নোভাক জোকোভিচ। — ফাইল চিত্র।
অলিম্পিক্সে সোনা আর অধরা থাকল না নোভাক জোকোভিচের। রবিবার ফিলিপে শাঁতিয়ের কোর্টে টেনিসের ফাইনালে স্পেনের কার্লোস আলকারাজ়কে হারিয়ে দিলেন তিনি। সার্বিয়ার খেলোয়াড় জিতেছেন ৭-৬, ৭-৬ গেমে। দু’টি সেটই গড়িয়েছে টাইব্রেকারে। সোনা জিতে স্বদেশি রাফায়েল নাদালকে ছোঁয়া হল না আলকারাজ়ের। অন্য দিকে, ছ’বারের প্রচেষ্টায় প্রথম বার সোনা জিতলেন জোকোভিচ। স্টেফি গ্রাফ, আন্দ্রে আগাসি, রাফায়েল নাদাল এবং রজার ফেডেরারের পর বিশ্বের পঞ্চম টেনিস খেলোয়াড় হিসাবে ‘গোল্ডেন স্ল্যাম’, অর্থাৎ চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যামই এক বার করে জেতার পাশাপাশি অলিম্পিক্সে সোনা জিতলেন।
টেনিসের ইতিহাসে ওপেন যুগে সাফল্যের বিচারে সফলতম খেলোয়াড় তিনি। ২৪টি গ্র্যান্ড স্ল্যাম রয়েছে। টেনিসে এমন কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যাম নেই, যা তিনি একাধিক বার জেতেননি। গোটা বিশ্বে কার্যত সব প্রতিযোগিতায় জিতেছেন। অধরা থেকে গিয়েছিল একটা জিনিসই। অলিম্পিক্স সোনা। ৩৭ বছরের জোকোভিচ জানতেন, তাঁর কাছে আর সুযোগ নেই। তাই রোলঁ গারোজে নিজের সেরাটা দেওয়ার লক্ষ্যে ঝাঁপিয়েছিলেন। রবিবার অবশেষে স্বপ্ন সফল। টেনিস বিশেষজ্ঞেরা এ বার যদি তাঁকে সর্বকালের সেরা তকমা দেন, তা হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
সোনা জয়ের কাজটা সহজ ছিল না। দ্বিতীয় রাউন্ডেই সামনে পেয়েছিলেন পুরনো শত্রু তথা রোলঁ গারোজের কিংবদন্তিসম রাফায়েল নাদালকে। তবে এই নাদাল অতীতের নাদাল ছিলেন না, যিনি প্যারিসের সুরকির কোর্টে ইচ্ছামতো দাপট দেখাতে পারেন। পাশাপাশি, আগেই অলিম্পিক্সে সোনা থাকায় নাদালের খিদে জোকোভিচের থেকে কিছুটা হলেও কম ছিল। জোকোভিচ সুযোগ কাজে লাগাতে ছাড়েননি। সুরকির কোর্টের রাজাকে স্রেফ উড়িয়ে দিয়েছিলেন। কোয়ার্টার ফাইনালে সামনে পড়েছিলেন গ্রিসের স্টেফানোস চিচিপাস। অতীতে ফরাসি ওপেনের ফাইনালে জোকোভিচের থেকে দু’টি সেট কেড়ে নিয়েছিলেন চিচিপাস। কিন্তু অলিম্পিক্স সোনা জয়ের লক্ষ্যে বুঁদ থাকা জোকোভিচের সামনে দাঁড়াতে পারেননি।
ফলে জোকোভিচের সামনে ছিল শুধু একটাই বাধা। কার্লোস আলকারাজ়। উইম্বলডনের ফাইনালে স্ট্রেট সেটে হারের পর এক মাসও কাটেনি। জোকোভিচের হৃদয়ে ক্ষত যে দগদগে ছিল, তা এ দিন গোটা ম্যাচে তাঁর খেলা দেখেই বোঝা গিয়েছে। হাঁটুর চোটে কাবু হলেও কোনও ম্যাচে ১০০ শতাংশ দিতে ছাড়েননি। সেই চেষ্টা কাজে লেগেছে। অবশেষে পূরণ হয়েছে ‘গোল্ডেন স্ল্যাম’-এর স্বপ্নও।
অলিম্পিক্সে সোনা জয়ের খিদে কতটা ছিল, তা ম্যাচের পর বোঝা গিয়েছে। জোকোভিচের ফোরহ্যান্ড আলকারাজ়ের নাগাল এড়িয়ে বাইরে যেতেই র্যাকেট ফেলে গ্যালারির দিকে তাকালেন। সঙ্গে মুখে একটানা চিৎকার। কিন্তু অলিম্পিক্সে সোনা জেতার পরেও আগ্রাসন কত ক্ষণই বা ধরে রাখা যায়! জোকোভিচও পারলেন না। সঙ্গে সঙ্গে চোখ দিয়ে বেরিয়ে এল জল। মাটিতে হাঁটু মুড়ে বসে কাঁদতে শুরু করলেন বাচ্চাদের মতো। হাতের বুড়ো আঙুল তখন থরথর করে কাঁপছে। বোঝাই যাচ্ছিল ভেতর থেকে কতটা উত্তেজিত। একটু থেমে উঠে দাঁড়ালেন। কোনও রকমে আম্পায়ারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে, বিপক্ষ আলকারাজ়কে আলিঙ্গন করে ছুটে গেলেন গ্যালারির একটি নির্দিষ্ট কোণে। ছোট মেয়েকে কোলে নিয়ে আবার শুরু কান্না।
কোর্টে গোটা দৃশ্যটাই প্রত্যক্ষ করছিলেন আলকারাজ়। ২০০৮ বেজিং অলিম্পিক্সে সোনা জিতেছিলেন রাফায়েল নাদাল। দ্বিতীয় স্পেনীয় হিসাবে ইতিহাস গড়ার সুযোগ ছিল আলকারাজ়ের সামনে। হেরে গিয়ে ইস্পাতকঠিন মানসিকতার আলকারাজ়কেও চোখের জল ফেলতে দেখা গেল। তবে সম্ভ্রম ছিল জোকোভিচের প্রতিও। আলকারাজ় বুঝতে পারছিলেন, তাঁর কাছে অলিম্পিক্সে সোনা জয়ের জন্য আরও অনেক বছর রয়েছে। কিন্তু কোর্টে তাঁর প্রতিপক্ষ নেমেছিলেন জীবনের শেষ অলিম্পিক্সে। ফলে দিনটা হয়তো তাঁরই ছিল। সেই সমীহ থেকেই হাততালি দিয়ে গোটা গ্যালারির মতো সম্মান জানালেন আলকারাজ়।
রবিবার রোলঁ গারোজে ফাইনালের মতোই ফাইনাল হয়েছে। দুই খেলোয়াড়ের কেউ কাউকে এক ইঞ্চি জায়গা ছাড়েননি। বছরের সেরা পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে আলকারাজ়ের বিরুদ্ধে জিততে হয়েছে জোকোভিচকে। দু’টি সেট টাইব্রেকারে যাওয়া থেকেই প্রমাণিত, কতটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। প্রথম সেট গড়ায় ৯৪ মিনিট। প্রথম সেটে জোকোভিচ পাঁচটি এবং আলকারাজ় আটটি ব্রেক পয়েন্ট পেয়েছিলেন। কেউই কাজে লাগাতে পারেননি। নিজের সার্ভিসে ০-৪০ পিছিয়ে থেকেও তা ধরে রাখেন আলকারাজ়। টাইব্রেকারে ৩-৩ অবস্থা থেকে টানা চারটি পয়েন্ট পেয়ে সেট পকেটে পোরেন জোকোভিচ।
প্রথম সেটের তুলনায় দ্বিতীয় সেটে দুই খেলোয়াড়ের কাছে খুব বেশি সুযোগ আসেনি। তা সত্ত্বেও দু’জনের পারফরম্যান্স দেখে কিছু বোঝা যায়নি। এক মুহূর্তও হাল ছাড়তে রাজি ছিলেন না কেউ। জোকোভিচ গতিতে বৈচিত্র আনছিলেন। আলকারাজ়ের শটে বৈচিত্র দেখা যাচ্ছিল। টাইব্রেকারে প্রথম সেটের মতো একই দৃশ্য দেখা গেল দ্বিতীয় সেটেও। ২-২ থেকে ৬-২ করে দিলেন জোকোভিচ। ম্যাচ এবং অলিম্পিক্সের অধরা সোনাও তখনই তাঁর পকেটে চলে এল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy