উল্লাস: ইস্টবেঙ্গলের তৃতীয় গোলের পরে ডিকা (মাঝে)। সোমবার। ইনসেটে শ্যাম থাপা। নিজস্ব চিত্র
সোমবার টেলিভিশনের পর্দায় ইন্ডিয়ান অ্যারোজ বনাম ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচে কুপারেজ স্টেডিয়ামের ফাঁকা গ্যালারি দেখে খুব কষ্ট হচ্ছিল।
মুম্বইয়ের এই মাঠের সঙ্গে আমার অসংখ্য স্মৃতি জড়িয়ে আছে। খেলোয়াড় জীবনে কখনও কুপারেজের ফাঁকা গ্যালারি দেখিনি। বরং সত্তর ও আশির দশকে বসার জায়গা না পেয়ে বলিউডের বহু তারকাকেই হতাশ হয়ে ফিরে যেতে দেখেছি। সোমবার কমেন্ট্রিতে শুনলাম, ইন্ডিয়ান অ্যারোজ বনাম ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ দেখতে মাঠে এসেছিলেন মাত্র আড়াই হাজার দর্শক। অবশ্য ওঁদের দোষ দেওয়া যায় না। শতবর্ষে ইস্টবেঙ্গল যা দল গড়েছে, তাতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা এমনিতেই কম। তার উপরে এ রকম হতশ্রী পারফরম্যান্স। লাল-হলুদ সমর্থকদের উৎসাহ হারিয়ে ফেলাটাই তো স্বাভাবিক।
আমি নিজেও ইস্টবেঙ্গলকে নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে শুরু করেছিলাম। কখনও ভাবতেই পারিনি, ইস্টবেঙ্গলকে অবনমন বাঁচানোর জন্য লড়াই করতে হবে। সব চেয়ে যন্ত্রণা দিত, লাল-হলুদ জার্সি গায়ে মাঠে নামা ফুটবলারদের দেখে। ওদের মধ্যে জেতার ইচ্ছেটাই যেন হারিয়ে গিয়েছিল। অনেক দিন পরে অবশেষে চেনা ইস্টবেঙ্গলকে দেখলাম।
সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারশন ইন্ডিয়ান অ্যারোজ দলটা তৈরি করেছে ভবিষ্যতের কথা ভেবে। এই কারণেই কোনও বিদেশি নেই। ফুটবলারদের গড় বয়স উনিশের নীচে। সেই দলের বিরুদ্ধে প্রথম পর্বে ইস্টবেঙ্গল কোচ মারিয়ো রিভেরার রণনীতি আমাকে বিস্মিত করেছিল। আনসুমানা ক্রোমাকে প্রথম একাদশে রাখেননি স্পেনীয় কোচ। খাইমে কোলাদো সান্তোস ছন্দহীন। তার উপরে শুরু থেকেই অতিরক্ষণাত্মক ফুটবল। আইজল এফসির বিরুদ্ধেও তাই। পর পর দু’ম্যাচে হারের ফলেই অবনমনের আওতায় চলে গিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। সোমবার জিতে লিগ টেবলের অষ্টম স্থানে উঠে আসায় কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরল। এর জন্য ফুটবলারদের পাশাপাশি, কোচকেও কৃতিত্ব দেব।
দু’ম্যাচে হারের ধাক্কা থেকে নিজের ভুল শুধরে নিয়েছেন মারিয়ো। সোমবার ৪-৩-৩ ছকে দল সাজান তিনি। শুরু থেকেই মার্কোস খিমেনেস দে লা এসপারা মার্তিনের সঙ্গে ক্রোমা। এতেই বদলে গেল ইস্টবেঙ্গল। চার মিনিটে অ্যারোজের বক্সের বাইরে থেকে দুরন্ত শটে গোল করে কোলাদো।
স্পেনীয় মিডফিল্ডার গত মরসুমে দারুণ ছন্দে ছিল। সামনে এনরিকে এসকুয়েদা, জবি জাস্টিন থাকায় অনেক খোলা মনে খেলেছিল। এ বার দু’জনেই নেই। তাই বল নেওয়ার জন্য বার বার কোলাদো নীচে নেমে যাচ্ছিল। স্বাভাবিক খেলাটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল ওর। সোমবার পুরনো কোলাদোর ঝলক দেখা গেল। নিজে গোল যেমন করল, তেমনই ৬৬ মিনিটে দুরন্ত কর্নার থেকে ম্যাচের সেরা লালরিনডিকা রালতেকে দিয়ে গোল করাল।
শুধু কোলাদো নয়। ফুটবলারদের সকলের মধ্যেই অনেক দিন পরে মরিয়া ভাবটা দেখলাম। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই আক্রমণের ঝড় তুলেছিল অ্যারোজ। পেনাল্টিও পেয়ে যায়। কিন্তু গোল করতে পারেনি বিক্রম প্রতাপ সিংহ। যদিও ৫৪ মিনিটে দুরন্ত গোলে করে ব্যবধান কমায় বিক্রম। দেখে ভাল লাগল, গোল খেয়েও দমে না যাওয়ার মানসিকতা ইস্টবেঙ্গল ফুটবলারদের মধ্যে ফিরে আসায়। পর পর গোল করল আশির আখতার ও ডিকা
খেলোয়াড় জীবনে আমাদেরও অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়েছে। নিজেরাই বেরিয়ে আসার রাস্তা খুঁজে বার করেছিলাম। কারণ, ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের জার্সি পরে ম্যাচ হেরে মাঠ ছেড়ে বেরনোর চেয়ে লজ্জার কিছু হয় না। সমর্থকদের হাতে মার খাওয়ার ভয়ে মাঝরাত পর্যন্ত ক্লাব তাঁবুতে লুকিয়ে থাকতাম। তার পরে পুলিশ ভ্যানে বাড়ি ফিরতাম। তাতেও নিশ্চিন্তে থাকার উপায় ছিল না। রাস্তায় বেরোলেই সমর্থকদের বিদ্রুপ ও কটাক্ষ শুনতে হত। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করতাম, পরের ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াতে না পারলে খেলাই ছেড়ে দেব।
অ্যারোজের বিরুদ্ধে কোলাদো, ক্রোমারাও মনে হয় এই শপথ নিয়ে নেমেছিল। ওরাও জানে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। বাকি ম্যাচগুলোয় মাথা উঁচু করে মাঠ ছাড়াই লক্ষ্য ওদের।
ইস্টবেঙ্গল: লালথুমাওয়াইয়া রালতে, সামাদ আলি মল্লিক, মেহতাব সিংহ, আশির আখতার, আভাস থাপা, ব্রেন্ডন ভানলালরেমডিকা (খুয়ান মেরা গঞ্জালেস, মনোতোষ চাকলাদার), লালরিনডিকা রালতে, কাশিম আইদারা, আনসুমানা ক্রোমা (রোহুল পুইয়া), খাইমে সান্তোস কোলাদো ও মার্কোস খিমেনেস মার্তিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy