পুলে নেমে একের পর এক সোনা জিতেছেন লিয়ঁ মাখচাঁ। ছবি: রয়টার্স।
২০০ মিটার বাটারফ্লাইয়ে ১৫০ মিটার পর্যন্ত এগিয়ে ছিলেন হাঙ্গেরির ক্রিস্টফ মিলাক। দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন লিয়ঁ মাখচাঁ। চতুর্থ ল্যাপ শুরু হওয়ার পরে হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গেলেন লিয়ঁ। কোথায় তিনি? ফরাসি সমর্থকেরা অধীর অপেক্ষায়। বেশ কিছু ক্ষণ পরে দেখা গেল তাঁকে। সকলকে অবাক করে দিয়ে জলের তলা দিয়ে সাঁতরে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছেন তিনি। কিছু ক্ষণের মধ্যেই মিলাককে টপকে গেলেন লিয়ঁ। শেষ পর্যন্ত জিতলেন প্রতিযোগিতা। দর্শকাসনে তখন উল্লাস করছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁকর। প্যারিসের লা ডিফেন্স এরিনায় তখন কান পাতা দায়। অলিম্পিক্সে চারটি ইভেন্টে নেমে চারটিতেই সোনা জিতেছেন লিয়ঁ। তাঁকে ফ্রান্সের মাইকেল ফেল্পস বলা হচ্ছে। অথচ এই লিয়ঁ দু’বছরের জন্য সাঁতারই ছেড়ে দিয়েছিলেন।
চার বছর বয়স থেকে সাঁতার শুরু করেছিলেন লিয়ঁ। কিন্তু সাত বছর বয়সে হঠাৎই সাঁতার ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। কারণ, জল বড্ড ঠান্ডা। একটি সাক্ষাৎকারে লিয়ঁ বলেন, “আমি খুবই রোগা ছিলাম। তাই পুলে নামলে ঠান্ডা জলে খুব কষ্ট হত। তাই দু’বছর সাঁতার ছেড়ে দিয়েছিলাম।” তিনি এতটাই রোগা ও ছোটখাটো ছিলেন যে স্কুলে সকলে তাঁকে নিয়ে হাসাহাসি করত। তবে সাঁতার তাঁর রক্তে ছিল। বাবা হাভিয়ের ১৯৯৬ আটলান্টা অলিম্পিক্সে খেলেছিলেন। তিনিই ছিলেন ফ্রান্সের প্রথম সাঁতারু যিনি অলিম্পিক্সের ফাইনালে উঠেছিলেন। মা-ও সাঁতারু। ধীরে ধীরে ঠান্ডা জলের ভয় কাটিয়ে আবার সাঁতারে ফেরেন লিয়ঁ।
বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় ভাল খেললেও ২০২০ সালে দু’টি সিদ্ধান্ত নেন লিয়ঁ। সেই দুই সিদ্ধান্ত তাঁর জীবন বদলে দেয়। প্রথমে এক মনোবিদের সাহায্য নেন তিনি। কারণ, মাঝেমধ্যেই পুলের মধ্যে চাপে পড়ে যেতেন তিনি। সেই চাপ কাটানোর জন্যই মনোবিদের কাছে যান। লিয়ঁ বলেন, “আমি থমাস সামুটের কাছে যাই। উনি খুব নামকরা মনোবিদ। মাঝেমধ্যেই আমি চাপে পড়ে যেতাম। তখন সাঁতার কাটতে পারতাম না। থমাস আমাকে শেখান, কী ভাবে পুলে নেমে আনন্দে থাকব। ওঁর পদ্ধতি আমাকে খুব সাহায্য করেছে।”
লিয়ঁ দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত নেন কোচ বদলের। তিনি ইমেল করেন বব বওমানকে। আমেরিকার এই বিখ্যাত কোচের ছাত্র ফেল্পস। অলিম্পিক্সে ২৩ সোনা-সহ ২৮ পদকের মালিক ফেল্পসকে ববই এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। ছোট থেকেই ফেল্পসকে নিজের আদর্শ মনে করতেন লিয়ঁ। সেই কারণে তিনি ঠিক করেন ববের কাছেই শিখবেন। লিয়ঁকে চিনতেন না বব। চিনতেন তাঁর বাবাকে। সেই কারণেই লিয়ঁর কোচ হন তিনি। তার পরে ধীরে ধীরে আরও উন্নতি করেন লিয়ঁ।
বব বুঝতে পারেন, অনেক দূর যাবেন লিয়ঁ। কারণ, অনেক সময় ফেল্পসের থেকেই কম সময়ে সাঁতার শেষ করতেন লিয়ঁ। বব একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি মাঝেমধ্যেই লিয়ঁকে চ্যালেঞ্জ করতাম। ফেল্পসের থেকে কম সময়ে সাঁতার শেষ করার চ্যালেঞ্জ দিতাম। লিয়ঁ ভয় পেত না। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ফেল্পসকেও টপকে যেত।” সেই সময় ফেল্পসের সঙ্গেও দেখা হয় লিয়ঁর। জলে কী ভাবে গতি আরও বাড়ানো যায় তার কিছু পদ্ধতি লিয়ঁকে শেখান তিনি। সেই সিদ্ধান্ত কাজে লাগে ফরাসি সাঁতারুর।
গত রবিবার ২০০ মিটার মেডলিতে সোনা জিতেছিলেন লিয়ঁ। তার পরে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ২০০ মিটার বাটারফ্লাই ও ২০০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকে সোনা জেতেন তিনি। শেষে ৪০০ মিটার মেডলিতে সোনা জিতে শেষ করেন লিয়ঁ। ২০০ মিটার মেডলিতে ফেল্পসের রেকর্ডও ভেঙে দিয়েছেন লিয়ঁ। লিয়ঁ ফ্রান্সের একমাত্র সাঁতারু যিনি অলিম্পিক্সে চারটি সোনা জিতেছেন। ফেল্পস ও মার্ক স্পিৎজ়ের পরে তিনি বিশ্বের তৃতীয় সাঁতারু যিনি এই কীর্তি করেছেন।
২২ বছরের লিয়ঁকে বলা হচ্ছে ফ্রান্সের ফেল্পস। কারণ, এখনও অন্তত দু’টি অলিম্পিক্স খেলবেন তিনি। সেখানে পদকের সংখ্যা বাড়াবেন। ফেল্পসের সঙ্গে তুলনা নিয়ে তিনি নিজে কী মনে করছেন। লিয়ঁ বলেন, “আমি গত বছর ফেল্পসের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। উনি অসাধারণ। আমাকে অনেক পরামর্শ দিয়েছিলেন। সেগুলো কাজে লাগছে। ওঁর সঙ্গে তুলনার কোনও অর্থ নেই। উনি কিংবদন্তি। আমি সবে শুরু করেছি। এখনও অনেক পথ চলা বাকি।”
সত্যি কথাই বলেছেন লিয়ঁ। দেশের মাটিতে অলিম্পিক্সে যে কীর্তি তিনি করে দেখিয়েছেন, তা যদি পরের অলিম্পিক্সেও করতে পারেন, তা হলে ফেল্পসের পরে সবচেয়ে বেশি পদক জেতা সাঁতারু হয়ে যাবেন তিনি। সেই লক্ষ্যেই এগোতে চান লিয়ঁ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy