উপহার: ক্লপের হাতে আত্মজীবনী তুলে দিচ্ছেন টানার (বাঁ দিকে)। নিজস্ব চিত্র
তিরিশ বছর আগে লিগ চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল দলের সদস্য ছিলেন তিনি। ব্রিস্টলে থাকলেও নিজেকে লিভারপুলের বাসিন্দা বলেই পরিচয় দেন নিক টানার। ইংল্যান্ড থেকে আনন্দবাজারকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন পঞ্চান্ন বছর বয়সি লিভারপুলের প্রাক্তন ডিফেন্ডার।
কেনি ডালগ্লিশের ফোন: আমার বয়স তখন ২৩। আমার শহরের তৃতীয় ডিভিশনের ক্লাব ব্রিস্টল সিটির হয়ে খেলছি। সে দিন বাড়িতেই ছিলাম। হঠাৎ ল্যান্ডফোন বেজে উঠল। মা ফোনটা ধরে বাবাকে বললেন, ‘‘নিক-কে ডেকে দাও। ওর সঙ্গে কেউ কথা বলতে চাইছেন।’’ বাবা আমার নাম ধরে চিৎকার করে বললেন, ‘‘কেনি বলে এক জন তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাইছিলেন। ওঁর নম্বর নিয়ে রেখেছি, তোমাকে ফোন করতে বলেছেন।’’ কে কেনি? আমাকে কেন ফোন করতে বলেছেন? এ সব ভাবতে ভাবতে কিছুটা ভয়ে ভয়েই নম্বর ডায়াল করলাম। ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে ভেসে এল সেই কণ্ঠস্বর, ‘‘হাই নিক, আমি কেনি ডালগ্লিশ। সপ্তাহে ৩৩০ পাউন্ডে লিভারপুলে খেলতে কি ইচ্ছুক? তবে অর্থের পরিমাণ কিছুটা বাড়তেও পারে। দ্রুত তোমার সিদ্ধান্ত জানাও।’’ এত দিন পরেও পুরো ব্যাপারটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হয়। কিন্তু ব্রিস্টল সিটির কর্তারা আমাকে ছাড়তে রাজি নন। বারবার বোঝাচ্ছিলেন, লিভারপুলে গেলে আমার কেরিয়ার শেষ হয়ে যাবে। রিজার্ভ বেঞ্চে বসেই মরসুম কাটাতে হবে। এমনকি বেতন বাড়ানোর টোপও দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি ততক্ষণে মনস্থির করে ফেলেছি, কেনি ডালগ্লিশ যখন নিজে ফোন করেছেন, তখন যে কোনও মূল্যে লিভারপুলেই সই করব।
স্বপ্নপূরণের প্রথম ধাপ: ব্রিস্টলের চেয়ে লিভারপুল শহরটা অনেক বড়। সংস্কৃতিও আলাদা। তার উপরে ইয়ান রাশ, জন বার্নসের মতো একঝাঁক তারকা রয়েছে। অনেকেই আমাকে সাবধান করে দিয়েছিল। আমি ভয় পাইনি। প্রথম ধাক্কাটা খেলাম অনুশীলন শুরুর দিন। টু-টাচ পাস খেলার অনুশীলন চলছিল। এক বা দুইয়ের বেশি বার বলে পা ছোঁয়ালেই মাঠ থেকে বার করে দেওয়া হত। এখানেই শেষ নয়। জেমি রেডন্যাপ আমাকে দেখলেই খেপে যেত। ব্রিস্টল সিটিতে খেলার সময় বহুবার ওকে আটকেছি। সেই রাগেই আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করত। যদিও আমাকে দমাতে পারেনি। দাঁতে দাঁত চেপে অনুশীলন করে গিয়েছি প্রথম দলে সুযোগ পাওয়ার জন্য। অভিষেকের মরসুমে ম্যাচ খেলার সুযোগ না পাওয়া সত্ত্বেও ভেঙে পড়িনি। নিজেকে উদ্বুদ্ধ করতাম বিটল্সের গান শুনে।
হিলসবোরো বিপর্যয়: এফএ কাপে সেমিফাইনালে নটিংহ্যাম ফরেস্টের বিরুদ্ধে ম্যাচে আমি স্কোয়াডে ছিলাম না। শেফিল্ডে হিলসবোরো স্টেডিয়ামে দক্ষিণ দিকের গ্যালারিতে আমরা বসেছিলাম। আমাদের বাঁ-দিকেই ঘটনার সূত্রপাত। যদিও গ্যালারিতে বসে প্রথমে বুঝতেই পারিনি ঠিক কী হয়েছে। তবে এটুকু অনুমান করেছিলাম, ভয়ঙ্কর কিছু ঘটেছে। ছ’মিনিটের মধ্যে ম্যাচটা বন্ধ হয়ে যায়। পরে জানতে পেরেছিলাম, ৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেই যন্ত্রণা এখনও মনের মধ্যে কাঁটার মতো বিঁধে রয়েছে। তবে ১৯৯০ সালের লিগ জয় তাতে কিছুটা হলেও প্রলেপ দিয়েছিল।
শহর জুড়ে উৎসব: বৃহস্পতিবার টিভিতে লিভারপুল শহরের ছবিটা দেখে তিরিশ বছর আগের বিকেলের কথ মনে পড়ে গেল। অ্যানফিল্ডে আমাদের প্রতিপক্ষ ছিল কুইন্সপার্ক রেঞ্জার্স। দুঃখজনক ঘটনা হচ্ছে, সে দিনও আমি দলে জায়গা পাইনি। গ্যালারিতে ছিলাম। শুরুতে পিছিয়ে পড়েও দুর্দান্ত ভাবে ঘুরে দাঁড়ায় লিভারপুল। ৬৩ মিনিটে জন বার্নস পেনাল্টি থেকে গোল করার সঙ্গে সঙ্গে উৎসব শুরু হয়ে যায়। ম্যাচের আগে স্টেডিয়ামে ঢোকার সময়ই দেখেছিলাম, বাইরে কয়েক হাজার লিভারপুল সমর্থক উৎসবের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। সে দিন স্টেডিয়াম থেকে বেরিয়ে অ্যাপার্টমেন্টে ফিরতে কয়েক ঘণ্টা লেগে গিয়েছিল। টানা কয়েক দিন ধরে উৎসব চলেছিল লিভারপুল শহরে। সময় বদলালেও প্রিয় ক্লাবের প্রতি সমর্থকদের আবেগ যে চিরকালীন, তা করোনা-আতঙ্কের মধ্যেও দেখলাম। সব কিছু স্বাভাবিক থাকলে আমিও লিভারপুল চলে যেতাম। ব্রিস্টল থেকে তো মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টার পথ। ইচ্ছে আছে, আবার সব ঠিক হয়ে গেলে য়ুর্গেন ক্লপকে অভিনন্দন জানাতে যাব। ওই তো আসল নায়ক।
জাদুকর ক্লপ: লিভারপুলের হয়ে সম্ভবত ৫৭টি ম্যাচ খেলেছি। তা সত্ত্বেও আমার জীবন জুড়ে শুধুই এই ক্লাব। এই কারণেই আত্মজীবনীর নামকরণ করেছি, ‘ফ্রম আ ফিল্ড টু অ্যানফিল্ড’। বোর্নমুথের বিরুদ্ধে লিভারপুল যখন খেলতে এসেছিল এ বছর, তখন য়ুর্গেনের সঙ্গে দেখা করে বইটা উপহার দিয়েছিলাম। বলেছিলাম, তুমিই পারবে তিরিশ বছরের যন্ত্রণা দূর করতে। ধন্যবাদ ‘ম্যাজিশিয়ান’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy