শামি: ৫-৪২। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
ওপেনার কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রথম বাউন্সারটা গ্লাভস ছুঁয়ে কিপারের হাতে। দ্বিতীয় বাউন্সারটা যেন এরই রিপ্লে। তবে বাউন্সটা আরও বেশি। এটাও ব্যাটসম্যান বোঝার আগেই গ্লাভস ছুঁয়ে সোজা স্লিপে ক্যাচ। শেষটা আরও মারাত্মক। তাঁর মারণ ইনসুইঙ্গারে স্টাম্প ছিটকে গেল। ব্যাটসম্যানের কাছে যার কোনও জবাবই ছিল না।
আড়াই বছর আগে এই ইডেন টেস্টেই গেইল, ব্র্যাভো, স্যামিদের ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রায় একাই ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিলেন যে ভাবে, এ দিনও সেই ধ্বংসের ছায়া মহম্মদ শামির বোলিংয়ে।
শাহরুখ খান তাঁর বিখ্যাত ছবিতে বলেছিলেন, ‘মাই নেম ইজ খান অ্যান্ড আই অ্যাম নট আ টেররিস্ট’। রবিবার সন্ধ্যায় শামি যদি ভবানীপুর ক্লাবের ব্যাটসম্যানদের কাছে গিয়ে বলতেন, ‘আই অ্যাম নট আ টেররিস্ট’, তা হলে তাঁর কথা বোধহয় বিশ্বাসই করতেন না তাঁরা! এ দিন ভারতীয় পেসারের বিরুদ্ধে যে রকম সন্ত্রস্ত দেখাল ব্যাটসম্যানদের, তাতে সন্ধ্যায় সবুজ ইডেনে সে রকমই মনে হচ্ছিল। গোলাপি কোকাবুরা যেন তাঁর নতুন আগ্নেয়াস্ত্র। ছুটির ইডেনে ভিড় জমানো হাজার পাঁচেক মানুষ শামির এই ধ্বংসলীলা দেখে বাড়ি ফিরে গেলেন হাসিমুখেই। আর চারটি স্পেলের একটাও কি টিভিতে দেখলেন বিরাট কোহালি? দেখে থাকলে তাঁর মুখেও নিশ্চয়ই হাসি ফুটবে। প্রথম দিন-রাতের টেস্টে নামার আগে কোহালি যাঁর সঙ্গে গোলাপি বল নিয়ে একটা লম্বা সেশনে বসতে পারেন, সেই শামি এখন গোলাপি কোকাবুরার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন। রবিবার ইডেনে পাঁচ উইকেট নেওয়ার পর তা সাফ জানিয়ে দেন। লাল, সাদা, গোলাপি— এই তিনের মধ্যে নবতম অতিথিই এখন তাঁর প্রিয়। বলেন, ‘‘গোলাপি বলই সেরা। সারাক্ষণ মুভ করছে। অনেক ওভার খেলার হয়ে যাওয়ার পরও। বলটা দুর্দান্ত। সিমটাও বেশ শক্তপোক্ত। অনেকক্ষণ ঠিকঠাক থাকছে। এই বলে বোলিং করে সত্যিই মজা পাচ্ছি।’’
মজা সত্যিই পাচ্ছিলেন। প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের চার জনই যে শূন্য রানে আউট! শামি তাও শুরুতে তিন ওভারও পুরো করতে পারলেন না। তার আগেই ‘ডিহাইড্রেশন’-এর জন্য মাঠ থেকে বেরিয়ে যেতে হয় তাঁকে। রাতে খেলার পর বলেন, ‘‘হঠাৎ মাথা ঘুরছিল। এমন কোনও দিন হয়নি আমার। চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিল। ঠিকমতো ক্রিজই দেখতে পাচ্ছিলাম না। পরে ব্লাড প্রেশার চেক করাই। দেখলাম ঠিকই আছে। তখন নিশ্চিন্ত হলাম।’’ ১৭ বলের এই স্পেলেই প্রথম দুই শিকার তুলে নেন।
চকচকে ভাব কমছেই না যে বলে, তাতে রিভার্স সুইং পাবেন কী করে? শামি বললেন, ‘‘আর্দ্রতা কমে গেলে বলটার একটা দিক ড্রাই করে নেওয়া যাচ্ছে।’’ এ দিনও তাঁকে ইনিংসের শেষ দিকে মাঝে মাঝে রিভার্স সুইং করতে দেখা যাচ্ছিল। বললেন, ‘‘হ্যাঁ, রিভার্স সুইং পেয়েছি। তবে উইকেটটা আর একটু রাফ হলে আরও পেতাম।’’ ড্রেসিংরুমে বিশ্রাম নিয়ে মাঠে ফিরে আরও বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন তিনি। ছ’ওভারে এগারো রান দিয়ে এক উইকেট নেন। একটা উইকেট পেলেও এটাই দিনের সেরা স্পেল।
তাঁর দাপটে ভবানীপুর একটা সময়ে ৪৫-৭-এ হিমশিম খাচ্ছিল। একটা ষাট রানের পার্টনারশিপ আর সিএবি-র মান্ধাতা আমলের পেনাল্টি সিস্টেম তাদের ফলো-অন বাঁচিয়ে দেয়। দ্বিতীয় ইনিংসে আরও শ’দেড়েক চাপিয়ে মোহনবাগান ২৯৬-এ এগিয়ে। হাতে ছয় উইকেট। ত্রিমুকুট দেখছেন ঋদ্ধিমানরা।
সোমবার শামি ফের ত্রাস হয়ে উঠলে আর রক্ষে নেই ব্যাটসম্যানদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy