নায়ক: তাঁর বলে ভেঙেই গেল উইকেট। সেই ভাঙা টুকরো নিয়ে উচ্ছ্বাস শামির এবং সতীর্থদের। পাঁচ উইকেট নিয়ে শেষ দিনে দলকে জেতালেন তিনিই । টুইটার
বিশাখাপত্তনমে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্টের শেষ দিন মহম্মদ শামির ৩৫ রানে পাঁচ উইকেট নিয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার রহস্য উদ্ঘাটন করলেন রোহিত শর্মা। অবশ্য তা মজা করেই। রোহিতের রসিকতা, ‘‘আমরা সবাই জানি, তরতাজা থাকলে শামি কী করতে পারে। সঙ্গে শুধু একটু বিরিয়ানির দরকার।’’
এ তো গেল একটা দিক। কিন্তু রবিবার বাংলার ডানহাতি পেসার গড়ে ফেললেন আরও এক কীর্তি, যা তাঁকে ‘সেকেন্ড ইনিংস স্পেশ্যালিস্ট’ বোলারদের তালিকায় বসিয়ে দিয়েছে কপিল দেব, মদন লাল, জাভাগাল শ্রীনাথদের পাশে। পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৯৬ সালে আমদাবাদে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে চতুর্থ ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন শ্রীনাথ। সেই মুহূর্ত আবারও এ দিন ফিরল শামির বিষাক্ত ডেলিভারিতে। যে তালিকায় রয়েছে কপিল, মদন লাল, কারসন ঘাউড়ির নামও।
শামি কী বলছেন? টেস্ট ক্রিকেটে অ্যালেস্টেয়ার কুকের পরে রবিবার ডেন পিয়েডের উইকেট ভেঙে দু’টুকরো করে দেওয়া নায়কের মন্তব্য, ‘‘এই ধরনের উইকেটে বল করা কিন্তু বেশ কঠিন। পিচ ক্রমশ মন্থর হয়ে যাচ্ছিল। তাই উইকেটে সব সময় বল করার চেষ্টা করেছি। আমরা ভাল করেই জানতাম যে, বাউন্সে বৈচিত্র আনতে পারলে এবং তারই সঙ্গে রিভার্স সুইং করাতে পারলে টেস্ট জেতা অনেক সহজ হয়ে যাবে। সেটাই করেছি।’’ নবম উইকেটে ডেন পিয়েড এবং মুথুস্বামী ভারতের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ান। এই জুটিতে ওঠে ৯১ রান। পিয়েডকে ফিরিয়ে স্বস্তি ফেরান সেই শামি। তিনি বলেছেন, ‘‘জানতাম, উইকেটে বল রাখতে পারলে ওরা পরাস্ত হবেই। তাই হয়েছে।’’ অধিনায়ক বিরাট কোহালিও বলেন, ‘‘দ্বিতীয় ইনিংসে আমাদের দলের সেরা ধারাবাহিক স্ট্রাইক বোলারের নাম মহম্মদ শামি।’’ যোগ করেন, ‘‘এই নিয়ে চার বার ও দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিল এবং তার চেয়েও বড় ব্যাপার, দলের যে মুহূর্তে এই ধরনের বোলিংয়ের প্রয়োজন পড়ে, শামি ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। মাথা ঠান্ডা রেখে ও নিজের কাজ করতে পারে, সেটাই শামির সব চেয়ে বড় শক্তি।’’
সাংবাদিক বৈঠকে শামিকে নিয়েই বেশি কথা শোনা গিয়েছে ম্যাচের সেরা রোহিতের মুখে। যিনি ওপেনার হিসেবে নেমে জোড়া সেঞ্চুরি করে নতুন কীর্তি গড়েছেন। রোহিত তাঁর সতীর্থ সম্পর্কে বলেছেন, ‘‘শুধু আজ বলেই নয়, এই ধরনের উইকেটে ও কী করতে পারে, তা আগেও আমরা দেখেছি। কলকাতায় ২০১৩ সালে আমাদের দু’জনেরই টেস্টে অভিষেক হয়েছিল। হুবহু একই রকম না হলেও ওখানেও পঞ্চম দিন বল ক্রমশ নিচু হয়ে যাচ্ছিল। সে দিনই শামি বুঝিয়ে দিয়েছিল, এই সব পিচে কী ভাবে বল করতে হয় সেটা ওর ভালই জানা রয়েছে। উইকেট থেকে একটু সাহায্য পাওয়া যাবে বুঝলেই রিভার্স সুইং করাতে শুরু করে।’’ যোগ করেছেন, ‘‘এমনিতে রিভার্স সুইং করানো যাবে বুঝলেও কাজটা কিন্তু মোটেই সহজ নয়। আপনাকে সব সময় ঠিক জায়গায় বলটা ফেলতে হবে। সঙ্গে অফস্টাম্পের কাছাকাছি বল রাখা চাই। যাতে সেটা মিডলস্টাম্পে বাঁক নেয়। পুরনো বলে রিভার্স সুইং করার শিল্পে শামি এখন ওস্তাদ।’’
এখানেই থামেননি রোহিত। আরও বলেছেন, ‘‘আজ যে পরিবেশে খেললাম, সেটা শামির জন্য একেবারে আদর্শ। সব ডেলিভারি ব্যাটসম্যানকে খেলাতে বাধ্য করেছে। এই রকম পরিস্থিতিতে সত্যিই ওর বিরুদ্ধে ব্যাটিং করা খুব কঠিন। বিশেষ করে, উইকেটে যদি ক্ষত তৈরি হয়ে থাকে। কোন দিকে রিভার্স সুইং হবে, সেটাই ব্যাটসম্যান বুঝে উঠতে পারবে না। শুধু রিভার্স সুইং নয়। পুরনো বলেও ওর মতো বোলিং করার দক্ষতা খুব কম বোলারের আছে।’’ যশপ্রীত বুমরার চোটের কারণে ছিটকে যাওয়ার ঘটনা নিঃসন্দেহে ভারতীয় দলের কাছে এক বিরাট ধাক্কা। কিন্তু শেষ দিনে বুমরার অভাব ঢেকে দিয়ে শামি যে ভাবে ভয়ঙ্কর মেজাজে ফিরলেন, তা দেখে মুগ্ধ অধিনায়ক বিরাট কোহালিও। তিনি বলেছেন, ‘‘শামিই তো দ্বিতীয় ইনিংসে বিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের ফেরানোর কাজটা করছে। শামি এ ধরনের উইকেটে কী করতে পারে, সেটা সম্ভবত আবারও সকলে নতুন ভাবে অনুভব করলেন। ওর জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।’’ শামির ৩৫ রানে ৫ উইকেট পাওয়া নিয়ে ভারতের প্রাক্তন তারকা সঞ্জয় মঞ্জরেকরের টুইট, ‘‘তা হলে শুধু স্পিন নয়, পেস বোলিংয়েও আমরা বিপক্ষকে শেষ করতে পারি! অসাধারণ শামি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy