আশঙ্কা: ফের চোট পাওয়ার পরে মেসি। এএফপি
মাঠের বাইরে শত্রুতা নেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর সঙ্গে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে লিভারপুলের কাছে হেরে এতটাই ভেঙে পড়েছিলেন যে, লা লিগাও গুরুত্বহীন মনে হয়েছিল। কিংবদন্তি দিয়েগো মারাদোনা আর্জেন্টিনায় কোচিং শুরু করায় উচ্ছ্বসিত। ব্যক্তিগত পুরস্কারের থেকে গুরুত্ব দেন দলগত সাফল্যকে। স্বপ্ন দেখেন, স্বদেশে নিউওয়েলসের জার্সি পরে খেলে চিরতরে বুট তুলে রাখার। ফিফার ওয়েবসাইটে খোলামেলা সাক্ষাৎকারে ফিফার বর্ষসেরা লিয়োনেল মেসি এ রকম সব অজানা তথ্য ফাঁস করে গেলেন।
প্রশ্ন: জীবনে অনেক পুরস্কার আপনি জিতেছেন। আগেও জিতেছেন ফিফার বর্ষসেরা। নতুন ফর্ম্যাটে প্রথম বার জিতলেন। কেমন লাগছে?
লিয়োনেল মেসি: আমি খুব খুশি। তবে সব সময়ই বলে এসেছি, ব্যক্তিগত পুরস্কারকে অগ্রাধিকার দিই না। আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ দলগত সাফল্য। ফিফার পুরস্কার হাতে নেওয়ার রাতটা আমার কাছে অবশ্যই বিশেষ অনুভূতির। আমি খুবই ভাগ্যবান যে, এমন সুন্দর একটা রাতে সঙ্গে স্ত্রী ও তিন ছেলের দু’জনকে পাশে পেয়েছি। সবাই মিলে আনন্দটা উপভোগ করতে পেরে দারুণ লেগেছে।
প্রশ্ন: পুরস্কারের প্রসঙ্গকে সরিয়ে রেখে গত মরসুম সম্পর্কে মূল্যায়ন কী?
মেসি: সত্যিই অদ্ভুত অভিজ্ঞতা! পুরো দলটা আগাগোড়া দারুণ খেললেও একটা ম্যাচেই সব ওলটপালট হয়ে গেল (লিভারপুলের বিরুদ্ধে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ফিরতি সেমিফাইনাল)। এই হতাশা এতটাই তীব্র হয়ে উঠল যে, লা লিগা জয়ও গুরুত্বহীন হয়ে গেল। যে কারণে কোপা দেল রে ফাইনালের জন্য নিজেদের মানসিক ভাবে তৈরিই করতে পারিনি। এতটাই সবাই ভেঙে পড়েছিলাম। পুরো মরসুমটা একটা ম্যাচের জন্য এলোমেলো হয়ে গেল। অথচ তার আগে পর্যন্ত সব নিখুঁত ভাবে এগোচ্ছিল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের খুব কাছে চলে এসেছিলাম। শেষ পর্যন্ত ওই যন্ত্রণাটা নিয়েই আমাদের বছরটা শেষ করতে হল।
প্রশ্ন: উয়েফার পুরস্কার অনুষ্ঠানে আপনাকে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর সঙ্গে বন্ধুর মতো আড্ডা মারতে দেখা গেল। আপনাদের এ ভাবে দেখলেই লোকে অবাক হয়। আপনার কী মনে হয়?
মেসি: একটাই কারণ। মাঠে অনেক বছর ধরে আমাদের দ্বৈরথ চলছে। আমি বার্সেলোনার। ক্রিশ্চিয়ানো রিয়াল মাদ্রিদের। দু’জনেই অনেক পুরস্কার জিতি। লোকে হয়তো ভাবে এই লড়াই মাঠের বাইরেও চলে। যা আদৌ সত্যি নয়। নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স দেওয়ার চেষ্টা করি। কেউ হারতে পছন্দ করি না। যে কারণে মাঠে আমাদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়। কিন্তু শুধুই মাঠে থাকে সেটা। মাঠের বাইরে যায় না।
প্রশ্ন: এই মরসুমে শুরুতে আমরা বার্সেলোনায় বেশ কিছু নতুন মুখ দেখা গেল। যেমন আনসু ফাতি। ওঁর কাছে থেকে আপনার প্রত্যাশা কী?
মেসি: ওর পাশে থাকার চেষ্টা করি। অসাধারণ ফুটবলার। সফল হতে যা যা লাগে, সব আছে। তবে সব সময় নিজের অতীতের কথা ভেবে ওকে বিচার করি। আসলে ছেলেটাকে ধীরে ধীরে তৈরি করে দিতে হবে। আমার শুরুর সময়ে সিনিয়ররা একই ভাবে ভাবত। খুব স্বচ্ছন্দে তাই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি। কখনও নিজের উপরে চাপ সৃষ্টি করিনি। মনে রাখবেন, ওর বয়স মাত্র ১৬। আশা করব ছেলেটা ফুটবল উপভোগ করবে। জানি অনেক হইচই হবে। কিন্তু তার নেতিবাচক প্রভাব যেন না পড়ে। সেরা হয়ে ওঠার সব গুণ ছেলেটার আছে।
প্রশ্ন: তা হলে আপনার শুরুর দিনগুলোয় রোনাল্ডিনহোর ব্যবহারের অর্থ এখন বুঝতে পারছেন।
মেসি: রোনাল্ডিনহো আর তখনকার কোচ রাইকার্ড (ফ্রাঙ্ক), দু’জনের কথাই বলব। অবশ্য এক অর্থে পুরো দলটাই। তখন সবাই কোনও না কোনও ভাবে সাহায্য করেছে। বিশেষ করে কোচ। রাইকার্ড আমাকে প্রথম দলে না রাখলে খুব বিরক্ত হতাম (হেসে)। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বুঝেছি উনি ঠিকই করতেন। চিরকাল ওঁর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব। সেটা ওঁকে আমি বলেওছি। যে ভাবে কোচ হিসেবে রাইকার্ড আমাকে ব্যবহার করেছেন, তা আমার ফুটবল জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার।
প্রশ্ন: আপনারও কী কোচ হওয়ার কোনও ইচ্ছে আছে?
মেসি: এখনই এ নিয়ে কিছু বলা কঠিন। শেষ পর্যন্ত কী হবে কেউ বলতে পারে না। আর ওদের দেখে আমার শুধু ছোটদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে হয়। কিন্তু এই মুহূর্তে তেমন সম্ভাবনাও দেখছি না। হতে পারে কয়েক বছর পরে সম্ভাবনা সত্যিই তৈরি হল। কিন্তু এখন এর বেশি বলতে পারছি না।
প্রশ্ন: দিয়েগো মারাদোনার আবার জাতীয় কোচ হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে আপনি কী বলবেন। বা ওঁর নতুন ভাবে কোচিং শুরু করা নিয়ে আপনার কী ভাবনা?
মেসি: আর্জেন্টিনায় দিয়েগো কোচিং শুরু করায় আমি খুব খুশি হয়েছি। জাতীয় দলে ওর কোচিংয়ে খেলেছি। কাজটা সত্যি দিয়েগো উপভোগ করে। আর্জেন্টিনায় জিমনাসিয়ায় ওকে একই ভাবে কাজ করতে হবে। আর্জেন্টিনায় ফিরে ওর কোচিং শুরু করাটা সত্যিই আনন্দের ব্যাপার। ওখানেই তো ওঁকে সব চেয়ে বেশি করা দরকার।
প্রশ্ন: ফুটবল জীবন আর্জেন্টিনায় শেষ করার কথা ভাবছেন?
মেসি: অবশ্যই। ছোটবেলায় স্বপ্ন ছিল নিউওয়েলসের জার্সি পরে খেলার। কিন্তু লা মাসিয়ায় চলে যাই। তবে কবে সে স্বপ্ন সত্যি হবে, নিজেও জানি না। আসলে এই মুহূর্তে ব্যক্তিগত নানা ব্যাপার নিয়ে ডুবে আছি। আমার তিন ছেলেও যে আছে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy