২০২০-র বিধ্বংসী: ৩৯ বলে ৭৫ রান করলেন হিলি (বাঁ-দিকে)। ছবি: গেটি ইমেজেস। (ডান দিকে) ২০০৩-এর স্মৃতি: ওয়ান্ডারার্সে ৪৮ বলে ৫৭ আগ্রাসী গিলক্রিস্টের। ফাইল চিত্র
রবিবার মেলবোর্নে দীপ্তি শর্মার করা প্রথম ওভারটা হওয়ার পরে অনেক ভারতীয় সমর্থকের মনে উঁকি দিয়েছিল ১৭ বছর আগেকার একটা দিন। জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্সে হওয়া ২০০৩ বিশ্বকাপ ফাইনাল।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের দলের বিরুদ্ধে সেখানেও অস্ট্রেলিয়া আগে ব্যাট করেছিল। এ বারও অস্ট্রেলিয়া প্রথমে ব্যাট করে। অধিনায়ক মেগ ল্যানিং টস জিতে ভারতকে ফিল্ডিং করতে পাঠান। সে বার জাহির খানের করা প্রথম ওভারে রান উঠেছিল ১৫। অ্যাডাম গিলক্রিস্টের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে প্রথম থেকেই চাপে পড়ে গিয়েছিল ভারত। ৪৮ বলে ৫৭ করে থেমেছিলেন গিলি। মেরেছিলেন আটটি চার, একটি ছয়। এ বার দীপ্তির প্রথম ওভারে উঠল ১৪। শুরু থেকেই তাণ্ডব শুরু করেন অ্যালিসা হিলি। প্রথম ১০ ওভারেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যান হরমনপ্রীতরা। হিলি থামেন ৩৯ বলে ৭৫ রান করে।
৮৬ হাজারেরও বেশি দর্শকের সামনে এই প্রথম কোনও মেয়েদের প্রতিযোগিতা হল অস্ট্রেলিয়ায়। মেয়েদের ক্রিকেটে তো বিশ্বরেকর্ড বটেই। সেখানে চোখের জলে মাঠ ছাড়তে হল ভারতীয় ক্রিকেটারদের। ফাইনাল ঘিরে শুধুই থাকল ভারতীয় মেয়েদের যন্ত্রণার কোলাজ। কখনও তৃতীয় বলে আউট হয়ে হতাশায় মাঠে বসে পড়ছেন এই বিশ্বকাপের আবিষ্কার শেফালি বর্মা। কখনও ডিপ স্কোয়ারলেগে ক্যাচ দিয়ে মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়ছেন হরমনপ্রীত। আর ম্যাচের শেষে তো চোখের জল মুছতে দেখা যায় শেফালি-স্মৃতি মন্ধানাদের।
চ্যাম্পিয়ন: ভারতকে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিেয় অস্ট্রেলিয়া দলের উৎসব। রবিবার মেলবোর্নে। ছবি: এএফপি।
উল্টো দিকে তখন আবেগের বিস্ফোরণ। এই নিয়ে পাঁচ বার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতলেন অস্ট্রেলিয়ার মেয়েরা। হিলিকে ঘিরে ধরে চলল উচ্ছ্বাস। হিলি যখন ব্যাট করছিলেন, তখন ক্যামেরায় এক বার ধরা পড়ল, ভিআইপি আসনে বসে আছেন মিচেল স্টার্ক। হিলির স্বামী। স্ত্রীর খেলা দেখবেন বলে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে আগেই দেশে ফিরে এসেছেন অস্ট্রেলিয়ার এই ফাস্ট বোলার। স্ত্রী একটার পর একটা ছয় মারছেন আর ক্যামেরা দেখাচ্ছে গর্বিত স্বামী স্টার্ককে।
আরও পড়ুন: হরমনপ্রীতের হতাশ মুখে যেন সৌরভের সেই দিনের ছায়া
হিলির ৩৯ বলে ৭৫ রানের ইনিংসে রয়েছে সাতটি চার, পাঁচটি ছয়। কিন্তু প্রথম ওভারেই এই ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যানের ক্যাচ ফেলে দেন শেফালি। এলিসার সঙ্গী ওপেনার বেথ মুনি ৫৪ বলে ৭৮ রানে অপরাজিত থেকে গেলেন। বেথেরও ক্যাচ পড়ে শুরুতে। যে দুই ক্যাচ ফস্কানোর মাশুল ভীষণ ভাবে দিতে হল ভারতকে।
ম্যাচের পরে হরমনপ্রীত বলেন, ‘‘আমাদের দুর্ভাগ্য, দুটো ক্যাচ ফস্কালাম। কিন্তু এই দলের উপরে আমার পূর্ণ আস্থা আছে। আগের বার আমরা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হেরেছিলাম। এ বার ফাইনালে। মনে হচ্ছে আমরা ঠিক রাস্তাতেই যাচ্ছি।’’
বিষণ্ণ: বিশ্বকাপ ফাইনালে হারের পরে ভারত। স্মৃতিদের সঙ্গে টেনিস কিংবদন্তি বিিল জিন কিং। রবিবার। ছবি: রয়টার্স।
অস্ট্রেলিয়া এক বার ২০ ওভারে চার উইকেটে ১৮৪ রান তুলে দেওয়ার পরে বোঝা গিয়েছিল, ভারতের লড়াইটা দারুণ কঠিন হতে চলেছে। এই লড়াইয়ে ভারতের বড় ভরসা ছিলেন শেফালি। ১৬ বছরের কিশোরী এই বিশ্বকাপে ১৬১ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করছিলেন। বিশ্বের এক নম্বর টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যানও তিনি। এ দিন মেগান শুটের প্রথম বলটা বোলারের মাথার উপর দিয়ে তুলে দু’রান নেন। কিন্তু তৃতীয় বলেই স্বপ্নভঙ্গ। সামান্য শর্ট অব লেংথ বলটাকে উইকেটকিপারের পাশ দিয়ে স্লাইস করার চেষ্টা করেছিলেন শেফালি। ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল উইকেটকিপার হিলির হাতে চলে যায়। এর পরেই ভেঙে পড়ে ভারতীয় ব্যাটিং। ৩০ রানের মধ্যে পড়ে যায় চার উইকেট। স্বপ্নেরও শেষ ওখানে। তানিয়া ভাটিয়া মাথায় চোট পেয়ে উঠে যাওয়ায় তাঁর জায়গায় ‘কনকাশন সাব’ হিসেবে নেমেছিলেন বাংলার রিচা ঘোষ। তিনি চালিয়ে খেলে ১৮ বলে ১৮ রান করেন।
হিলির ক্যাচ ফেলে দেওয়ার জন্য শেফালির দিকে আঙুল উঠলেও তাঁর পাশে দাঁড়াচ্ছেন অধিনায়ক হরমনপ্রীত। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘শেফালির বয়স মাত্র ১৬। প্রথম বিশ্বকাপ খেলছে। এই প্রতিযোগিতায় দারুণ খেলেছে। এখান থেকে ও অনেক কিছু শিখল। ওকে একা দোষ দেওয়ার কোনও মানে নেই।’’ এ দিন অবশ্য নিজের বোলিংয়ে বেথের ক্যাচ ফেলে দিয়েছিলেন রাজেশ্বরী গায়কোয়াড়ও।
স্কোরকার্ড
অস্ট্রেলিয়া ১৮৪-৪ (২০)
ভারত ৯৯ (১৯.১)
অস্ট্রেলিয়া
হিলি ক কৃষ্ণমূ্র্তি বো রাধা ৭৫ • ৩৯
মুনি ন. আ. ৭৮ • ৫৪
ল্যানিং ক শিখা বো দীপ্তি ১৬ • ১৫
গার্ডনার স্টা. ভাটিয়া বো দীপ্তি ২ • ৩
হেইনস বো পুনম ৪ • ৫
ক্যারি ন. আ. ৫ • ৫
অতিরিক্ত ৪ মোট ১৮৪-৪ (২০)
পতন: ১-১১৫ (হিলি, ১১.৪), ২-১৫৪ (ল্যানিং, ১৬.২), ৩-১৫৬ (গার্ডনার, ১৬.৫), ৪-১৭৬ (হেইনস, ১৮.৫)।
বোলিং: দীপ্তি শর্মা ৪-০-৩৮-২, শিখা পাণ্ডে ৪-০-৫২-০, রাজেশ্বরী গায়কোয়াড় ৪-০-২৯-০, পুুনম যাদব ৪-০-৩০-১, রাধা যাদব ৪-০-৩৪-১।
ভারত
শেফালি ক হিলি বো শুট ২ • ৩
মন্ধানা ক ক্যারি বো মোলিনিক্স ১১ • ৮
ভাটিয়া অবসৃত ২ • ৪
জেমাইমা ক ক্যারি বো জোনাসেন ০ • ২
কৌর ক গার্ডনার বো জোনাসেন ৪ • ৭
দীপ্তি ক মুনি বো ক্যারি ৩৩ • ৩৫
বেদা ক জোনাসেন বো কিম্মিন্স ১৯ • ২৪
রিচা ক ক্যারি বো শুট ১৮ • ১৮
শিখা ক মুনি বো শুট ২ • ৪
রাধা ক মুনি বো জোনাসেন ১ • ২
পুনম ক গার্ডনার বো শুট ১ • ৫
রাজেশ্বরী ন. আ. ১ • ৩
অতিরিক্ত ৫ মোট ৯৯ (১৯.১)
পতন: ১-২ (শেফালি, ০.৩), ১-৫* (ভাটিয়া, অবসৃত, ন. আ.), ২-৮ (জেমাইমা, ১.৬), ৩-১৮ (মন্ধানা, ৩.১), ৪-৩০ (কৌর, ৫.৪), ৫-৫৮ (বেদা, ১১.৩), ৬-৮৮ (দীপ্তি, ১৬.১), ৭-৯২ (শিখা, ১৭.১), ৮-৯৬ (রিচা, ১৭.৩), ৯-৯৭ (রাধা, ১৮.১), ১০-৯৯ (পুনম, ১৯.১)।
বোলিং: মেগান শুট ৩.১-০-১৮-৪, জেস জোনাসেন ৪-০-২০-৩, সোফি মোলিনিক্স ৪-০-২১-১, ডেলিসা কিম্মিন্স ৪-০-১৭-১, নিকোলা ক্যারি ৪-০-২৩-১।
৮৫ রানে জয়ী অস্ট্রেলিয়া
ম্যাচের সেরা অ্যালিসা হিলি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy