেবে ফরাসি ওপেন জিতে বার্টি বলেন, ‘‘অবিশ্বাস্য লাগছে। বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম কিছুক্ষণ। আজ নিখুঁত ম্যাচ খেললাম। নিজের উপর গর্ব হচ্ছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘অস্ট্রেলীয়দের জন্য ফরাসি ওপেন বরাবরই বিশেষ। স্যাম (স্তোসুর) আগে এখানে ট্রফি জেতার কাছাকাছি এসেছিল। আমার কাছে গত দু’সপ্তাহ স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।’’
বার্টির উত্থান চমকপ্রদ। পাঁচ বছর বয়েসে টেনিসে হাতেখড়ি। জুনিয়র খেলোয়াড় হিসেবে ২০১১ সালে উইম্বলডনে গার্লস সিঙ্গলস জেতেন। বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে দু’নম্বরেও উঠে এসেছিলেন সেই সময়। সিনিয়র হিসেবে যদিও তাঁর প্রথম সাফল্য আসে ডাবলসে। কেসি ডেলাকুয়ার সঙ্গে জুটি বেঁধে তিনটি গ্র্যান্ড স্ল্যামের ডাবলসের রানার্স হন। যার মধ্যে অস্ট্রেলীয় ওপেনও ছিল। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৬। এর পরে ২০১৪ সালের শেষ দিকে বার্টি ঠিক করেন টেনিস থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ছুটি নিয়ে ক্রিকেট খেলবেন। অথচ ক্রিকেটে তাঁর প্রথাগত কোনও প্রশিক্ষণ ছিল না। মেয়েদের বিগ ব্যাশ লিগ দল ‘ব্রিসবেন হিট’-এ সই করেন তিনি। প্রায় বছর দু’য়েক পরে ফেরেন টেনিসে। ২০১৬-তে। পরের বছরই বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম কুড়িতে উঠে আসেন। গত মরসুমে বার্টি প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম ডাবলস খেতাব জিতেছিলেন যুক্তরাষ্ট্র ওপেনে। সঙ্গী ছিলেন কোকো ভ্যান্ডেওয়েগে। সেই দৌড় ধরে রেখেই এ বার সিঙ্গলসেও খেলোয়াড় জীবনের সব চেয়ে বড় সাফল্য পেলেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের অন্যতম সেরা চ্যাম্পিয়ন রড লেভার আগেই বলেছিলেন ফরাসি ওপেন জিততে পারেন বার্টি। কিংবদন্তির ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি করলেন বার্টি। অথচ এই বার্টিই সেমিফাইনালে ম্যাচ খোয়ানো থেকে তিন গেম দূরে ছিলেন এক সময়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমান্ডা আনিসিমোভার বিরুদ্ধে। সেই চ্যালেঞ্জ সামলে আরও এক তরুণীকে হারালেন বার্টি। ১৯ বছর বয়সি ভন্ড্রোসোভা ফাইনালে ওঠার পথে একটিও সেট খোয়াননি। তাতেই স্পষ্ট ছিল কী রকম দুরন্ত ছন্দে আছেন তিনি। কিন্তু আগ্রাসী বার্টি তাঁকে কোনও সুযোগই দেননি ম্যাচে ফিরে আসার। ভন্ড্রোসোভা কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বার্টি দাপটের সঙ্গে তা সামলান। তৃতীয় বার প্রতিপক্ষের সার্ভিস ভেঙে এবং নিজের সার্ভিস ধরে রেখে প্রথম সেট দখল করে নেন। ১৩টি উইনার মারেন তিনি প্রথম সেট জেতার পথে। ভন্ড্রোসোভা মারেন তুলনায় মাত্র দুটি। শেষ দুই রোলঁ গ্যারোজ চ্যাম্পিয়ন (সিমোনা হালেপ এবং জেলেনা অস্তাপেঙ্কো) ফাইনালে একটি সেট এবং একটি ব্রেকে পিছিয়ে পড়ার পরেও দুরন্ত ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। ভন্ড্রোসোভাও এ দিন সে রকমই পরিস্থিতির মুখে পড়েন। প্রথম সেটে হারের পরে দ্রুত ০-২ পিছিয়ে পড়েছিলেন দ্বিতীয় সেটে। এর পরে নিজের সার্ভিস ধরে রাখলেও বার্টিকে রুখতে পারেননি তিনি। এই জয়ের ফলে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়েও কেরিয়ার সেরা দু’নম্বরে উঠে আসবেন তিনি। যা ১৯৭৬ সালে ইভোন গুলাগঙের পরে অস্ট্রেলীয় মহিলা হিসেবে সেরা র্যাঙ্কিং।
হারের পরে বার্টির উদ্দেশে ভন্ড্রোসোভা বলেন, ‘‘অভিনন্দন তোমায়। আজ একটা শিক্ষা দিলে আমায়। যদিও আজ আমি জিততে পারিনি। তবে সব কিছু নিয়ে আমি খুব খুশি।’’ সত্যিই শিক্ষা দিলেন বার্টি। শুধু ভন্ড্রোসোভাকেই নয়, টেনিস বিশ্বের উঠতি খেলোয়াড়দেরও। ক্রিকেট থেকে ২০১৬ সালে যখন তিনি টেনিসে ফিরে আসেন তাঁর বিশ্ব র্যাঙ্কিং ছিল ৬২৩। সেখান থেকে তিন বছরের মধ্যে দু’নম্বরে উঠে আসার অবিশ্বাস্য সাফল্যের পাশাপাশি আরও একটা নামও তাঁর পাশে জুড়ে গেল— ফরাসি ওপেনের নতুন রানি।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy