Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
অভিনব বিরাট-বার্তা

অধিনায়ক বিরাটের ডাবল সেঞ্চুরির আবদার, নায়ক মায়াঙ্কের স্বপ্নপূরণ ইনদওরে

ভারত অধিনায়কের রাজকীয় ব্যাটিং দেখতে এ দিন মাঠে যাঁরা ভিড় জমিয়েছিলেন, তাঁদের হতাশ করে দিলেন বাংলাদেশের ডানহাতি পেসার আবু জায়েদ চৌধুরী। তাঁর বলেই শূন্য রানে ফিরলেন ভারত অধিনায়ক। গোটা স্টেডিয়াম শোকস্তব্ধ।

সংযত: দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি করেও নিয়ন্ত্রিত উচ্ছ্বাস দেখালেন মায়াঙ্ক আগরওয়াল। শুক্রবার ইনদওরে। ছবি: এএফপি।

সংযত: দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি করেও নিয়ন্ত্রিত উচ্ছ্বাস দেখালেন মায়াঙ্ক আগরওয়াল। শুক্রবার ইনদওরে। ছবি: এএফপি।

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত
ইনদওর শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:৩০
Share: Save:

তাঁর নামের পাশে লেখা দু’টি ডাবল সেঞ্চুরি। মায়াঙ্ক অনুরাগ আগরওয়ালের দুর্দান্ত শাসনে ঝলমলে ভারত।

কিন্তু শুক্রবার হোলকার স্টেডিয়াম সাক্ষী রইল আরও দুই বিরল মুহূর্তের। যার কেন্দ্রবিন্দুতে দাঁড়িয়ে দুই চরিত্র। প্রথম জন অবশ্যই ভারতীয় ওপেনার, এবং দ্বিতীয় জন তাঁর অধিনায়ক বিরাট কোহালি।

ভারত অধিনায়কের রাজকীয় ব্যাটিং দেখতে এ দিন মাঠে যাঁরা ভিড় জমিয়েছিলেন, তাঁদের হতাশ করে দিলেন বাংলাদেশের ডানহাতি পেসার আবু জায়েদ চৌধুরী। তাঁর বলেই শূন্য রানে ফিরলেন ভারত অধিনায়ক। গোটা স্টেডিয়াম শোকস্তব্ধ।

আরও পড়ুন: বাঁ-হাতে ব্যাট করে চমকে দিলেন অশ্বিন! ‘পন্থের চেয়ে ভাল’, বলল নেটদুনিয়া

কিন্তু বরাবরই তিনি ব্যক্তিগত কৃতিত্ব সম্পর্কে উদাসীন। বরং অনেক বেশি আগ্রহী সতীর্থদের সাফল্যের সঙ্গে দলের জয় দেখতে। শুক্রবার যে ছবি ফিরল হোলকার স্টেডিয়ামে। দেড়শো রান করে ভারতীয় ড্রেসিংরুমের দিকে তাকিয়ে ব্যাট তুললেন মায়াঙ্ক। টেলিভিশনের পর্দায় ধরা পড়ল, কোহালি দুই আঙুল তুলে ইশারায় দেখাচ্ছেন, রানকে দু’শোতে পরিণত করো। বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সেই নির্দেশে সম্মতি দিলেন মায়াঙ্ক।

পরের মুহূর্তটা আরও অসাধারণ। মেহদি হাসান মিরাজকে ছয় মেরে ডাবল সেঞ্চুরি করে মায়াঙ্ক দু’আঙুল তুলে ড্রেসিংরুমের দিকে ইশারা করলেন, তিনি অধিনায়কের সেই আবদার মিটিয়েছেন। কিন্তু কোহালি যে অন্য ধাতুতে গড়া। হাসতে হাসতে এ বার তিনি তিন আঙুল তুলে ইশারা করলেন, রানটাকে এ বার তিনশোতে নিয়ে চলো।

মায়াঙ্ক সেই কথা রাখতে পারেননি। ফিরেছেন ২৪৩ রানে। কিন্তু ৩৩০ বলে তাঁর সেই ইনিংসই যেন ম্যাচেরই ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দিল। স্ট্রাইক রেট ৭৩.৬৩। ২৮টি চার ও আটটি ছয়ের সৌজন্যে বিপক্ষের বোলিং নির্বিষ করে দিলেন। এবং তারই সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে আরও একটি চমকপ্রদ তথ্য। টেস্ট ক্রিকেটে দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি করতে মায়াঙ্ক নিলেন ১২ ইনিংস। কিংবদন্তি ডন ব্র্যাডম্যান নিয়েছিলেন ১৩ ইনিংস। তবে জীবনের প্রথম দু’টি ডাবল সেঞ্চুরি করতে বিনোদ কাম্বলি নিয়েছিলেন পাঁচ ইনিংস। সাংবাদিক সম্মেলনে এসে সংযত মায়াঙ্ক বলে গেলেন, ‘‘দলকে এমন একটা মঞ্চে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছিলাম, যেখান থেকে হারের কোনও ভাবনা তৈরি না হয়।’’

আটটির মধ্যে পাঁচটি ছয়ই তিনি মেরেছেন মেহদি হাসান মিরাজকে। এমনকি ১৯৬ রান থেকে মিড উইকেটের উপর দিয়ে মেহদিকে ছয় মেরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনের দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরিতে পৌঁছন মায়াঙ্ক। তিনি যখন প্যাভিলিয়নে ফিরছেন, বাংলাদেশ ওপেনার ইমরুল কায়েস এসে অভিনন্দন জানিয়ে গেলেন। প্রথম দিনের শেষে এই কায়েসই ৩২ রানের মাথায় মায়াঙ্কের সহজ ক্যাচ ফেলে দিয়েছিলেন স্লিপে!

দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে গত মাসেই বিশাখাপত্তনমে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন ভারতীয় ওপেনার। তার এক মাসের মধ্যেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট জীবনের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস গড়লেন ইনদওরে। দ্বিতীয় দিনের শুরুটা যদিও ভারতীয় শিবিরে আতঙ্ক তৈরি করেছিল। চরিত্র-বিরোধী দ্রুত ৫৪ রান (৭২ বল) করে দিনের চতুর্থ ওভারে রাহির (জায়েদকে এই নামেই ডাকেন সতীর্থরা) শিকার হন চেতেশ্বর পুজারা। ষষ্ঠ ওভারে রাহির ইনসুইং পিছনের পায়ে আছড়ে পড়ে বিরাট কোহালির (০)। মোমিনুল হকের দুরন্ত রিভিউ বাংলাদেশের হারানো মনোবল ফিরিয়ে দিয়েছিল।

কোহালি ও পূজারা ফিরে যাওয়ার পরে স্নায়ুর চাপ ধরে রাখা কতটা শক্ত ছিল? সাংবাদিক বৈঠকে মায়াঙ্কের উত্তর, ‘‘অবশ্যই কঠিন। তবে আজু ভাই (রাহানে)-এর সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম, ভাল স্পেলকে সম্মান দিতেই হবে।’’ দু’জনের এই পরিকল্পনাই বাংলাদেশের স্বপ্নভঙ্গের রাস্তা তৈরি করে দিল। লাঞ্চের কিছুক্ষণ আগে মেহদিকে পাড্‌ল সুইপ করতে গিয়ে পরাস্ত হন মায়াঙ্ক। আম্পায়ারও আউটের সিদ্ধান্ত দেন। কিন্তু রিভিউ নেন ওপেনার। মায়াঙ্ক বলছিলেন, ‘‘প্যাডে লাগার পরে মনে হয়েছিল আউট নই। তাই রিভিউ নিয়েছিলাম। সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল, প্রমাণ হয়ে গেল।’’

মায়াঙ্কের সাবলীল ইনিংস গড়ার পিছনে রাহানের অবদান অনস্বীকার্য। এক দিক থেকে কিছুটা রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে ব্যাট করছিলেন। যাতে মায়াঙ্ক নিজের স্বাভাবিক ইনিংস গড়তে পারেন। ১৯০ রান যোগ করে বাংলাদেশকে আরও সমস্যায় ফেলে দিল এই জুটি। রাহানে যদিও সেঞ্চুরি হাতছাড়া করলেন আবারও। প্যাভিলিয়নে ফিরলেন ৮৬ রান করে।

বাংলাদেশের অনভিজ্ঞ বোলিং আক্রমণের ফায়দা তুললেন রবীন্দ্র জাডেজাও। ৭৬ বলে তিনি অপরাজিত ৬০ রানে। ১০ বলে ২৫ রান করে তাঁকে সঙ্গ দিচ্ছেন উমেশ যাদব। ঋদ্ধিমান সাহা (১২) যথারীতি আরও এক বার রান করার সুযোগ হাতছাড়া করলেন। শেষ সেশনে ৩০টি ওভারে ভারত তুলল ১৯০ রান। আজ, শনিবার ভারত যদি এই পরিস্থিতি থেকেও ইনিংসের সমাপ্তি ঘোষণা করে, তা হলে তিন দিনে খেলা শেষ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।

স্কোরকার্ড
বাংলাদেশ ১৫০ (৫৮.৩)
ভারত ৪৯৩-৬ (১১৪)

ভারত (প্রথম ইনিংস)
(বৃহস্পতিবার ৮৬-১ এর পরে)
মায়াঙ্ক ক জায়েদ বো মেহদি ২৪৩ • ৩৩০
পুজারা ক পরিবর্ত সইফ বো জায়েদ ৫৪ • ৭২
কোহালি এলবিডব্লিউ বো জায়েদ ০ • ২
রাহানে ক তাইজুল বো জায়েদ ৮৬ • ১৭২
জাডেজা ব্যাটিং ৬০ • ৭৬
ঋদ্ধিমান বো এবাদত ১২ • ১১
উমেশ ব্যাটিং ২৫ • ১০
অতিরিক্ত ৭
মোট ৪৯৩-৬ (১১৪)
পতন: ২-১০৫ (পুজারা, ২৯.৫), ৩-১১৯ (কোহালি, ৩১.৫), ৪-৩০৯ (রাহানে, ৮৫.৪), ৫-৪৩২ (মায়াঙ্ক, ১০৭.৩), ৬-৪৫৪ (ঋদ্ধিমান, ১১০.৫)।
বোলিং: এবাদত হোসেন ৩১-৫-১১৫-১, আবু জায়েদ ২৫-৩-১০৮-৪, তাইজুল ইসলাম ২৮-৪-১২০-০, মেহদি হাসান মিরাজ় ২৭-০-১২৫-১, মাহমুদুল্লা ৩-০-২৪-০।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy