তৃপ্ত: অষ্টম অস্ট্রেলীয় ওপেন ট্রফি, আবেগঘন চুম্বন নোভাকের। গেটি ইমেজেস
পেশাদার টেনিসে সব চেয়ে কঠিন কাজ যদি ধরা হয় ফরাসি ওপেনে রাফায়েল নাদালকে হারানো, তা হলে অস্ট্রেলীয় ওপেনে নোভাক জোকোভিচকে পরাস্ত করা সেই তালিকায় দু’নম্বরে থাকবে। রবিবার সেই কাজটাই প্রায় করে ফেলেছিল অস্ট্রিয়ার ২৬ বছরের তরুণ তুর্কি ডমিনিক থিম। কিন্তু জোকোভিচ দেখিয়ে দিল সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন কাকে বলে! কী ভাবে চাপের মুখে ভেঙে না পড়েও ঠিক সময়ে ঘুরে দাঁড়াতে হয়। কী ভাবে ১-২ সেটে পিছিয়ে থেকেও উঠে দাঁড়িয়ে অষ্টম অস্ট্রেলীয় ওপেন এবং সব মিলিয়ে ১৭ নম্বর গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে নেওয়া যায়!
মেলবোর্ন পার্কে জোকোভিচ এই প্রথম ফাইনালে ১-২ সেটে পিছিয়ে পড়ার পরে চ্যাম্পিয়ন হল। ফল ৬-৪, ৪-৬, ২-৬, ৬-৩, ৬-৪। যা ওর ১৭ বছরের খেলোয়াড় জীবনে কোনও দিন হয়নি। একই সঙ্গে নাদালকে সরিয়ে ফের বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বরেও উঠে আসা নিশ্চিত হয়ে গেল ওর। এ দিনের ফাইনালের আগে মুখোমুখি লড়াইয়ে ৬-৪ জোকোভিচ এগিয়ে থাকলেও শেষ পাঁচ বারের মধ্যে চার বার থিম হারিয়ে দিয়েছিল ওকে। তাই থিম জানত কী ভাবে জোকোভিচকে হারানো যায়। কিন্তু প্রথম বার মেলবোর্নে ফাইনালে নামছে বলে প্রথমে একটু চাপে পড়ে গিয়েছিল হয়তো। সেটটাও হারায় তাই। দ্বিতীয় সেটে কিছুটা সড়গড় হতেই জোকোভিচকে এর আগে হারানোর আত্মবিশ্বাসটা কাজে লাগিয়ে পরপর দু’সেট জিতে এগিয়ে যায় থিম। কিন্তু চতুর্থ সেটে ৩-৩ থাকার সময় থিম হঠাৎ মনঃসংযোগ হারিয়ে ফেলে। ওটাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া মুহূর্ত। জোকোভিচের মতো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সামান্য ভুল করলেই তার বড় মাসুল দিতে হয়। যেটা থিমকে ওর তৃতীয় গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালেও দিতে হল। এটাও বলতে হবে, অস্ট্রিয়ার তরুণকে মেলবোর্নের দর্শকদের সমর্থনও খুব সাহায্য করেছে।
জোকোভিচ এই জায়গাটায় চিরকালই ফেডেরার, নাদালের চেয়ে পিছিয়ে। কোর্টের বাইরে জোকোভিচ মজার মানুষ। ঠাট্টা-ইয়ার্কি করতে ভালবাসে। অন্য খেলোয়াড়দের খুব ভাল নকল করতে পারে। যে জন্য ওর টেনিস সার্কিটে আর এক নাম জোকার। ইংরেজির ‘জোকার’ আর ওর নামের পদবির সঙ্গে মিলিয়ে রাখা নামটা (ডিজেওকেইআর)। তা হলেও দর্শক সমর্থনে কিন্তু এখনও ফেডেরার শীর্ষে, তার পরেই নাদাল। তার উপরে এ দিন জোকোভিচ দু’বার টাইম ভায়োলেশন, অর্থাৎ সময়ের মধ্যে খেলা না শুরু করার জন্য শাস্তি পায়। ওর প্রথম সার্ভিস কেড়ে নেন চেয়ার আম্পায়ার। যে জন্য কোর্ট বদলের সময় জোকোভিচ ক্রুদ্ধ হয়ে নিজের হাত চাপড়াচ্ছিল চেয়ার আম্পায়ারের পায়ে। যেটা দর্শকেরা নিশ্চয়ই ভাল ভাবে নেননি। এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। জোকোভিচের বড়সড় জরিমানাও হতে পারে এ জন্য। তা ছাড়া তরুণ প্রজন্মের জন্যও এটা ভাল উদাহরণ হয়ে থাকল না।
এই জয়ের পরে অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, জোকোভিচ কি ফেডেরারের রেকর্ড ভেঙে দিতে পারে? জোকোভিচের বয়স এখন ৩২। আরও তিন-চার বছর যদি ও এ ভাবে খেলতে পারে, এ রকম ফিটনেস ধরে রাখতে পারে, তা হলে আমি বলব, ফেডেরারের ২০ গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের রেকর্ড ও ভেঙে দেবে। তবে আমাদের ধরে নিতে হবে এর মধ্যে ফেডেরার দু-একটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে পারে। একই কথা প্রযোজ্য নাদালের ক্ষেত্রেও। সেটা যদি হয়ও তাও জোকোভিচের এই দুই কিংবদন্তিকে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের দৌড়ে টপকে যাওয়ার দারুণ সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে কোচিং দলে গোরান ইভানিসেভিচ যোগ দেওয়ার পরে সার্ভিসে যে রকম উন্নতি করেছে ও, তাতে মোক্ষম সময়ে পয়েন্ট তুলে নিতে পারছে।
আসলে মেলবোর্ন পার্কের ধীর গতির কোর্টের সঙ্গে জোকোভিচের খেলা খুব মানিয়ে যায়। তাই এটাই ওর ফেভারিট কোর্ট। এখানে ও যা সাফল্য পেয়েছে তা ওপেন যুগে আর কেউ করে দেখাতে পারেনি। কয়েক বছর আগের একটা ঘটনা মনে পড়ে যাচ্ছে। তখন জোকোভিচের সময়টা ভাল যাচ্ছে না। ২০১৭ মরসুমে একটাও গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে পারেনি। পারিবারিক সমস্যা, কোচের সঙ্গে বিচ্ছেদ, চোট-আঘাত লেগেই আছে। অস্ত্রোপচারের পরেও কোর্টে ফিরে ছন্দে আসতে পারছে না। ঠিক এই সময় সস্ত্রীক ফ্রান্সে একটা পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়ার পরে আমূল পাল্টে গিয়েছিল ওর জীবনদর্শন। ওর টেনিসে নতুন প্রাণ সঞ্চারিত হয়েছিল সে দিনই। সেখান থেকে ফিরে এসে পরপর দুটো গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছিল ও। টেনিস দুনিয়ায় জোকোভিচ ঠিক এ রকমই চরিত্র, অদম্য, হার না-মানা, কোর্টে যার দুর্বলতা খুঁজে পাওয়া যায় না, হারতে হারতেও যে নতুন ভাবে ফিরে আসে, তা সে দর্শক সমর্থন থাকুক বা না-ই থাকুক!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy