Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Wimbledon 2023

ওপেন যুগে উইম্বলডনে জয়ী প্রথম অবাছাই মহিলা, বাজি-হারা কোচকেও ট্যাটু করাবেন ভন্দ্রোসোভা

উইম্বলডনের মহিলাদের বিভাগে ওপেন যুগে প্রথম অবাছাই হিসাবে ট্রফি হাতে তুলেছেন। একই সঙ্গে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কোচকেও ট্যাটু করানোর। উইম্বলডন জিতে অন্য রূপে ধরা দিলেন মার্কেতা ভন্দ্রোসোভা।

wimbledon

উইম্বলডন ট্রফি হাতে মার্কেটা ভন্দ্রোসোভা। ছবি: রয়টার্স

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৩ ২১:৩১
Share: Save:

দু’হাত ভর্তি ট্যাটু। কিন্তু বাকিদের ট্যাটু থেকে তা খানিকটা আলাদা। এক ঝলকে দেখলে মনে হবে, হাতে আঁকিবুকি কাটা। টেনিস ছাড়া মার্কেতা ভন্দ্রোসোভার এটি দ্বিতীয় শখ। গায়ে নিত্যনতুন ট্যাটু করানো। যখনই সময় পান, নতুন কিছু আঁকিয়ে ফেলেন হাতে। উইম্বলডনের মহিলাদের সিঙ্গলসে ওপেন যুগে প্রথম অবাছাই হিসাবে ট্রফি হাতে তোলার পর চেক প্রজাতন্ত্রের খেলোয়াড় আরও ট্যাটু করাবেন কি না জানা নেই। তবে কোচকে ট্যাটু করাতে নিয়ে যাবেন তিনি। কোর্টে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন সে কথা।

কোচের সঙ্গে বাজি ধরেছিলেন, যদি কোনও দিন গ্র্যান্ড স্ল্যাম জেতেন তা হলে কোচকেও ট্যাটু করাতে হবে। শনিবার উইম্বলডন জিতে সেই বাজিও জিতে গিয়েছেন ভন্দ্রোসোভা। গোল থালাটা নিয়ে সেন্টার কোর্টে দাঁড়িয়ে কোচ জ্যান মার্টলের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘কী, মনে আছে তো?’’ গ্যালারির ১৫ হাজার দর্শকের হাততালিতে তখন কোচের চোখ-মুখ লজ্জায় লাল। ভন্দ্রোসোভাকে দেখে মনে হচ্ছিল, এই ‘ম্যাচ’টা জিতে তিনি বেশি খুশি। বললেন, “কোচকে স্পষ্ট বলে দিয়েছিলাম, যদি কোনও দিন গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিততে পারি, তা হলে তোমার নিস্তার নেই। আমার মতো তোমাকেও ট্যাটু করাতেই হবে।’’ সঞ্চালক এরপর জিজ্ঞেস করেন, ‘‘কবে যাবে ওঁকে নিয়ে?’’ ভন্দ্রোসোভার জবাব, ‘‘কবে আবার? কালই’’।

কাল, অর্থাৎ রবিবার ভন্দ্রোসোভার কাছে আরও একটি কারণে বিশেষ। গত বছর ১৬ জুলাই তাঁর বিয়ে হয়েছিল। প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে প্রথম বিবাহবার্ষিকী উদ্‌যাপন। স্ত্রী ফাইনালে ওঠার পর স্বামী স্টেপান সিমেক রাতারাতি উড়ে এসেছেন লন্ডনে। তিনি এত দিন ভন্দ্রোসোভার সঙ্গে ছিলেন না। আসলে স্টেপানকে সে ভাবে ভন্দ্রোসোভার সঙ্গে দেখাই যায় না। তার একটা কারণ আছে। ভন্দ্রোসোভা যখন বিশ্ব জুড়ে খেলে বেড়ান তখন স্টেপান বাড়িতে থেকে পোষা বিড়াল সামলান। স্ত্রী ফাইনালে ওঠার পরে সেই বিড়ালদের দায়িত্ব অন্য কারোর কাঁধে চাপিয়ে চলে এসেছেন। ভন্দ্রোসোভা ট্রফি হাতে তোলার সময় তাঁর চোখেও জল। ভন্দ্রোসোভা বললেন, “কাল আমার প্রথম বিবাহবার্ষিকী। তার আগে সবাইকে একসঙ্গে দেখে খুব ভাল লাগছে। আমার বোন কাঁদছে। ইচ্ছে রয়েছে সবাইকে নিয়ে একটু বিয়ার খেতে যাব। গত কয়েকটা সপ্তাহ একটানা খেলে বিধ্বস্ত।”

তবে সবার আগে কোচের ট্যাটু। কোচকে যে ট্যাটু করাবেন সেটা আগেই বলে রেখেছিলেন ভন্দ্রোসোভা। এটির প্রতি অমোঘ আকর্ষণ রয়েছে তাঁর। ভন্দ্রোসোভা মনে করেন, এটিও আসলে একটা শিল্প। তাই যাঁরা ট্যাটু করান, তাঁদের প্রতি আলাদা সমীহ রয়েছে তাঁর। নিজেই জানিয়েছেন, প্রাগে (ভন্দ্রোসোভার শহর) তিন-চার জন ট্যাটু শিল্পী রয়েছে তাঁর। যখন যাঁর কাছে ইচ্ছে করে তাঁর কাছে চলে যান। প্রতিটি ট্যাটুতে রয়েছে আলাদা বার্তাও। ডান হাতের ট্রাইসেপে লেখা, “নো রেন, নো ফ্লাওয়ার্স”। অর্থাৎ বৃষ্টি না হলে ফুলও ফুটবে না, যা পরিবেশের প্রতি বার্তা। এ রকমই আরও অনেক বার্তা লেখা ট্যাটু রয়েছে তাঁর শরীরে, যার সবটা হয়তো প্রকাশ্যে দেখা যায় না।

২৪ বছরের ভন্দ্রোসোভা ছোট থেকেই খেলার পরিবেশে বড় হয়েছেন। তাঁর দাদু জাতীয় স্তরে পেন্টাথলন চ্যাম্পিয়ন। মা পেশাদার ভলিবল খেলোয়াড় ছিলেন। ছোট থেকেই টেনিসে দাপট দেখাতে থাকেন ভন্দ্রোসোভা। জুনিয়র স্তরে বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন। সিনিয়র স্তরে এসে শুরুতেই চমক দিয়েছিলেন এই বাঁ হাতি খেলোয়াড়। ২০১৯ সালে ফরাসি ওপেনের ফাইনালে উঠেছিলেন। সেখানে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশলে বার্টির কাছে পরাজিত হয়েছিলেন।

তার পরে চোটে দীর্ঘ দিন ভুগতে হয় ভন্দ্রোসোভাকে। ২০১৯ সালে ক্রমতালিকায় সব থেকে উন্নতি (১৪) করেছিলেন তিনি। কিন্তু চোটের কারণে ক্রমাগত পিছিয়ে পড়তে থাকেন। গত বছরও চোটের কারণে ছ’মাস কোর্টের বাইরে কাটাতে হয়েছিল তাঁকে। ফলে ক্রমতালিকায় পিছিয়ে ৪৩ নম্বরে নেমে যান। সেই ভন্দ্রোসোভা এ বারের উইম্বলডনে সবাইকে অবাক করে দিয়েছেন। ভেরোনিকা কুদেরমেতোভা (১২), ডোনা ভেকিচ (২০), মারিয়া বৌজ়কোভার (৩২) মতো বাছাই খেলোয়াড়দের হারিয়েছেন। কোয়ার্টার ফাইনালে হারের মুখ থেকে ফিরে চতুর্থ বাছাই জেসিকা পেগুলাকে হারিয়েছেন। সেমিফাইনালে হারান এলিনা সোয়াইতোলিনাকে। ফাইনালে তাঁর কাছে পরাজিত দ্বিতীয় বাছাই জাবেরও।

চোট সারিয়ে কোর্টে ফিরে একের পর এক প্রত্যাবর্তন করেছেন। তাই কোর্টে প্রত্যাবর্তন কী ভাবে করতে সেটাও তাঁর রক্তে। দু’টি সেটেই এমন অবস্থায় ছিলেন যেখান থেকে অনায়াসে হেরে যেতে পারতেন। প্রথম সেটে ২-৪, দ্বিতীয় সেটে ৩-৪ পিছিয়ে ছিলেন। সেখান থেকে একটানা গেম জিতে প্রতিপক্ষকে হারানো সহজ কথা নয়। সে কারণেই ভন্দ্রোসোভা বলেছেন, “টেনিস খেলা বাকি সব কিছুর থেকে আলাদা। পাগলের মতো অনুভূতি হয়। প্রত্যাবর্তন কখনওই সহজ নয়। কোনও প্রত্যাশা রাখা যায় না। চোটের পরে এই উচ্চতাতেই নিজেকে দেখতে চাইছিলাম। ভাল লাগছে যে সেই জায়গায় পৌঁছতে পেরেছি।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy