ছবি: রয়টার্স
এরে কয় প্রতিভা। দুটো সেট পিছিয়ে পড়েও অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তন নোভাক জোকোভিচের। কতটা অবিশ্বাস্য ছিল প্রত্যাবর্তন, সেন্টার কোর্টের গ্যালারিতে বসা জোকোভিচের স্ত্রী জেলিনার অভিব্যক্তিতে বার বার ফুটে উঠছিল সেই ছবি। প্রবল উত্তেজনা, চাপা টেনশন, বিস্ময়, অবিশ্বাস— সব ছিল জেলিনার মধ্যে। সাধারণত পেশাদার খেলোয়াড়রা ভাবলেশহীন হন। ঝক্কিটা পোয়াতে হয় সঙ্গিনীদের। অবশ্যই ব্যতিক্রম রজার ফেডেরারের স্ত্রী মিরকা। তিনি নিজে বড় টেনিস খেলোয়াড় ছিলেন। হয়ত সেই কারণেই কোর্টের ফেডেরার যেরকম নির্লিপ্ত থাকতেন, কোর্টের বাইরে মিরকাও সেরকমই থাকতে পারতেন। কিন্তু জেলিনা পেশায় মডেল। কখনও টেনিস খেলেছেন বলে শোনা যায়নি। তাই তাঁর অভিব্যাক্তিটাই বার বার প্রমাণ করল ৩ ঘণ্টা ৩৫ মিনিটের ম্যাচ কী চরম উত্তেজনায় পৌঁছেছিল।
উইম্বলডনের সেমিফাইনালে উঠলেন জোকোভিচ। ২০ বছরের ইয়ানিক সিনারের বিরুদ্ধে তাঁর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হল পাঁচ সেটের। ০-২ সেটে পিছিয়ে পড়েও জোকার দেখিয়ে দিলেন কেন তিনি চ্যাম্পিয়ন। জোকার জিতলেন ৫-৭, ২-৬, ৬-৩, ৬-২, ৬-২ ব্যবধানে।
রজার ফেডেরার এবং জোকোভিচকে আদর্শ করে বেড়ে ওঠা সিনারই এখন তাঁদের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জার। উইম্বলডনের কোয়ার্টার ফাইনালে জোকোভিচকে কড়া চ্যালেঞ্জের সামনে ফেললেন ইতালির তরুণ খেলোয়াড়।
খেলা শুরুর আগে হয়তো কেউই আশা করেননি এমন হতে পারে। কিন্তু সেটাই হল। প্রথম দু’সেটে জোকোভিচকেই কার্যত নবাগত মনে হল সিনারের সামনে। প্রথম সেট সিনার জিতলেন ৭-৫ ব্যবধানে। অথচ ম্যাচের প্রথম তিনটি গেমই জেতেন জোকোভিচ। ০-৩ ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা সিনার ক্রমশ ম্যাচে ফেরেন। ১-৪ ব্যবধানে পিছিয়ে যাওয়ার পর পাল্টা জবাব দিতে শুরু করেন ইতালীয়। ব্যবধান মুছে ৪-৪ করে ফেলেন। এর পর জোকোভিচ আবার এগিয়ে গেলেও তা ধরে রাখতে পারেননি। পর পর তিনটি গেম জিতে নেন সিনার। ৫৭ মিনিটের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে সিনার কেবল সেটই জিতে নিলেন না, চমকেও দিলেন তাবড় টেনিস বিশেষজ্ঞদের।
প্রথম সেটের পর অনেকেই হয়তো মনে করেছিলেন, খোঁচা খাওয়া বাঘের মতোই ফিরে আসবেন ২০টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিক। কিন্তু তেমন হল কোথায়! অভিজ্ঞ জোকোভিচকে দ্বিতীয় সেটে কোর্টের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটিয়েই একরকম হারিয়ে দিলেন ২০ বছরের তরুণ। এই সেটে প্রথম থেকেই ছিল তরুণ তুর্কির দাপট দ্বিতীয় সেটের ফল সিনারের অনুকূলে ৬-২। তথ্যের মতোই সহজ জয়। তৃতীয় গেমেই জোকোভিচের সার্ভিস ভাঙলেন তিনি। সপ্তম গেমে আবার সার্ভিস হারান জোকোভিচ। ৩৬ মিনিটে সেট জিতলেন সিনার। যা আরও অবাক করল সকলকে। কোর্টে তখন সিনারের শক্তিশালী সার্ভিস, ফোরহ্যান্ড, ব্যাকহ্যান্ডের উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছেন জোকার। বিশ্বের প্রাক্তন এক নম্বর খেলোয়াড়কে এমন ভাবে হারতে হবে, তা অনেকেই আশা করেননি।
ম্যাচের আগে সিনারের প্রশংসা করলেও আশা করেননি বোধহয় জোকার নিজেও। ০-২ সেটে পিছিয়ে থাকা অবস্থায় সার্বিয়ান খেলায় ফিরলেন অভিজ্ঞতাকে সম্বল করে। চতুর্থ গেমে সিনারের সার্ভিস ভেঙে ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে যান জোকোভিচ। সেই ব্যবধান বজায় রেখে শেষ পর্যন্ত ৬-৩ ব্যবধানে সেট জেতেন উইম্বলডনের শীর্ষ বাছাই।
চতুর্থ সেটেও দাপট বজায় রাখলেন জোকোভিচ। সিনারের প্রথম দু’টি সার্ভিস ভেঙে ৪-০ ব্যবধানে এগিয়ে যান তিনি। সিনার প্রথম জয় পেলেন সেটের পঞ্চম গেমে। তাতে জোকোভিচকে তেমন সমস্যায় পড়তে হয়নি। ৪৫ মিনিটে ৬-২ ব্যবধানে প্রতিযোগিতার দশম বাছাইকে হারান তিনি। এই সেটেই এক বার পা পিছলে কোর্টে পড়ে গেলেন সিনার। পায়ে হাল্কা চোটও পেলেন। তরুণ প্রতিপক্ষকে কোর্টে পড়ে যেতে দেখে ছুটে যান জোকোভিচ। হাত ধরে তুলে দাঁড় করান। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ম্যাচে জোকোভিচের সৌজন্যের তারিফ করল অল ইংল্যান্ড লন টেনিস কোর্টের সেন্টার কোর্ট।
পঞ্চম সেটেও অভিজ্ঞতাকে সম্বল করে এগোতে শুরু করেন জোকোভিচ। তৃতীয় গেমে সিনারের সার্ভিস ভাঙার পর ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে যান প্রতিযোগিতার শীর্ষ বাছাই। গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক পাওয়ার পর জোকোভিচ মূলত গুরুত্ব দিয়েছিলেন নিজের সার্ভিস গেম ধরে রাখার উপর। যদিও চতুর্থ সেটে চোট পাওয়ার পর সিনারকে ম্যাচের শেষ সেটে খানিকটা মন্থর দেখিয়েছে। শুরুর ক্ষিপ্রতা দেখা যায়নি তাঁর মধ্যে। সপ্তম সেটে আবার সিনারের সার্ভিস ভাঙেন তিনি। এর পর আর ৬-২ ব্যবধানে সেট জিততে সমস্যা হয়নি তাঁর।
সিনারের সঙ্গে অনেকে খোদ জোকোভিচের মিল খুঁজে পাচ্ছেন। এই তালিকায় রয়েছেন স্বয়ং জোকোভিচ। কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ শুরুর আগে তিনি বলেছিলেন, সিনারের খেলা অনেকটা তাঁর মতো। রজার ফেডেরার আবার তাঁর সঙ্গে মিল খুঁজে পেয়েছেন সিনারের। তিনি বলেছিলেন, ‘‘সিনার আমার মতোই ফোরহ্যান্ড এবং ব্যাকহ্যান্ড মারে।’’ ভারতের প্রাক্তন ডেভিস কাপার জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, জোকোভিচের সঙ্গে তিনটি ব্যাপারে মিল রয়েছে সিনারের। এক, ফ্ল্যাট ব্যাকহ্যান্ড। দুই, প্রায় গোটা ম্যাচেই বেস লাইনের পিছন থেকে খেলা। তিন, বিপক্ষকে সারাক্ষণ চাপে রাখার ক্ষমতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy