n উত্তরণ: প্রতিভাধর স্বদেশী অনামি ফুটবলারদের নিয়েই চমক নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড এফসি-র। —ফাইল চিত্র
রূপকথার উত্থান! না কি স্বপ্নের প্রত্যাবর্তন? সপ্তম আইএসএলের শেষ চারে নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড এফসি যোগ্যতা অর্জন করার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু গিয়েছে চর্চা।
মুম্বই সিটি এফসি-কে এই মরসুমে আইএসএলের প্রথম ম্যাচে যখন ১-০ হারিয়েছিল নর্থ ইস্ট, অনেকেই বিস্মিত হয়েছিলেন। টানা ছ’ম্যাচ পরে জামশেদপুর এফসি-র বিরুদ্ধে হেরেছিল বলিউড তারকা জন আব্রাহামের দল। পরের চারটি ম্যাচের মধ্যে হার দু’টিতে। ড্র-ও দু’টি ম্যাচে। এর পরেই স্পেনীয় কোচ জেরার নুস কাসানোভাকে সরিয়ে তাঁর সহকারী খালিদ জামিলের হাতে দলের দায়িত্ব তুলে দেন ক্লাব কর্তারা। চোট পাওয়া বিদেশি কোয়িসি আপিহা-র পরিবর্তে সই করানো হয় বেঙ্গালুরু এফসি-তে ঠিক মতো সুযোগ না পাওয়া ডেসহর্ন ব্রাউনকে। পরের ম্যাচেই জামশেদপুর এফসি-কে ২-১ হারিয়ে সেই যে ঘুরে দাঁড়াল নর্থ ইস্ট, আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ব্রাউনদের। টানা ন’টি ম্যাচে অপরাজিত থেকে আইএসএলের শেষ চারে দ্বিতীয় বারের জন্য যোগ্যতা অর্জন করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ফুটবলে নবজাগরণ ঘটানো নর্থ ইস্ট। এ বার প্রতিপক্ষ এটিকে-মোহনবাগান।
নর্থ ইস্টের এই অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনের নেপথ্যে অন্যতম কারিগর খালিদ জামিল। হাঁটুর চোটের কারণে মাত্র ৩২ বছর বয়সে ফুটবল ছেড়ে কোচিং শুরু করেন তিনি। টানা ছ’টি মরসুম মুম্বই এফসি-তে থাকার পরে যোগ দেন মিজ়োরামের আইজ়ল এফসি-তে। ২০১৬-’১৭-তে অভিষেকের মরসুমেই একঝাঁক তরুণ ও অনামী ফুটবলারকে নিয়ে দলকে আই লিগে চ্যাম্পিয়ন
করেছিলেন খালিদ।
জাতীয় দল থেকে ক্লাব ফুটবল— সর্বত্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ফুটবলারদের দাপট। অথচ সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতায় সেখানকার কোনও ক্লাবের সাফল্য ছিল না। আইজ়লকে আই লিগ জিতিয়ে সে দিন খালিদ শুধু ইতিহাস গড়েননি, প্রমাণ করেছিলেন পরিকল্পনা নিখুঁত হলে ভূমিপুত্ররাও ক্লাবকে সাফল্যের শিখরে নিয়ে যেতে পারেন। সেই দর্শন নিয়েই প্রথম ভারতীয় কোচ হিসেবে নর্থ ইস্টকে আইএসএলের শেষ চারে তুললেন।
আইজ়লকে আই লিগে চ্যাম্পিয়ন করার পরের মরসুমেই ইস্টবেঙ্গলে যোগ দিয়েছিলেন খালিদ। ব্যর্থতার যন্ত্রণায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে লাল-হলুদ ছেড়ে মোহনবাগানের কোচ হন। সেখানও এক পরিস্থিতি। ২০১৯-এ সহকারী কোচ হিসেবে নর্থ ইস্টে যোগ দেন খালিদ। প্রথম বছর থেকেই তাঁর হাতে উত্তরপূর্বাঞ্চলের প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলার খুঁজে বার করার দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন ক্লাব কর্তারা। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে উত্তরপূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মণিমুক্তো খুঁজে এনেছেন খালিদ। এ ছাড়াও সই করিয়েছেন শুভাশিস রায়চৌধুরী, সঞ্জীবন ঘোষ, আশুতোষ মেহতা, সুহের ভি পি, গুরজিন্দর কুমার মতো অভিজ্ঞদের। সোমবার গোয়া থেকে ফোনে খালিদ বললেন, ‘‘দলে ভারসাম্য থাকাটা খুব জরুরি। স্থানীয় ছেলেরা অসাধারণ। দলের শক্তি বাড়াতে আমার চেনা ভিন রাজ্যের কয়েক জন ফুটবলারকে সই করিয়েছি। প্রত্যেকেই নিজেকে
প্রমাণ করেছে।’’
সপ্তম আইএসএলে নর্থ ইস্টের নথিভুক্ত ২৯ জন ফুটবলারদের মধ্যে মাত্র দু’জনের বয়স তিরিশের উপরে। গোলরক্ষক শুভাশিসের বয়স ৩৪। ডিফেন্ডার ল্যাম্বট বেঞ্জামিনের ৩৩। টিম ম্যানেজমেন্টের এক সদস্য বলছিলেন, ‘‘প্রথম বছর থেকেই আমাদের লক্ষ্য ছিল স্থানীয় ফুটবলারদের নিয়ে দল গড়া হবে। না হলে উত্তরপূর্বাঞ্চলে ফুটবলের উন্নতি সম্ভব নয়। এই মরসুমেও আমাদের দলে নয় জন স্থানীয় ফুটবলার নথিভুক্ত করানো হয়েছে।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘খালিদ যোগ দেওয়ায় আমাদের খুব উপকার হয়েছে। ভারতীয় ফুটবলারদের সম্পর্কে ওঁর ধারণা খুব স্বচ্ছ। তাই খালিদের উপরেই স্থানীয় ফুটবলার বাছার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। দুর্দান্ত কাজ করেছেন কোচ।’’
বিদেশি ফুটবলার নির্বাচনও কি খালিদ করেছেন? নর্থ ইস্টের কর্তার কথায়, ‘‘আমাদের একটা কমিটি আছে বিদেশি ফুটবলার নির্বাচনের জন্য। যার শীর্ষে রয়েছেন নর্থ ইস্টের প্রাক্তন কোচ আব্রাহাম গ্রান্ট। এ ছাড়াও ক্রিস্টাল প্যালেসের সঙ্গে দীর্ঘ দিন যুক্ত থাকা ওহাদ এফরাত আছেন। ওঁরা বিদেশি ফুটবলার বেছেছেন। এ ছাড়া আগের কোচ জেরারও সাহায্য করেছিলেন। আপিহা চোট পাওয়ার পরে মরসুমের মাঝপথে ব্রাউনকে নেওয়ার দ্রুত সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন ওঁরা। নেওয়া হয়েছে খালিদের পরামর্শও।’’ তিনি আরও বললেন, ‘‘বিদেশি ফুটবলার নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল, নামের পিছনে ছুটব না। বেশি অর্থও খরচ করব না। ৩০ বছরের কম বয়সি ফুটবলার নেওয়া হবে। যাতে লম্বা লিগে খেলতে সমস্যা না হয়। এই কারণেই বেঞ্জামিন ছাড়া সকলেরই বয়স তিরিশের কম।’’
তারুণ্য ও অভিজ্ঞতার মিশেলে গড়ে তোলা নর্থ ইস্টের আগ্রাসী ফুটবল চলতি আইএসএলে সব দলকেই সমস্যায় ফেলেছে। কলকাতার দুই প্রধানকেই হারিয়েছেন ব্রাউন-রা। এ বার শেষ চারে রয় কৃষ্ণদের হারিয়ে প্রথমবার ফাইনালে ওঠার ব্যাপারে কতটা আত্মবিশ্বাসী? সতর্ক খালিদ বললেন, ‘‘আমি এই মুহূর্তে শনিবার শেষ চারের প্রথম পর্বের ম্যাচটা নিয়েই শুধু ভাবতে চাই। জিতলে এটিকে-মোহনবাগানের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় পর্বে অনেক চাপমুক্ত হয়ে খেলতে পারব।’’
লিগ পর্বে প্রথম বার জিতেছিল সবুজ-মেরুন। দ্বিতীয় সাক্ষাতে জেতে নর্থ ইস্ট। অতীত নিয়ে যদিও ভাবতে রাজি নন খালিদ। বলে দিলেন, ‘‘এটিকে-মোহনবাগান দারুণ শক্তিশালী দল। খেতাবের অন্যতম দাবিদারও। এই ম্যাচটা একেবারে আলাদা হবে। তাই আগে কী হয়েছে তা আমার
কাছে গুরুত্বহীন।’’
চোখের জলে কলকাতা ময়দান ছেড়েছিলেন খালিদ। আইএসএলে চ্যাম্পিয়ন হয়েই কি তার জবাব দিতে চান? শান্ত গলায় খালিদ বললেন, ‘‘জবাব দেওয়ার কিছু নেই। কলকাতার সমর্থকেরা আমার হৃদয়ে চিরদিন থাকবেন। শেষ চারে ওঠার পরে অনেকেই শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। অতীত নিয়ে আর ভাবতে চাই না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy