Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
MS Dhoni

‘ধোনিই ভারতের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক’

সৌরভ, সচিন, রাহুলের মতো সিনিয়র ক্রিকেটারেরা কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপে না-গিয়ে বিশ্রামের সিদ্ধান্ত নিল। আমাদের লক্ষ্য হল, তরুণ দল বেছে নেওয়া। আমার মনে এল একটাই নাম— মহেন্দ্র সিংহ ধোনি!

মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। ফাইল চিত্র।

মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। ফাইল চিত্র।

দিলীপ বেঙ্গসরকর
শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২০ ০৪:০০
Share: Save:

ইংল্যান্ড সফরের মাঝে হঠাৎ করেই সংবাদটা এল— রাহুল দ্রাবিড় আর অধিনায়ক থাকতে চায় না। এর পরেই আমাদের গুরুত্বপূর্ণ দল নির্বাচনী বৈঠক। ২০০৭-এ প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। কে হবে ভারতের অধিনায়ক?

এখন সারা পৃথিবীতে অনেক ২০ ওভারের লিগ হচ্ছে। আইপিএল এত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি ছিল নতুন, অজানা এক খেলা। তার আগে কখনও ভারত এই ধরনের ক্রিকেটে খেলেইনি।

সৌরভ, সচিন, রাহুলের মতো সিনিয়র ক্রিকেটারেরা কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপে না-গিয়ে বিশ্রামের সিদ্ধান্ত নিল। আমাদের লক্ষ্য হল, তরুণ দল বেছে নেওয়া। আমার মনে এল একটাই নাম— মহেন্দ্র সিংহ ধোনি!

বাকিটা ইতিহাস। আমার মতে, ধোনিই ভারতের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক। ওর সব চেয়ে বড় অবদান হচ্ছে, বিশ্বমানের ট্রফি নিয়মিত ভাবে জেতার রাস্তা তৈরি করা।
২০০৭-য় দক্ষিণ আফ্রিকায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ২০১১-তে ভারতের মাটিতে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ। ২০১৩-য় ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। এবং, ভুলে গেলে চলবে না, ওর অধীনেই প্রথম আমরা টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বের এক নম্বর হই।

আরও পড়ুন: কেন ঠিক ৭টা ২৯? ধোনির অবসর ঘোষণার সময় নিয়ে চর্চা তুঙ্গে

আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে ওর কীর্তির কথা বাদই দিলাম। দেশের হয়ে এই ধারাবাহিকতা, এই সাফল্য কারও নেই। আমার সেরা অধিনায়কদের তালিকায় দাদাও (সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়) খুব উপরের দিকে থাকবে নিশ্চয়ই। অনেকে বলবেন টাইগার পটৌডির নাম। আমি তুলনায় বিশ্বাসী নই। তিনটে আলাদা যুগের মধ্যে তুলনা করা যায়ও না। কিন্তু ধোনির ট্রফি ক্যাবিনেটকে উপেক্ষা করা কঠিন। স্বাধীনতা দিবসে ওর অবসর ঘোষণার পরে বার বারই মনে হচ্ছে, আর একটা মাহি পাওয়া কঠিন।

কী দেখেছিলাম ওর মধ্যে? সব চেয়ে বেশি করে আমার নজর টেনেছিল দু’টো জিনিস। ভীষণ আত্মবিশ্বাসী এবং কোনও অবস্থাতেই ওর স্থিরতা নষ্ট হয় না। ছোট শহর থেকে বড় চুলের একটা ছেলে। সচিন, সৌরভ, রাহুলের মতো মহাতারকাদের সঙ্গে দিব্যি মিশে রয়েছে। অনেকেই এ রকম মঞ্চে এসে ঘাবড়ে যেতে পারে। কিন্তু ধোনিকে ভীষণ স্বাভাবিক দেখাত।

নিজের চিন্তাভাবনার উপরে অগাধ আস্থা। এই আত্মবিশ্বাস একটা অধিনায়কের সব চেয়ে বড় গুণ। দৈনন্দিন রুটিনের বাইরে গিয়ে ভাবতে পারে। অনেকে ওর প্রথম দিককার ঝোড়ো ব্যাটিং ভঙ্গি দেখে ভাবত, এ বোধ হয় অতশত চিন্তাভাবনার ধার ধারে না। ক্রিজে আসে আর চালায়। আদৌ তা নয়। বরং শুরুর দিকেই কয়েকটি ক্ষেত্রে ধোনির সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে, ও অনেক বেশি গভীরে গিয়ে ভাবে। ক্রিকেট সম্পর্কে দারুণ স্বচ্ছ ধারণা

রয়েছে। পরিষ্কার মাথা। প্ল্যান ‘এ’, প্ল্যান ‘বি’, প্ল্যান ‘সি’— নানা রকম ছক তৈরি রাখায় বিশ্বাসী ছিল। সে সব দেখেই মনে হয়েছিল, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এই ‘স্মার্ট’ চিন্তাভাবনাই তুরুপের তাস হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু আবার বলছি, নির্বাচক শুধুই তার ঘোড়া বাছতে পারে। সেই ঘোড়াকে নিজের দমেই ছুটতে হয়, ধোনি যেটা নিজে করেছে।

প্রথম যখন আমরা ওকে অধিনায়ক বেছে নিই, ধোনি নিজের রাজ্য দলকেও কখনও নেতৃত্ব দেয়নি। তাই অনেকে অবাক হয়েছিল নামটা শুনে। অনেকে বলেছিল, আমরা ফাটকা খেলেছি। ধোনি নিজেই সমালোচকদের উত্তর দিয়েছে। ওই ইংল্যান্ড সফরে আমি দলের সঙ্গে ছিলাম। ধোনিকে দেখে বার বারই মনে হত, কোনও কিছুতেই ওর ধীরস্থির ভাব নষ্ট হয় না। কে জানত, গোটা ক্রিকেটজীবন ধরে সেটাই ধরে রাখতে সক্ষম হবে ও। ‘ফিনিশার’ হিসেবে ওর যে সাফল্য, সেটারও নেপথ্যে এই বরফ শীতল মস্তিষ্ক। এবং, অসাধারণ ‘গেম রিডিং’ ক্ষমতা। ম্যাচ চলাকালীন দুর্দান্ত ভাবে ধরে ফেলতে পারে, খেলাটা কোন দিকে বইছে। কখন কী করতে হবে।

নতুন অধিনায়ক টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার পরে কোনও সংশয় ছিল না যে, আমাদের ভবিষ্যৎ অধিনায়ক তৈরি হয়ে থাকল। ওয়ান ডে নেতৃত্ব পেয়ে টিমকে সাজাতে শুরু করে ধোনি। সেই সময় কয়েকটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ায় ত্রিদেশীয় সিরিজে অধিনায়কের মনে হয়েছিল, একসঙ্গে বেশি সিনিয়র ক্রিকেটার না রাখা ভাল। নতুন, যুব রক্ত আনা দরকার। আজও যা নিয়ে বিতর্ক চলে। কিন্তু ধোনির যুক্তি ছিল, অস্ট্রেলিয়ায় বড়-বড় মাঠ। ফিল্ডিং গুরুত্বপূর্ণ হবে। যদি আমরা ফিল্ডিংয়ে ২০-২৫ রান বাঁচাতে না পারি, প্রতিপক্ষ অনেকটা সুবিধা পেয়ে যাবে। সেই কারণে তরুণ রক্ত বেশি করে চাই দলে। আমাদের মনে হয়েছিল, অধিনায়ক যেটা চাইছে, দেওয়া উচিত। ধোনি তখন থেকেই ২০১১ বিশ্বকাপের রোডম্যাপ তৈরি করা শুরু করে দিয়েছিল।

অস্ট্রেলিয়ায় সেই ত্রিদেশীয় সিরিজ জেতাটাকেই আমি অধিনায়ক ধোনির অধিনায়ক জীবনে বড় টার্নিং পয়েন্ট বলব। ওই জয় ওকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল। অনিল কুম্বলে অবসর নেওয়ার পরে টেস্ট অধিনায়কত্বও তুলে দেওয়া হল ওর হাতে। যে ভাবে নিজেকে সামলেছে ধোনি, তা আমাকে মুগ্ধ করে। কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কিন্তু ধোনি উদ্ধত ছিল কেউ
বলতে পারবে না।

(সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুলিখন)

অন্য বিষয়গুলি:

MS Dhoni Cricket
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy