গোলের পরে সনি। শনিবার ফেড কাপ ফাইনালে। ছবি: উজ্জ্বল দেব।
ম্যাচ শেষ হওয়ার আধ ঘণ্টা পরেও একশো ফুটের সবুজ-মেরুন পতাকাটা ঘাসে পেতে গড়াগড়ি খাচ্ছেন অজস্র বাগান সমর্থক।
সমস্ত গাম্ভীর্য ঝেড়ে ফেলে পাগলের মতো সনি, কাতসুমি, জেজেদের আদর করছেন সঞ্জয় সেন।
গ্লেন-প্রীতম-দেবজিৎরা ক্লাব পতাকা শরীরে জড়িয়ে ফেড কাপটা নিয়ে দৌড়তে যাবেন। কাপটাই ছিনিয়ে নিলেন একদল তরুণ। তারপর সবাই মিলে বেহিসেবি দৌড়।
বাগানের কত স্বপ্ন শনিবাসরীয় রাতে বাস্তব হল গুয়াহাটিতে?
সনি নর্ডির ইচ্ছে ছিল, একটা ট্রফি অন্তত নিয়ে ফিরবেন হাইতিতে। তাঁর স্বপ্ন সফল। ছোটবেলা থেকে জেজে স্বপ্ন দেখতেন, নিজের রাজ্যকে সামনে পেলে ধর্মযুদ্ধে জিতবেনই। সেটা তো পূরণ হলই। সঙ্গে জোড়া গোল, ম্যাচেরও সেরা। তাঁর মিশন সফল।
সঞ্জয় সেন চেয়েছিলেন, আই লিগের দুঃখ মুছে যে করেই হোক ফেড কাপটা নিয়ে ফিরতে। অন্ধকার থেকে আলোর নীচে দাঁড়াতে। তাঁর ইচ্ছেপূরণ হয়ে গেল বুদ্ধপূর্ণিমার আলোতেই। দু’বছর কোচিং করিয়ে আই লিগ এবং ফেড কাপ। সাম্প্রতিক কালে কোনও ভারতীয় কোচের এই রেকর্ড নেই। সঞ্জয় ধরে ফেললেন বেঙ্গালুরুর ব্রিটিশ কোচ অ্যাসলে ওয়েস্টউডকে।
আর মোহনবাগান ব্রিগেড কী চাইছিল? আই লিগ জয়ের পথে প্রথম অধঃপতন শুরু হয়েছিল যে আইজল থেকে, তাদের দুমড়ে-মুচড়ে দিতে। জহর দাশের টিম বিধ্বস্ত। পদানত।
রোয়ানু ঝড় অনেক ভয় দেখিয়েও শেষ পর্যন্ত আছড়ে পড়েনি কলকাতায়। গঙ্গাপাড়ের তাঁবু থেকে বাগান-ঝড় কিন্তু এল। সনি-জেজেদের গোল-ডিনামাইটে পাহাড়ে ফাটল ধরিয়ে ভারতসেরা হয়ে গেল মোহনবাগান। ঢুকে পড়ল ইতিহাসেও। ফেড কাপের ফাইনালে কোনও ক্লাব তো কখনও ৫-০ জেতেনি!
রাত বারোটাতেও স্টেডিয়ামের বাইরে নেচে চলেছেন জনা পঞ্চাশ যুবক। গুয়াহাটি এসে এঁরা অনেকেই হোটেল পাননি। সারারাত রাস্তায় থেকে সকালে ফেরার ট্রেন ধরবেন। ফেডারেশন কর্তা প্রফুল্ল পটেল, কুশল দাশরা এলে দেখতে পেতেন, ক্লাবের সঙ্গে ফ্রাঞ্চাইজি টিমের আবেগের কত তফাত! ভাগ্যিস কলকাতা থেকে এই মানুষগুলো এসেছিলেন। এখানে পাশে পেলেন মালিগাঁও, রোহাবাড়ি, কালাপাহাড়ের বঙ্গসন্তানদের। না হলে গ্যালারির যুদ্ধটা একেপেশে হয়ে যেত। মিজো-সমর্থক ছেলে-মেয়েরা এমন সুসজ্জিত হয়ে গান বেঁধে এসেছিলেন যে, পাল্টা কিছু না হলে তাঁদের থামানো মুশকিল ছিল। মেয়েরা ভেঁপু বাজাচ্ছেন, সঙ্গে চড়াম চড়াম ঢাক। ঘরের ছেলে জেজে গোল নষ্ট করার পরে এঁরা কটাক্ষ করেছেন। আবার জেজে সেরার ট্রফি নেওয়ার সময় অঝোরে কেঁদেওছেন।
প্রথমার্ধে গ্যালারির এই যুদ্ধটা মাঠে কোথায়? তখন তো মিনিট পঁচিশ আইজল ‘ক্ষত্রিয়’ কোচের ৪-২-৩-১ স্ট্র্যাটেজিই ঝঁাঝ ছড়াচ্ছিল। অাইজলের গতি, উইং প্লে একপেশে করে দিয়েছিল খেলাটাকে। বাগান প্রথম কর্নার পেল প্রথমার্ধের পঁচিশ মিনিটে। তার আগে চারটে পেয়েছেন জহরের ছেলেরা। তবে ওই সময় মাঠ জুড়ে খেললেও সানডেরা পজিটিভ সুযোগ একটাও পাননি। বরং জেজে এবং গ্লেন দু’টো গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন।
গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর দু’টো তির বেরোল সঞ্জয়ের মগজাস্ত্র থেকে। এক) সনি আর কাতসুমিকে শাফল করে উইং থেকে ভিতরে ঢুকে গোলের ফাঁক তৈরি করা। দুই) ঝিরঝিরে বৃষ্টির মাঠে মাটিতে বল রেখে খেলা। আইজল-কোচের সব ট্যাকটিক্স এই দুই চালেই ফুটিফাটা। বিরতির পর মাঠে নামার সময় সফল শিক্ষকের মতো সঞ্জয় দিয়ে দিলেন ফুট-নোট— ‘‘দশ মিনিটের মধ্যেই ঝড় উঠবে। তোমরা গোলও পাবে।’’ হলও তা-ই।
ঝড় উঠল। আঠাশ মিনিটেই পাহাড় জয় শেষ। তিন-তিনটে গোল ওই সময়েই। তার পর শুধু দেখে যাওয়া। নিজের দ্বিতীয় গোলে জেজে ছড়িয়ে দিলেন পাঁচ গোলের দ্যুতি। আর চোদ্দো বারের জন্য ফেড কাপ উঠে পড়ল পালতোলা নৌকোয়। এই গৌরবও দেশের কোনও ক্লাবের নেই।
দু’দিনের ব্যবধানে আবার আবির খেলল কলকাতা। ১৯শের পর ২১শে। সবুজ আবির।
বাংলা এখন সত্যিই সবুজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy