Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
মরসুমের সেরা থ্রোয়ে আবার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন সোনার ছেলে
Paris Olympics 2024

আসল লড়াই তো ফাইনাল, বলছেন সাবধানি নীরজ

মঙ্গলবার সকালে স্তাদ দে ফ্রান্স মনে করিয়ে দিল, ভারতেরও একজন সোনাজয়ী আছে। এক জন চ্যাম্পিয়ন আছে। যাঁকে সারা বিশ্ব চেনে। নীরজ চোপড়া।

অপ্রতিরোধ্য: প্রথম ছোড়াতেই ফাইনালের ছাড়পত্র নীরজের।

অপ্রতিরোধ্য: প্রথম ছোড়াতেই ফাইনালের ছাড়পত্র নীরজের। ছবি: পিটিআই।

সুমিত ঘোষ
প্যারিস শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২৪ ০৮:১৫
Share: Save:

ওই আসছেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন! ওই আসছেন অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন!

কোনও ভারতীয় সম্পর্কে এমন কথা শোনা যেতে পারে, ভুলেই গিয়েছিল সবাই। সাকুল্যে তিনটি ব্রোঞ্জ পেয়ে পদক তালিকায় তলানিতে যে দেশ, তাদের নিয়ে আর কে আলোচনা করতে যাচ্ছে?

মঙ্গলবার সকালে স্তাদ দে ফ্রান্স মনে করিয়ে দিল, ভারতেরও একজন সোনাজয়ী আছে। এক জন চ্যাম্পিয়ন আছে। যাঁকে সারা বিশ্ব চেনে।

নীরজ চোপড়া। যোগ্যতা অর্জন পর্বে জ্যাভলিন তারকার উপরে তাক করে বসে থাকলেন সারা পৃথিবীর আলোকচিত্রীরা। তাঁর বক্তব্য শুনতে মিক্স‌ড জ়োনে ছুটলেন বিদেশী সাংবাদিকেরা। আর সেই উন্মাদনাকে উস্কে দিয়ে কোয়ালিফাইং রাউন্ডে প্রথম থ্রো-তেই তাক লাগিয়ে দিলেন নীরজ। ৮৯.৩৪ মিটার। এক থ্রো-তেই ফাইনালের যোগ্যতা অর্জন করে ফেললেন। যেন বাঁয়ে হাত কা খেল। স্তাদ দে ফ্রান্সে যে অনেক ভারতীয় নীরজের কোয়ালিফাইং ইভেন্ট দেখতেও ছুটে আসবেন ভাবা যায়নি। দুর্ধর্ষ প্রথম থ্রোয়ের পরে গর্জন শুনে বোঝা গেল। হেলায় যোগ্যতা অর্জন করার পরে নীরজ ফাইনালে নামবেন বৃহস্পতিবার। সেদিন স্তাদ দে ফ্রান্সের বেগুনি ট্র্যাক আর নীল আলোর পাশাপাশি তেরঙ্গার দাপটও দেখার আশা করা যেতে পারে।

জ্যাভলিনে অটোমেটিক কোয়ালিফিকেশন মার্ক ৮৪ মিটার। নীরজ মরসুমের সেরা থ্রো করে প্রথমেই যোগ্যতা অর্জন করে ফেলেন। যদিও মিক্স‌ড জ়োনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুরুতেই যা বললেন, তাতে পরিষ্কার যে, পাখির চোখ দেখছেন। ‘‘ইয়ে তো কোয়ালিফিকেশন রাউন্ড থা। জিতনা জলদি ছোড় দিজিয়েগা উতনা হি অচ্ছা হ্যায়। ফাইনাল অভি বাকি হ্যায়,’’ বললেন তিনি। (এটা তো শুধুই যোগ্যতা অর্জন পর্ব। তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিলেই ভাল হয়। ফাইনাল এখনও বাকি)। আবার প্রশ্ন হল, এত ভাল ফল করলেন কোয়ালিফাইংয়ে। নিশ্চয়ই সোনা জয়ের কথা ভাবছেন। নীরজ সেই সাবধানি। ফের বললেন, ‘‘এটা কোয়ালিফিকেশন রাউন্ড। এখনই এত সব ভাবার মানে হয় না। ফাইনালে অন্য খেলা হয়, অন্য মানসিকতা নিয়ে সবাই নামে।’’ যোগ করলেন, ‘‘আমার মনে হয় শুরুটা ভাল হয়েছে। এর বেশি কিছু না ধরে নেওয়াই ভাল। ফাইনালে নতুন লড়াই, নতুন ভাবে তৈরি হয়ে আসতে হবে আমাকে।’’

মিক্সড জ়োনে থিকথিক করছে সাংবাদিকের ভিড়। জার্মানি থেকে আসা এক মহিলা সাংবাদিক ঘণ্টাখানেক দাঁড়িয়ে থাকলেন নীরজের বক্তব্য শুনবেন বলে। হিন্দিতে তিনি কী বলছিলেন, তা ইংরেজিতে অনুবাদ করে দেওয়ার অনুরোধ জানালেন ভারতীয় সাংবাদিকদের কাছে। তার পরে নিজে একটা প্রশ্ন করার অনুরোধ জানালেন। সেই আর্জি মঞ্জুর হল। প্যারিসে আসার আগে জার্মানিতে অলিম্পিক্সের মহড়া নিয়েছিলেন নীরজ। তা নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন জার্মান টেলিভিশনের মহিলা প্রতিনিধি। নীরজ বললেন, ‘‘জার্মানিতে আমি দুই সপ্তাহ ট্রেনিং করেছি। দ্বিতীয় সপ্তাহে বৃষ্টির মধ্যে পড়েছিলাম তবে খুবই ভাল প্রস্তুতি নিতে পেরেছি।’’ তিনি অবশ্য একা নন, ব্যাডমিন্টন এবং তিরন্দাজি দলও জার্মানিতে ট্রেনিং করেছে অলিম্পিক্সের জন্য।

বাকি দুই ইভেন্টে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে। গোটা দেশ এ বার তাকিয়ে জ্যাভলিনের দিকে। কতটা আত্মবিশ্বাস দিয়ে গেল আজকের এই থ্রো? নীরজ বললেন, ‘‘নিশ্চয়ই অনেকটা আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। অনুপ্রেরণাও দিয়ে গেল, ফাইনালে ভাল করার।’’ তার পরেই ফের সেই পাখির চোখ দেখা, ‘‘আজকেরটা ফাইনালে ওঠার জন্য দরকার ছিল। সবাই দেখবে ফাইনালে কী হল। ওটাই আসল। ফাইনালের জন্যই তো নিজের সেরাটা বাঁচিয়ে রাখে সবাই।’’ ফাইনালে কে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী? নীরজের জবাব, ‘‘সবাই প্রতিদ্বন্দ্বী। যারা ফাইনালে ওঠে তারা সকলেই কোয়ালিফাইং রাউন্ডে ভাল করে আসে। সেই কারণেই ফাইনালে ওঠে।’’ এ দিন যোগ্যতা অর্জন পর্ব ছিল সকালে। রোদের মধ্যে। ফাইনাল হবে রাতে। কোনও তফাত হতে পারে? বললেন, ‘‘রাতে একটু ঠান্ডা ভাব থাকতে পারে। তার জন্য আলাদা ভাবে যা প্রস্তুতি নেওয়া দরকার, তা নিয়ে আসতে হবে।’’

নীরজ কেন সাবধানি, তা এ দিনের যোগ্যতা অর্জন পর্বের স্কোরবোর্ড দেখলেই বোঝা যাবে। অনেকেই দারুণ ছুড়লেন। তাঁর গ্রুপ থেকে ব্রাজিলের মরিসিয়ো লুইস দা সিলভার সেরা থ্রো ৮৫.৯১। অন্য গ্রুপ থেকে জুলিয়েন ওয়েবের এবং ইয়াকুব ভালদেসও প্রথম থ্রোতেই যোগ্যতা অর্জন করলেন। জুলিয়েন ছুড়লেন ৮৭.৭৬। ইয়াকুব ৮৫.৬৩। ভারতের কিশোর জেনা ছিটকে গেলেন। কিশোরের দুটি থ্রো যোগ্যতামানের নীচে। ৮০.৭৩, ৮০.২১। অন্যটি ফাউল থ্রো হল। নিজের গ্রুপে নবম হলেন তিনি। সব মিলিয়ে ১৮তম।

নীরজের প্রিয় বন্ধু পাকিস্তানের আর্শাদ নাদিমও প্রথম থ্রো-তে ৮৬.৫৯ মিটার ছুড়লেন। সীমান্তের কাঁটাতার উপেক্ষা করে দু’জনের বন্ধুত্ব খেলার দুনিয়ায় উদাহরণ। প্যারিস অলিম্পিক্সে দারুণ হইচই ফেলে দিয়েছে জিমন্যাস্টিক্সের একটি ছবি। মেয়েদের ফ্লোর ফাইনালে সিমোন বাইলসদের হারিয়ে সোনা জেতেন ব্রাজিলের রেবেকা আন্দ্রাদে। তিনি যখন পোডিয়ামে সোনা নিতে উঠেছেন, হাঁটু মুড়ে বসে কুর্নিশ করলেন রুপো ও ব্রোঞ্জজয়ী দুই আমেরিকান প্রতিদ্বন্দ্বী বাইলস এবং জর্ডান চাইলস। বলা হচ্ছে, অলিম্পিক্সের সর্বকালের সেরা ছবি জাদুঘরে রেখে দেওয়ার মতো দৃশ্য। নীরজ ও নাদিম সম্প্রীতির যুগলবন্দির আর উজ্জ্বল উদাহরণ।

নাদিম এ দিন বলে গেলেন, ‘‘নীরজের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা উপভোগ করি, আবার একে অন্যের সাফল্যেও খুশি হই। ভাল লাগছে আর একটা ফাইনালে আমরা দু’জনেই লড়ব।’’ বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ দিয়ে গেলেন ভারতীয় দর্শকদের, যাঁরা গ্যালারি থেকে তাঁকেও উৎসাহ দিচ্ছিলেন। ক্রিকেটে বিরাট কোহলির মহম্মদ রিজ়ওয়ানকে স্নেহের আলিঙ্গন করার সেই বিখ্যাত ছবি মনে করিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা।

অলিম্পিক্সে সব চেয়ে জনপ্রিয় তিনটি ইভেন্টের মধ্যে থাকবে অ্যাথলেটিক্স, সাঁতার এবং জিমন্যাস্টিক্স। স্তাদ দে ফ্রান্সে অ্যাথলেটিক্স হচ্ছে। তাই জ়িনেদিন জ়িদানের বিশ্বকাপ জয়ের মাঠে সব সময় ভিড় লেগেই আছে। সব বেশি সাংবাদিকের ঝাঁকও এখানেই আসে। দু’দিন আগে নোয়া লাইলস ১০০ মিটার দৌড় জিতেছিলেন এখানেই। সের্গেই বুবকার পরে নতুন পোল ভল্ট সম্রাট সুইডেনের আর্মান্দ ডুপ্লান্টিস সোমবার রাতে বিশ্বরেকর্ড গড়ে সোনা জিতলেন। টানা দ্বিতীয় বার অলিম্পিক্স সোনা জয়ের নজির অ্যাথলেটিক্সে অনেক কিংবদন্তিরও নেই। সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা কয়েকটি নাম— ইউসেইন বোল্ট, এলেন থম্পসন, মো ফারাহ। ডুপ্লান্টিস সেই গ্রহে ঢুকে পড়লেন। বৃহস্পতিবার নীরজ চোপড়াও যোগ দিতে পারেন যদি সোনা জেতেন।

যোগ্যতা অর্জন পর্ব ধরলে নীরজের থ্রো সেরা। কিন্তু মনে রাখা দরকার, ফাইনালে ওঠা বারো জনের মধ্যে ন’জন প্রথম থ্রো-তেই যোগ্যতা অর্জন করেছেন। টোকিয়োয় ছ’জন অটোমেটিক কোয়ালিফিকেশন পেয়েছিল। এখানে ন’জন।

স্তাদ দে ফ্রান্সে বৃহস্পতিবার আর এক রুদ্ধশ্বাস ফাইনাল! সারা ভারতযার অপেক্ষায়!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy