Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

গাওস্করকে বিঁধে পাল্টা তোপ প্রসাদের

মঙ্গলবার সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে একটি সাক্ষাৎকার দেন প্রসাদ। যেখানে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, আপনাদের অভিজ্ঞতা এবং যোগ্যতা নিয়ে অনেক কথা বলা হচ্ছে। এতে কি আপনারা আঘাত পেয়েছেন?

জবাব: গাওস্করের বক্তব্যের বিরোধিতা মঞ্জরেকর এবং প্রসাদের। ফাইল চিত্র

জবাব: গাওস্করের বক্তব্যের বিরোধিতা মঞ্জরেকর এবং প্রসাদের। ফাইল চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৯ ০৪:৩৬
Share: Save:

সুনীল গাওস্করের বিতর্কিত মন্তব্যের পাল্টা জবাব দিলেন জাতীয় নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান এম এস কে প্রসাদ। দিন কয়েক আগে গাওস্কর নিজের লেখায় জাতীয় নির্বাচকদের ‘অকর্মণ্য’ বলে আক্রমণ করেছিলেন। প্রশ্ন তুলেছিলেন, তাঁদের যোগ্যতা নিয়ে। এমনও দাবি তোলেন যে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে স্বল্প অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লোকেদের নির্বাচক করা হয়েছে। তাই তাঁরা কাঠপুতুল হয়েই থেকে গিয়েছেন। যা নিয়ে এ বার মুখ খুললেন প্রসাদ।

মঙ্গলবার সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে একটি সাক্ষাৎকার দেন প্রসাদ। যেখানে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, আপনাদের অভিজ্ঞতা এবং যোগ্যতা নিয়ে অনেক কথা বলা হচ্ছে। এতে কি আপনারা আঘাত পেয়েছেন? প্রসাদের জবাব, ‘‘একটা কথা বলি। নির্বাচক কমিটির সব সদস্যই বিভিন্ন ফর্ম্যাটে ভারতের হয়ে খেলেছে। নির্বাচকদের বাছাই করার সময় ওটাই যোগ্যতামান ধরা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সরিয়ে রাখলেও আমরা সবাই মিলে ৪৭৭টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছি। তা ছাড়া নির্বাচকের দায়িত্ব নেওয়ার পরে আমরা সবাই মিলে দুশোটারও বেশি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ দেখেছি। প্রতিভা খুঁজে বার করার পক্ষে আমাদের এই অভিজ্ঞতা কি যথেষ্ট নয়?’’

আপনাদের যে ভাবে ‘অকর্মণ্য’ বলা হয়েছে, তাতে কি রাগ হচ্ছে না? প্রশ্ন করা হয়েছিল প্রসাদকে। যার জবাবে নির্বাচক-প্রধান বলেন, ‘‘এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। কিংবদন্তি ক্রিকেটারদের আমরা সব সময় শ্রদ্ধা করি। তাঁদের মতামত সব সময়ই মাথায় রাখা হয়। দুঃখ নয়, এই ধরনের মন্তব্য আমাদের নির্বাচক কমিটিকে আরও শক্তিশালী, আরও ঐক্যবদ্ধ করে তোলে।’’

গাওস্কর এমনও দাবি করেছিলেন যে, যাঁদের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার বিশেষ অভিজ্ঞতাই নেই, তাঁরা কী করে অধিনায়ক-কোচেদের পাল্টা প্রশ্ন করবেন? বর্তমান নির্বাচক কমিটিকে প্রায়ই খোঁচা দেওয়া হয় এই বলে যে, সব মিলিয়ে পাঁচ নির্বাচক ১৩টি টেস্ট খেলেছেন। এ নিয়ে প্রসাদের পাল্টা যুক্তি, ‘‘যদি যোগ্যতা আর অভিজ্ঞতার কথা বলা হয়, তা হলে আমি কয়েকটা নাম করতে চাই। যেমন, ইংল্যান্ড আর ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান এড স্মিথ। যিনি মাত্র একটা টেস্ট খেলেছেন। অস্ট্রেলীয় নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান ট্রেভর হন্স খেলেছেন মাত্র সাতটি টেস্ট। ট্রেভর কিন্তু দশ বছরেরও বেশি সময় দায়িত্বে আছেন। আর হ্যাঁ, ১২৮ টেস্ট খেলা মার্ক ওয় কিন্তু হন্সের অধীনেই কাজ করেছেন। যেমন এখন করছেন কিংবদন্তি ক্রিকেটার গ্রেগ চ্যাপেল। যদি ওদের দেশে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা গুরুত্ব না পায়, তা হলে আমাদের দেশে কেন পাবে? সব কাজেরই তো আলাদা আলাদা চাহিদা আছে।’’

প্রসাদ এখানেই থামেননি। তিনি উদাহরণ হিসেবে টেনে এনেছেন প্রয়াত রাজসিংহ দুঙ্গারপুরকেও। বলেছেন, ‘‘যদি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতাই এত গুরুত্বপূর্ণ হবে, তা হলে আমাদের প্রিয় রাজসিংহ দুঙ্গারপুর কী ভাবে নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান হয়েছিলেন? উনি তো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেননি। হয়তো দুঙ্গারপুর স্যর দায়িত্বে না থাকলে ১৬ বছর বয়সে সচিন তেন্ডুলকর নামক হিরের খোঁজও কেউ পেত না।’’

গাওস্করের মন্তব্য শুধু প্রসাদই নন, সঞ্জয় মঞ্জরেকরের মতো প্রাক্তন মুম্বই ক্রিকেটারও মেনে নিতে পারেননি। মঞ্জরেকর এ দিন টুইট করেছেন, ‘‘গাওস্কর স্যরকে সম্মান করেই বলছি, উনি ভারতীয় নির্বাচক সম্পর্কে এবং বিরাট কোহালিকে অধিনায়ক রেখে দেওয়া নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তার সঙ্গে আমি একমত হতে পারছি না। না, ভারত মোটেই ‘বিশ্বকাপে গড়পরতার চেয়েও খারাপ খেলেনি’। ওরা সাতটা ম্যাচ জিতেছে, দুটো হেরেছে। শেষ ম্যাচটায় তো খুবই লড়াই হয়েছিল। এক জন নির্বাচক ক’টা আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সে তার কাজের প্রতি কতটা সৎ।’’

বোর্ড মহলে কারও কারও মুখে ঘুরছে গাওস্করের সংস্থার কথা। যারা নানা কাজের পাশাপাশি ক্রিকেটারদের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তিতেও আবদ্ধ হয়। বর্তমান দলের কয়েক জন ক্রিকেটার সেই সংস্থার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। টাকা উড়তে থাকা ভারতীয় ক্রিকেটে এই সব সংস্থার উপস্থিতি সংঘাতের মঞ্চ তৈরি করে দিচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে। কয়েক জন মনে করিয়ে দিতে চান, ‘‘বিশ্বকাপেই সানি ভাইয়ের ৬০ ওভার খেলে ৩৬ নট আউটের অবিশ্বাস্য ইনিংস ছিল। উনি নিশ্চয়ই জানবেন, যত বড় ক্রিকেটার বা টিমই হও না কেন, সব দিন নিজের পক্ষে যায় না। তার মানে এই নয় যে, সেই ক্রিকেটার অযোগ্য হয়ে পড়ল।’’

গাওস্কর আরও অভিযোগ করেছিলেন, কোহালি-রবি শাস্ত্রীর সামনে বর্তমান নির্বাচকদের কিছু বলার মতো সাহস থাকে না। সত্যিই কি কোহালিরা নির্বাচকদের উপরে জোর খাটান? প্রসাদের জবাব, ‘‘শাস্ত্রী আর কোহালি আমাদের সিনিয়র দলের কোচ-ক্যাপ্টেন। রাহুল দ্রাবিড় ভারতীয় ‘এ’ দলের দায়িত্বে। সবার নিজের নিজের দায়িত্ব আছে। ওদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করাটাকে নিশ্চয়ই জোর খাটানো বলা যাবে না। আমাদের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়েছে অনেক সময়। কিন্তু সে সব সবার সামনে আলোচনা করার জন্য নয়।’’ নির্বাচক প্রধান এও বলছেন, ‘‘একটা ভুল ধারণা আছে যে, বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেললেই অন্যের উপরে গা জোয়ারি করা যাবে। বা তাদের ক্রিকেট জ্ঞান বেশি হতে হবে। বাস্তবে কিন্তু এটা মোটেই ঠিক নয়।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy