Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

শুভর গোলে লড়াইয়ে ফিরল মোহনবাগান

প্রথমার্ধ শেষে তাই মুখ পাংশু করে ঘুরছিলেন মোহনবাগান সমর্থকেরা। দ্বিতীয়ার্ধে ৬৫ মিনিট পর্যন্তও গোল না হওয়ায় তাঁদের কপালের ভাঁজ আরও বেড়ে গিয়েছিল।

উল্লাস: গোলের পরে শুভকে (জার্সি নম্বর ৪৯) নিয়ে উচ্ছ্বাস সতীর্থদের। রবিবার কল্যাণী স্টেডিয়ামে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

উল্লাস: গোলের পরে শুভকে (জার্সি নম্বর ৪৯) নিয়ে উচ্ছ্বাস সতীর্থদের। রবিবার কল্যাণী স্টেডিয়ামে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:১১
Share: Save:

কলকাতা লিগে শনিবারে ছয় নম্বরে নেমে গিয়েছে দল। রবিবার কল্যাণীতে রেনবোর বিরুদ্ধে প্রথমার্ধ গোলশূন্য! একের পর এক গোলের সুযোগ নষ্ট করছেন জোসেবা বেইতিয়া, সুহেররা।

প্রথমার্ধ শেষে তাই মুখ পাংশু করে ঘুরছিলেন মোহনবাগান সমর্থকেরা। দ্বিতীয়ার্ধে ৬৫ মিনিট পর্যন্তও গোল না হওয়ায় তাঁদের কপালের ভাঁজ আরও বেড়ে গিয়েছিল। ৫৬ মিনিটে মোহনবাগান কোচ কিবু ভিকুনা রণনীতি বদলে পি এম ব্রিটোর পরিবর্তে নামান শুভ ঘোষকে। শ্যামনগরের এই কিশোর নামতেই সচল হল মোহনবাগানের আক্রমণ। তার পরেই ৬৬ মিনিটে কর্নার থেকে হেডে দুরন্ত গোল কিবুর ‘সুপার সাব’ শুভর।

বেইতিয়া যখন কর্নার নিতে যাচ্ছেন, তখন রেনবো স্টপার রিচার্ড নজরে রাখেননি শুভকে। তার মাশুল রিচার্ড দিলেন পরের মুহূর্তেই। কর্নার থেকে বল বক্সে উড়ে আসতেই পিছন থেকে দৌড়ে এসে চকিতে লাফ দিয়ে রিচার্ডদের আগেই বলে মাথা ছুঁইয়ে গোল শুভর। তার পরে সোজা দৌড় দিলেন গ্যালারির দিকে। দু’হাত ভাঁজ করে বুকের কাছে এনে একটু বাঁ-দিকে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে পড়লেন। যে ভাবে গোলের পরে উৎসবে মাতেন ফরাসি ফুটবল-তারকা কিলিয়ান এমবাপে।

শুভর এই গোলের পরেই গ্যালারিতে জ্বলে উঠল সবুজ-মেরুন রং মশাল। বেজে উঠল ঢাকের বাদ্যি। স্বস্তি ফিরল মোহনবাগানেও। রেনবোকে ১-০ হারিয়ে আট ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে মোহনবাগান লিগে ছয় নম্বর থেকে উঠে এল দু’নম্বরে। খেতাবের লড়াইয়ে রয়ে গেল সবুজ-মেরুন শিবির। ম্যাচ শেষে হতাশ রেনবো কোচ সৌমিক দে বলছিলেন, ‘‘জোনাল মার্কিং করে প্রথমার্ধে আটকে দিয়েছিলাম মোহনবাগানকে। কিন্তু কর্নারের সময় ছোট্ট ভুলের মাশুল গুণতে হল।’’

মাঠের মাঝখানে তখন ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিচ্ছেন শুভ। স্টেডিয়ামের আলো ঠিকরে পড়ছিল তাঁর মুখে। আর তাতেই চকচক করছিল শ্যামনগর তরুণ সংঘ থেকে উঠে আসা কিশোরের ঘামে ভেজা মুখটা। ডাক নাম ঝরু। স্থানীয় ক্লাব ইউনাইটেড স্পোর্টসের হয়েই অনূর্ধ্ব-১৫ আই লিগে খেলেছেন। বাবা বিজয় ঘোষ বেসরকারি সংস্থায় নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করেন। বোন ভলিবল খেলোয়াড়। তরুণ সংঘ থেকে মোহনবাগান অ্যাকাডেমি হয়ে এ বার সিনিয়র দলে। লিয়োনেল মেসি ও সুনীল ছেত্রীর ভক্ত ডুরান্ডে নৌসেনা দলের বিরুদ্ধে প্রথম খেলতে নেমে নজর কেড়েছিলেন। শুটিং, বল নিয়ে চকিতে ঘোরা, হেডিং ভাল। গোলের গন্ধ পেয়ে জায়গায় পৌঁছে যান। একজন প্রকৃত স্ট্রাইকারের সব গুণ তাঁর রয়েছে। মোহনবাগান জার্সি গায়ে প্রথম ম্যাচ সেরা হয়ে শুভ বলছেন, ‘‘কিবু স্যর সুযোগ না দিলে এই জায়গায় আসতে পারতাম না।’’ আর এমবাপের মতো গোলের উৎসব নিয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘‘বিশ্বকাপে এমবাপেকে দেখে শিখেছি। পরের ম্যাচে গোল করতে পারলে মেসির মতো উৎসব করব।’’ যা শুনে মোহনবাগান কোচ বলছেন, ‘‘শুভ গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ঝাঁপায়। তবে এমবাপের মতো উৎসব করলেই চলবে না। এমবাপের মতো খেলতেও হবে।’’

এ দিন ৪-২-৩-১ ছকে সুহেরকে একা স্ট্রাইকারে রেখে মোহনবাগান খেলতে নেমেছিল রেনবোর বিরুদ্ধে। খেলা শুরুর পাঁচ মিনিটের মাথায় রক্ষণ থেকে লম্বা বল তুলে বিপক্ষের বক্সে ফেলেছিলেন এ দিনই প্রথম সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে খেলতে নামা ফুটবলার ড্যানিয়েল সাইরাস। সেই মুহূর্তে সামনে একা রেনবো গোলকিপার অঙ্কুর দাসকে পেয়ে গিয়েছিলেন বেইতিয়া। কিন্তু বল তাঁর দখলে না থাকায় গোলের দরজা খুলতে পারেনি মোহনবাগান। ২৯ মিনিটে ডান দিক থেকে ব্রিটো বল বাড়িয়েছিলেন সুহেরের উদ্দেশে, কিন্তু সেই বলে পা ছোঁয়াতেই পারেননি সবুজ-মেরুন স্ট্রাইকার। ৪২ মিনিটেও ব্রিটোর বাড়ানো বলে পা ছোঁয়ালেই গোল পেতেন বেইতিয়া। কিন্তু তিনিও ব্যর্থ হন। আসলে প্রথম ৪৫ মিনিটে সুহের বিপক্ষ রক্ষণে একা পড়ে যাচ্ছিলেন। তার উপরে সহজ সুযোগ নষ্ট। দ্বিতীয়ার্ধে তাই শুভকে নামিয়ে ৪-৩-৩ ছকে চলে যেতেই জয়ের গোল কিবুর দলের। শেষ লগ্নে সুহেরের হেড পোস্টে লেগে না ফিরলে ব্যবধান বাড়তেই পারত।

এ দিন, তিন পয়েন্টের সঙ্গে মোহনবাগানের প্রাপ্তি রক্ষণে ব্রায়ান লারার দেশ ত্রিনিদাদ ও টোব্যাগো থেকে আসা ফুটবলার সাইরাসের অন্তর্ভুক্তি। আট ম্যাচে সাত গোল খাওয়া মোহনবাগান রক্ষণে প্রথম ম্যাচ থেকেই কর্তৃত্ব নিয়ে খেললেন। শান্ত মাথা। গতি, হেড, ট্যাকল দুর্দান্ত। বল সরবরাহের কাজটাও ভালই সারতে পারেন। কিবু অবশ্য এ সব নিয়ে ভাবতে নারাজ। বলছেন, ‘‘ম্যাচের ফলে খুশি। বাকি তিন ম্যাচ থেকে নয় পয়েন্ট দরকার। লিগে অনেক কিছুই হতে পারে এখনও।’’

মোহনবাগান: দেবজিৎ মজুমদার, লালরাম চুলোভা, লালছাওয়ানকিমা, ড্যানিয়েল সাইরাস, গুরজিন্দর কুমার, ব্রিটো পি এম (শুভ ঘোষ), ফ্রান গঞ্জালেস, শেখ সাহিল, নংদাম্বা নওরেম (শেখ ফৈয়জ), জোসেবা বেইতিয়া (সালভা চামোরো), ভি পি সুহের।

রেনবো: অঙ্কুর দাস, সোমতোচুকোউ রিচার্ড, প্রদীপ পাত্র, শুভঙ্কর কাঙ্গাবণিক, ছোট্টু মণ্ডল, অভিজিৎ সরকার, সৌরভ রায়, সৈকত সরকার (রাজদীপ সাহা), কাজ়িম আমোবি (সৌরভ মণ্ডল), সুজয় দত্ত (সুরজ মাহাতো), ফেলিক্স চিডি।

অন্য বিষয়গুলি:

Football Mohun Bagan Rainbow FC CFL 2019
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE