গুরু: ঋষভকে পরামর্শ ধোনির। পূর্বসূরির মন্ত্রই অস্ত্র নতুন প্রতিভার। ফাইল চিত্র
বিশ্বকাপ থেকে শিক্ষা নিয়ে ভারত আর পাকিস্তানকে এখন ভবিষ্যতের দল গড়ে তুলতে হবে। আমি তো বলব, এমন সব ছেলেদের তৈরি করো যারা দশ বছর ধরে দেশের হয়ে খেলতে পারবে।
নব্বইয়ের শেষের দিক থেকে গড়ে ওঠা ভারতীয় দল যেমন ছিল। সচিন, দ্রাবিড়, সৌরভ, সহবাগ, কুম্বলে, হরভজন, শ্রীনাথ, জাহিররা প্রত্যেকে দীর্ঘ দিন ধরে দেশের হয়ে খেলে গিয়েছে। অন্তত দশ বছর করে খেলেছে সকলে। এটাই দরকার। এমন প্রতিভা নিয়ে টিম গড়তে হবে, যারা লম্বা রেসের ঘোড়া হবে। ভারতে অন্তত প্রতিভার অভাব হওয়া উচিত নয়। আইপিএলের মতো মঞ্চ রয়েছে। আমি নিজে আইপিএলে দীর্ঘ দিন কাজ করেছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, দারুণ দারুণ সব নতুন প্রতিভা উপহার দেয় আইপিএল। সেখান থেকে বেছে ভবিষ্যতের জন্য খেলোয়াড়দের তৈরি করা যেতেই পারে।
দীনেশ কার্তিককে দলে নেওয়া হয়েছিল এত বিতর্ক সত্ত্বেও। অনেক দিন ধরে ও খেলছে। ধোনিরও আগে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছে। দারুণ কিছু করতে পারলে তো এত পরে বিশ্বকাপে ডাক পেত না। ভেবে দেখা দরকার ছিল, বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে দারুণ কিছু করার মতো দক্ষতা কার্তিকের আছে কি না। যাক গে, যা হয়েছে, হয়েছে। আমি বলব, সব ভুলে এখন সামনের দিকে তাকাও।
বিশ্বকাপের মতো প্রতিযোগিতায় স্বল্পমেয়াদি নকশা নিয়ে চলে আসার একটা প্রবণতা রয়েছে উপমহাদেশের টিমগুলোর মধ্যে। সেটা এ বার বন্ধ হওয়া দরকার। আমি বিশ্বকাপে কমেন্ট্রি করার ফাঁকে এক দিন মাইকেল ক্লার্ককে জিজ্ঞেস করছিলাম, তোমাদের বিশ্বকাপের প্রস্তুতি কত আগে থেকে শুরু হয়? ক্লার্ক বলল, ওদের দেশে অন্তত দু’বছর ধরে তৈরি করা হয় বিশ্বকাপের দলকে। আমাদের উপমহাদেশেই দেখি, বিশ্বকাপে রওনা হওয়ার পনেরো দিন আগেও জল্পনা-কল্পনা চলছে, কারা স্কোয়াডে থাকতে পারে আর কাদের জায়গা হবে না। এ রকম অনিশ্চয়তার বাতাবরণ তৈরি হবে কেন? এর মধ্যে তো অপেশাদারিত্বের ছোঁয়াও থাকছে। ক্রিকেটারদের মানসিক ভাবে তৈরি হওয়ার সময়টাও তো দিতে হবে। আমার যেমন মনে হয়, ঋষভ পন্থকে যদি চার নম্বরে খেলাবই তা হলে ওকে আর একটু তৈরি হওয়ার সময়ও দেওয়া দরকার ছিল। টি-টোয়েন্টিতে খুব ভাল খেলছে ঋষভ। দুর্দান্ত প্রতিভা কিন্তু সোজাসুজি বিশ্বকাপের মঞ্চে চার নম্বরে নামিয়ে দিলে ওর পক্ষেও তো মানিয়ে নেওয়া কঠিন।
পন্থ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জন্য তৈরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পঞ্চাশ ওভারের ওয়ান ডে অন্য ধরনের খেলা। সেখানে আগ্রাসনের সঙ্গে সতর্কতার মিশ্রণ ঘটাতে হয়। দেখা গেল পন্থের এই জায়গায় খামতি আছে। ও টি-টোয়েন্টির মতো ম্যাচটাকে খেলতে গিয়েছিল। তবু আমি বলব, ভারতীয় ক্রিকেটে অসাধারণ এক প্রতিভা এসেছে। আস্থা দেখাতে পারলে অনেক দূর যাবে এই ছেলে। তত দিন ধোনির অধীনে রেখে দেওয়া যেতে পারে ওকে। ধোনি কবে অবসর নেবে, সেটা সম্পূর্ণ ওর ব্যাপার। তবে আমার মতে, আরও কিছু দিন ও খেলতেই পারে। সেই সময়টা পন্থের মতো তরুণরা ওর থেকে শিখে নিক। ধোনির মতো কিংবদন্তির কাছ থেকে শেখার শেষ নেই। কী ভাবে ম্যাচ শেষ করতে হয়, ওর চেয়ে ভাল কেউ জানে না।
বিশ্বকাপের অন্তত এক বছর আগে থেকে ওকে খেলিয়ে আত্মবিশ্বাসী করে তোলা যেত। সেমিফাইনালে যে ভাবে ও চালাতে গিয়ে আউট হয়েছে, সেটা বেশি ওয়ান ডে না খেলার অভিজ্ঞতার অভাবে। পন্থ যদি অন্তত তিরিশটা ওয়ান ডে খেলেও বিশ্বকাপে আসতে পারত, আরও অনেক ভাল ফল দিতে পারত। সময় দিলে এই ঋষভ পন্থই হয়তো অনেক ম্যাচ জেতাবে।
ভারত কেন মহম্মদ শামিকে বসিয়ে রাখল, সেটাও আমি বুঝতে পারিনি। মানছি, শামি বেশি রান দিয়ে ফেলে। কিন্তু ওর মধ্যে উইকেট তোলার দক্ষতাও অনেক বেশি রয়েছে। লাইন-লেংথের ব্যাপারে ভুবনেশ্বর কুমার হয়তো অনেক বেশি নিখুঁত কিন্তু দলে উইকেট নেওয়ার বোলার সব সময় থাকা দরকার। কে বলতে পারে, ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের সেমিফাইনালে শামি থাকলে আরও কম রানে নিউজ়িল্যান্ড অলআউট হয়ে যেত না! শামি হ্যাটট্রিক করার পরে প্রত্যেকটা ম্যাচে উইকেট পেয়েছে। দারুণ ছন্দে ছিল। ভুবি খুব ভাল বোলার কিন্তু চোট থেকে ফিরছিল। আগের ছন্দে ছিল না।
টুর্নামেন্টের ফর্ম্যাট পাল্টানোরও কথা উঠেছে। একটা টিম গ্রুপ পর্বে সেরা হয়ে মাত্র একটা খারাপ দিনের জন্য বিদায় নেবে কেন? নিশ্চয়ই ভেবে দেখার মতো প্রশ্ন। আইপিএলে এই সুবিধেটা পায় সব চেয়ে উপরে থাকা দু’টি টিম। ওরা দু’টো করে সুযোগ পায় ফাইনাল খেলার। এখন এ নিয়ে কথা বলে কোনও লাভ নেই। যা হওয়ার হয়েই গিয়েছে। আর তো কেউ নিয়ম পাল্টাতে পারবে না। সত্যিই যদি নতুন কোনও সেমিফাইনাল পদ্ধতি আনার কথা ওঠে, তা হলে পরের বিশ্বকাপ হওয়ার আগে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy