মাহি ও তাঁর দাদা নরেন্দ্র। —ফাইল চিত্র।
ক্রিকেটবিশ্বের সেরা ‘ফিনিশার’ হিসেবে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে চেনেন সবাই। কিন্তু তাঁর থেকে ১০ বছরের বড় দাদা নরেন্দ্র ওপেনার ধোনির হদিশ দিলেন। ক্রিকেটমাঠে ব্যাট হাতে অসংখ্য মণিমানিক্য ছড়িয়ে গিয়েছেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক। সেই সব ইনিংসের থেকেও ওপেন করতে নেমে ধোনির মারকাটারি ৯৬ রানের ইনিংসে এখনও বুঁদ নরেন্দ্র।
রাঁচী থেকে আনন্দবাজার ডিজিটালকে বিশ্ববন্দিত নায়কের দাদা বললেন, ‘‘মাহির একটা খেলাই স্টেডিয়ামে বসে দেখেছি। ২০০৬ সালে কিনান স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ম্যাচটা ছিল। সহবাগের সঙ্গে ওপেন করতে নেমেছিল মাহি। প্রচণ্ড গরম ছিল সেই সময়ে। তাই গ্যালারিতে বসে পুরো ম্যাচটা আর দেখা হয়নি। মাহির ৯৬ রানের ইনিংসটা কেবল পুরোটা দেখেছিলাম। তার পরে আমরা সবাই হোটেলে ফিরে আসি। ম্যাচটা অবশ্য ভারত হেরে গিয়েছিল।’’
সিনিয়র দলের হয়ে দীর্ঘ ক্রিকেটজীবনে ধোনি কেবল দু’বার ইনিংস ওপেন করতে নেমেছিলেন। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ব্যর্থ হন তিনি। ইংল্যান্ডের বিরদ্ধে গর্জে উঠেছিল তাঁর ব্যাট। সেই ইনিংস প্রসঙ্গে নরেন্দ্র বলছিলেন, ‘‘মাহির কেরিয়ারের শুরুর দিকের ইনিংস ছিল ওটা। তাই অনেকেরই হয়তো স্মৃতি থেকে মুছে গিয়েছে ওই ইনিংস। ব্যাটিং অর্ডারে উপরের দিকে নেমে মাহি যে সমান ভয়ঙ্কর। তা প্রমাণিতই হয়ে গিয়েছিল ওই ম্যাচে।’’
আরও পড়ুন: ‘কাঁধে বল লাগলেও সে দিন সচিনকে আউট দিয়ে কোনও ভুল করিনি’
তিন নম্বরে নেমে পাকিস্তানকে একাই শেষ করে দিয়েছিলেন লম্বা চুলের ধোনি। ‘হেলিকপ্টার ঝড়’-এর সেই ইনিংস প্রসঙ্গে বেশি কিছু বলতে চান না নরেন্দ্র। তাঁর যুক্তি, ‘‘গোটা কেরিয়ার জুড়ে যে অসংখ্য ভাল ভাল ইনিংস উপহার দিয়েছে, আলাদা করে তার কোন ইনিংসের কথা বলব?’’
তাঁর বিখ্যাত ভাইকে নিয়ে নিরন্তর চর্চা ভারতের ক্রিকেটমহলে। অথচ ধোনি নিশ্চুপ। দাদা নরেন্দ্রও প্রচারের আলো থেকে বহু দূরে। ভাইয়ের বায়োপিকে দেখানোই হয়নি দাদাকে। তার পরে দু’ ভাইয়ের সম্পর্ক নিয়ে অনেক কালি খরচ হয়েছিল। কেউই খুল্লমখুল্লা কিছু বলেননি। তাতে দু’জনকে নিয়ে জল্পনা আরও বেড়েছে।ক্রিকেট-বৃত্তেও তাঁকে নিয়ে চর্চা কম।অজিত তেন্ডুলকর, ভূষণ-রমেশ নিখাঞ্জদের সঙ্গে এক নিঃশ্বাসে উচ্চারিতও হয় না নরেন্দ্রর নাম। পথেঘাটে ধোনির দাদা হিসেবে কেউ চিনতেও পারেন না। এই জীবনটাই বেশ উপভোগ করছেন তিনি। নরেন্দ্র বলছিলেন, ‘‘মাহি আমার থেকে ১০ বছরের ছোট। ও ভাল করে ব্যাট ধরার আগেই তো আমাকে রাঁচী ছাড়তে হয়েছিল। পরে আমি যখন ফিরে আসি তখন ও দেশের হয়ে খেলতে শুরু করে দিয়েছে। আর আমাকে না চেনার কথা বলছেন? ভালই তো। বিভিন্ন শহরে মন খুলে আমি ঘুরতে পারি। কয়েক বছর আগেই ভাইচুং ভুটিয়ার র্যালিতে গিয়েছিলাম কলকাতায়। দুই সপ্তাহ থেকেছিলাম। আমাকে কেউ চিনতেই পারেনি। আর চিনবেই বা কেন? খুব ভাল করে দেখলে হয়তো বোঝা যাবে মাহির সঙ্গে মুখের মিল রয়েছে। ব্যস ওইটুকুই।’’
দিন দু’য়েক আগে আইসিসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ বছর টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বল আর গড়াবে না। নিন্দুকরা বলতে শুরু করে দিয়েছেন, ধোনির জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তন কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে গেল। তাঁর অবসর নিয়ে দেশ জুড়ে চলছে জল্পনা। এ রকম আবহে নরেন্দ্র বলছেন, ‘‘পৃথিবীতে কোনও কিছুই চিরস্থায়ী নয়। এমন কোনও প্লেয়ার নেই যিনি সারাজীবন ধরে খেলে গিয়েছেন। ধ্যানচাঁদ, পেলের মতো জাদুকরদেরও অবসর নিতে হয়েছে। ওঁরা খেলতে পারতেন না বলে যে অবসর নিতে বাধ্য হয়েছিলেন এমন তো নয়।’’
ভাইয়ের অবসর প্রসঙ্গ সযত্নে এড়িয়ে গেলেন দাদা।
পুরানো সেই দিনের কথা। দাদা নরেন্দ্রর সঙ্গে ধোনি।
অবশ্য বলবেনই বা কী! ধোনি তো রহস্যে ঘেরা এক ব্যক্তিত্ব। তিনি কী করছেন, কী ভাবছেন, কী ভাবছেন, সেই খবর কেউই টের পান না। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের পর থেকে ক্রিকেট মাঠে আর দেখা যায়নি ধোনিকে। শেষ চারের লড়াইয়ে ধোনি রান আউট হতেই ভারত ম্যাচ থেকে হারিয়ে যায়। সেই হৃদয়বিদারক হার প্রসঙ্গে নরেন্দ্র বলছেন, ‘‘২০১৯ বিশ্বকাপে চারটে উইকেট চলে যাওয়ার পরেও মাহিকে ব্যাট করতে না পাঠানোটা আমার কাছে ভুল সিদ্ধান্ত। মাহিকে পরের দিকে ঠেলে দেওয়ার সিদ্ধান্তটা মানিতে পারিনি। ও যদি ২০ ওভার আগে ব্যাট করতে নামত, তা হলে ভারত পাঁচ ওভার বাকি থাকতে ম্যাচ জিতে যেত।’’
বিশ্বকাপ থেকে ভারত ছিটকে যেতেই সমালোচকরা নখ-দাঁত বের করেছেন। অনেকেই বলতে শুরু করে দেন, পুরনো সময় ফেলে এসেছেন ধোনি। নষ্ট হয়ে গিয়েছে তাঁর রিফ্লেক্স। বিশ্বকাপ জুড়ে মন্থর ব্যাটিং করেছেন— এমন গঞ্জনাও হজম করতে হয়েছে ধোনিকে। দেশের প্রাক্তন অধিনায়ক অবশ্য এ সব সমালোচনার জবাব দেননি। ভাইয়ের হয়ে দাদা ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যা দিয়ে বলছেন, ‘‘বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন যে, শেষ ২০ ওভার বল একদমই ব্যাটে আসছিল না। সেট হয়ে যাওয়া ব্যাটসম্যানও রান করতে পারছিল না। ফলে আমার মনে হয় মাহিকে ব্যাটিং অর্ডারে আরও উপরের দিকে তুলে আনাই যেত।’’
আরও পড়ুন: অগস্টে হতে পারে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ?
কিন্তু তাঁর ভাই তো চিরকাল নীচের দিকে নেমেই দেশবাসীর মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। যত কঠিন ম্যাচই হোক না কেন, শেষ বল পর্যন্ত জেতার আশা তৈরি করে রেখেছেন। নরেন্দ্র বলছেন, ‘‘ব্যাটিং অর্ডারে নীচের দিকে নেমে ১০ হাজার রান করেছে মাহি। এত নীচে ব্যাট করতে নেমে এত রান কেউ করতেই পারবে না। শুরুর দিকে যাঁরা ব্যাট করতে নামেন, তাঁরা ৩০-৪০টা ডট বল খেলেন। ওঁদর হাতে সময় থাকে। কিন্তু যাঁরা নীচের দিকে ব্যাট করতে নামেন, তাঁরা এই সুবিধা পান না। সেট হওয়ার জন্য যথেষ্ট সময়ই থাকে না। সেট হওয়ার আগেই ওভার শেষ হয়ে যায়। মাহি এই কঠিন কাজটাই তো চিরকাল করে গেল কত সহজ ভাবে।’’
ধোনির পৃথিবী থেকে বহু দূরে তিনি। সে ভাবে কথাবার্তাও হয়তো হয় না। ধেয়ে আসা সমালোচনার ঝড়ের মুখে ভাইয়ের হয়ে ব্যাটিংই করলেন গর্বিত দাদা নরেন্দ্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy