প্র্যাক্টিসে ফুরফুরে সুরাবুদ্দিন এবং বেইতিয়া। শুক্রবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
ড্রেসিংরুমের ভিতর থেকে ভেসে আসছিল স্প্যানিশ গানের মূর্ছনা। উঁকি দিয়ে দেখা গেল সুরের তালে কোমর দোলাচ্ছেন সালভা চামোরো, জোসেবা বেইতিয়ারা। তাঁদের সঙ্গে নাচছেন কিছু ভারতীয় ফুটবলারও। হাততালি দিচ্ছেন বাকিরা। নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে কোচ কিবু ভিকুনা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে তা দেখলেন এবং হাসতে হাসতে বেরিয়েও এলেন।
মোহনবাগানের স্প্যানিশ কোচের মুখ দেখে মনে হল, এটাই তো দেখতে চাইছিলেন। রবিবারের ডার্বির চাপ কাটানোর জন্য এই ‘টোটকা’ কাজে লেগেছে দেখে তিনি যেন তৃপ্ত।
কলকাতা ডার্বির দু’দিন আগের ননগোম্বা নাওরেমদের অনুশীলনের শুরুটা দেখে কিন্তু মনে হয়েছিল, হেডমাস্টার কিবুর মেজাজে পুরো দল তটস্থ। সকাল সাড়ে আটটায় ড্রেসিংরুমে টিম মিটিং করে যখন কিমকিমা, আশুতোষ মেহতারা মাঠে নামলেন, তখন তীব্র রোদে যুবভারতীর গাছগুলোর পাখিরাও বসে হাঁপাচ্ছে। কিবু সেই রোদে শুরু করলেন কঠোর ফিটনেস ট্রেনিং। টানা দেড় ঘণ্টা ধরে চলল সেট পিস, পাসিং ফুটবল এবং আক্রমণ ও রক্ষণের নানা অনুশীলন। কখনও মাঠ ছোট করে, কখনও পুরো মাঠ নিয়ে। চোট- আঘাত ও জ্বরে কয়েক জন ফুটবলার আক্রান্ত। রোমারিও জেসুরাজ জ্বর সারিয়ে ফিরলেও গোলকিপার শঙ্কর রায় মাঠে ফেরেননি। জ্বরে আক্রান্ত ধনচন্দ্র সিংহ অনুশীলনেই নামতে পারলেন না মাঠে এসেও। চোটে ফ্রান গঞ্জালেস এবং ফ্রান মোরান্তে কার্যত বিশ্রামে। তাতে কী? ডুরান্ড খোয়ানো কিবু যে ডার্বি জিততে মরিয়া। এত দিনে বুঝে গিয়েছেন, প্রতিপক্ষ কোচ আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস কোনও ট্রফি না পেলেও টিকে রয়েছেন শুধু ডার্বি জিতে।
ডার্বি জিততে তাই দু’রকম ওষুধ প্রয়োগ করেছেন তিনি। মাঠের ভিতরে এক রকম আর বাইরে অন্য রকম। দলের এক ফুটবলার বলছিলেন, ‘‘কোচ বলেছেন কোনও চাপ না নিতে। ডার্বি জেতাটা গুরুত্বপূর্ণ ঠিকই তবে এই ম্যাচ জিতলেই লিগ জিতব না। ফলে একটা ম্যাচ হিসাবে এটা খেলতে হবে।’’ জানা গেল, সেই ভাবনা থেকেই অনুশীলনের পর তীব্র আওয়াজের স্প্যানিশ গান বাজানোর ‘টোটকা’ চালু হয়েছে।
কিন্তু যে দুই ফুটবলারের উপরে কিবুর ডার্বি জয় নির্ভর করছে, মাঝমাঠের সেই দুই স্তম্ভ স্প্যানিশ জোসেবা বেইতিয়া এবং মণিপুরের বিশ্বকাপার ননগোম্বা সিংহ উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে দাঁড়িয়ে।
শুক্রবার সকালে অনুশীলনের পরে জোসিবা যখন বলছেন, ‘‘রবিবারের ম্যাচ নিয়ে আমার কোনও চাপ নেই। বস্ক ডার্বিতে অনেক বার খেলার অভিজ্ঞতা আছে। ওখানেও এ রকম উত্তেজনা থাকত।’’ ঠিক তখনই আবার পালতোলা নৌকার সওয়ারীদের আশার আর এক প্রদীপ ননগোম্বা নাওরেম বলে দিলেন, ‘‘চাপ তো একটু লাগছেই। কত দিনের স্বপ্ন ছিল এই ম্যাচটা খেলব। কত জনের কাছে শুনেছি এই ম্যাচটার কথা। শুধু ভারতের নয়, আমার কাছে বিশ্বের সেরা ম্যাচ এটা। সবাই ফোন করছে। অনুরোধ করছে গোল করার।’’ বলছিলেন দু’দিন আগে কল্যাণীতে লিগের শেষ ম্যাচে গোল করে দলকে জেতানো ফুটবলার। এ দিন অনুশীলনের শুরুতে তাঁর সঙ্গে একান্তে কথা বলতে দেখা গিয়েছিল সবুজ-মেরুন কোচকে। সেখানে ছিলেন ভি পি সুহেরও। কী বললেন কোচ? নওরেমের জবাব, ‘‘চোটের খোঁজ নিচ্ছিলেন। আর বললেন, কে চায় না নিজের খেলাটা খেলতে।’’ দু’বছর ইন্ডিয়ান অ্যারোজের জার্সিতে আট জনকে ড্রিবল করে শিলংয়ের গোলে বল ঢুকিয়েছিলেন নওরেম। মজা করে ছোট্টখাট্টো চেহারার ছেলেটিকে অনেকেই ‘ভারতের মেসি’ বলে ডাকছিলেন। ডার্বিতে গোল পেলে কি আই লিগের ওই গোলটির চেয়েও বেশি আনন্দ পাবেন? মিনার্ভা পঞ্জাবের অ্যাকাডেমির প্রাক্তন ছাত্র বললেন, ‘‘দু’টোই আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তবে আগে তো গোল করি। ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণ ভাগ কিন্তু খুব শক্তিশালী।’’
আর নওরেমের উইং ধরে দৌড়ের সঙ্গে কিবুর মাঝমাঠ আর যাঁর ঝলক দেখার অপেক্ষায় থাকবে রবিবারের যুবভারতী, সেই বেইতিয়া অবশ্য সে ভাবে ইস্টবেঙ্গল ম্যাচ দেখেনইনি। বলছিলেন, ‘‘একটু-আধটু দেখেছি। তবে ওদের কোলাডো খুব ভাল ফর্মে আছে।’’ জানিয়ে দিলেন, বস্ক ডার্বিতে নিজের ক্লাব রিয়েল সোসিদাদের হয়ে অ্যাথলেটিকো বিলবাওয়ের বিরুদ্ধে খেলেছি। ‘‘আমার কাছে রবিবারের ম্যাচ লিগের অন্য আর পাঁচটা ম্যাচের মতোই,’’ বলতে বলতেই গাড়িতে উঠে পড়েন তিনি। গাড়িতে উঠে তাঁর এক স্প্যানিশ সঙ্গী চামোরো বলে দেন, ‘‘গোল চাই, গোল। আশা করছি ডার্বিতে আমার একটা গোল দেখবেন।’’ এর পরেই মোহনবাগানের ‘স্প্যানিশ আমার্ডাদের’ নিয়ে স্টার্ট দেয় গাড়ি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy