রেকর্ড সংখ্যক দশ নম্বর ফরাসি ওপেন জেতার পরে ট্রফি নিয়ে রাফায়েল নাদাল। রবিবার। ছবি: রয়টার্স
স্ট্যান ওয়ারিঙ্কার ব্যাকহ্যান্ডটা নেটে জড়িয়ে যেতেই সটান কোর্টে শুয়ে পড়লেন তিনি। যে মাটির গন্ধ তাঁর রন্ধ্রে রন্ধ্রে। যে মাটিতে তিনি দাঁড়ালে একটাই আওয়াজ ওঠে— ‘সম্রাট’। ফাইনালে তাঁকে যেখানে কেউ কোনও দিন হারাতে পারেনি। রবিবারও ইতিহাস পাল্টাল না। রোলঁ গ্যারোজ তাঁর সম্রাটকে ইতিহাসে জায়গা করে দিল কাউকে অবাক না করেই। যেন এটাই প্রত্যাশিত ছিল। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে ফরাসি ওপেনে এ যেন আর এক রূপকথা। সম্রাট ফিরে পেলেন তাঁর মুকুট দশ নম্বর ফরাসি ওপেন জিতে। তিনি— রাফায়েল নাদাল।
স্ট্যানিসলাস ওয়ারিঙ্কাকে স্ট্রেট সেটে হারিয়ে শুধু তিন বছর পরে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতাই নয়, একটা গ্র্যান্ড স্ল্যাম দশ বার জেতার অনন্য নজির গড়লেন নাদাল। যাকে বলা হচ্ছে ‘লা দেসিমা’। যে নজির ওপেন যুগে আর কারও নেই। ফাইনালের ফল নাদালের পক্ষে ৬-২, ৬-৩, ৬-১।
‘‘লা দেসিমা করাটা ভীষণ ভীষণ স্পেশ্যাল অনুভূতি। আবেগে ভেসে যাচ্ছি। এই অনুভূতিটা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব,’’ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে বলেন নাদাল। সঙ্গে অবশ্য কেন রোলঁ গ্যারোজ তাঁর এত কাছের সেটাও বুঝিয়ে দিতে বলেন, ‘‘বিশ্বের অন্য টুর্নামেন্টগুলোর সঙ্গে ফরাসি ওপেনের তুলনা করা কঠিন। এখানে নামলে যে অনুভূতি হয়, অ্যাড্রিনালিনের যে ক্ষরণ হয়, সেটা অন্য কোথাও হয় না।’’
আরও পড়ুন: সেরিনাই আদর্শ জেলেনার
রজার ফেডেরার খেলেননি। নোভাক জকোভিচের কোর্টের দুঃসময় কাটছে না। অ্যান্ডি মারেও ফর্মের চূড়োয় উঠতে পারেননি ক্লে কোর্টের গ্র্যান্ড স্ল্যামে। তাই অনেকে হয়তো বলতে পারেন নাদালের জন্য প্রত্যাবর্তনের এর থেকে সেরা সুযোগ ছিল না। টেনিস বিশ্বের ‘ফ্যাব ফোর’-এর তিন জনই তো ছন্দে নেই। নাদাল এ বার কী রকম দাপট দেখিয়েছেন সেই পরিসংখ্যান দেখলে অবশ্য তাঁরা মত পাল্টাতে বাধ্য।
কেরিয়ারের ২২তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনাল খেলতে নেমে কোনও সেট না খুইয়ে এই নিয়ে তৃতীয় বার জিতলেন তিনি। গোটা টুর্নামেন্ট জুড়েই স্প্যানিশ মহাতারকা যে দাপট দেখিয়েছিলেন সেটা বজায় ছিল ফাইনালে সুইস প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধেও। টুর্নামেন্ট জুড়ে মাত্র ৩৫টা গেম হারিয়েছেন নাদাল। ফাইনালে সংখ্যাটা ৬। ২০০৮-এ ফরাসি ওপেনের ফাইনালে রজার ফেডেরারের বিরুদ্ধে মাত্র চারটে গেম হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নজির গড়ার পরে তাঁর এ রকম দাপট বহুদিন দেখা যায়নি। অবশ্য গ্র্যান্ড স্ল্যামে দাপট দেখানোর দিক থেকে হয়তো এ বারের ফরাসি ওপেন সবচেয়ে এগিয়ে থাকবে না। তবে দু’নম্বরে থাকতেই পারে। ১৯৭৮ ফরাসি ওপেনের পরে। যে বার বিয়র্ন বর্গ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে গেম হারিয়েছিলেন ৩২টি।
৪৪ বছর পরে ফরাসি ওপেনের ফাইনালে ওঠা বয়স্কতম খেলোয়াড় ছিলেন এ দিন নাদালের প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়ারিঙ্কা। তাঁর কেরিয়ারের চতুর্থ গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনাল। রজার ফেডেরারের দেশের খেলোয়াড়ও গ্র্যান্ড স্ল্যামে ফাইনালে কোনও দিন হারেননি এর আগে। তবে সেমিফাইনালে উঠতে তাঁকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা লড়াই করতে হয়েছিল অ্যান্ডি মারের বিরুদ্ধে। তা সত্ত্বেও এ দিন তৃতীয় গেমে প্রথম ব্রেক করেছিলেন ওয়ারিঙ্কা। ব্যাস ওই টুকুই! দু’ঘণ্টা ৫ মিনিটের বাকিটা জুড়ে দেখা গেল শুধুই সম্রাটের শাসন।
তিন বছর পরে শুধু লাল মাটির সাম্রাজ্য ফিরে পাওয়াই নয়, রবিবার নাদাল ওপেন যুগে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ীদের তালিকাতে টপকে গেলেন পিট সাম্প্রাসের ১৪ গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের রেকর্ডও। তাঁর সামনে শুধু এক জনই— রজার ফেডেরার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy